ভারত ভূমিকম্পের জেরে ৬ বার কেঁপে উঠলো মার্চেই, এক অশনি সংকেত চরম বিপর্যয়ের !
বেস্ট কলকাতা নিউজ : রাতের অন্ধকারে কেঁপে উঠল উত্তর ভারত, তীব্রতা ৬.৬। মঙ্গলবার রাতে কেঁপে উঠল উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ভূমিকম্পের মাত্র ৬.৬। যা ভূতত্ত্ববিদদের মত প্রবল কম্পন। যার জেরে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায় দিল্লি, পঞ্জাব-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। এই সব অঞ্চলে বহু বহুতলের বাড়ি রয়েছে। সেখানে কম্পন চরম অনুভূত হয়েছে। রাতে যে সব অফিস চলে সেখানে থেকে এবং বিভিন্ন বাড়ি থেকে লোকজন আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসেন।
রিখটার স্কেলে ভূকম্পনের তীব্রতা ৪-এর উপরে ৬টি ভূমিকম্পে মার্চ মাসেই কেঁপে ওঠে ভারত। মঙ্গলবার পাকিস্তানের কিছু অংশে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কমপক্ষে নয় জন নিহত হয়েছেন বলেই জানা গিয়েছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। পাকিস্তান আবহাওয়া দফতর সূত্রের পাওয়া তথ্য অনুসারে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চল, যেখানে এর গভীরতা ছিল মাটি থেকে ১৮০কিলোমিটার।
আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, চিন, কিরগিজস্তান এবং ভারত সহ আরও বেশ কয়েকটি দেশেও কম্পন অনুভূত হয়েছে, আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন মানুষজন। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ রাস্তায় বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন সাধারণ মানুষ।
আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলে প্রাণহানির কোন খবর নেই, তবে পাকিস্তানে খাইবার-পাখতুনখোয়ায় এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। শক্তিশালী কম্পনের পরে, খাইবার-পাখতুনখোয়ায় একটি বহুতল ধসে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানেও ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে।এসব দেশে ভূমিকম্পের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতে কোথায় কম্পন অনুভূত হয়েছিল?
দিল্লী,উত্তর প্রদেশ,জম্মু ও কাশ্মীর,পাঞ্জাব,রাজস্থান,উত্তরাখণ্ড এবং মধ্যপ্রদেশ
আর এই ভূমিকম্পের পর জম্মু ও কাশ্মীরের কিছু এলাকায় মোবাইল পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়।
ভূমিকম্প সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কী বলছেন?
বিজ্ঞানীদের মতে, পশ্চিম হিমালয়, অর্থাৎ হিন্দুকুশ পর্বত থেকে শুরু করে অরুণাচল প্রদেশের শেষ পর্যন্ত বিপজ্জনক সিসমিক জোনগুলির মধ্যে একটি। যদিও আগাম দেওয়া যায় না ভূমিকম্পের পূর্বাভাস, বিজ্ঞানীরা উল্লিখিত অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ কার্যকলাপগুলি নিয়ে বছরের পর বছর রিসার্চ করছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে আগামী দিনে একটি বড় ভূমিকম্পের সাক্ষী থাকবে এই অঞ্চল, রিখটার স্কেলে যার তীব্রতা ৮.০ এর উপরে, ভবিষ্যতে যে কোনও সময় এই অঞ্চল কেঁপে উঠতে পারে এই ধরণের বড় ভূমিকম্পে । তারা বিশ্বাস করেন যে টেকটোনিক প্লেটের ক্রমাগত পরিবর্তনের কারণে ফল্টলাইন বরাবর বিপুল পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে, যা মুক্তি পেতে পারে বড় আকারের ভূমিকম্পের আকারে ।
ভারতে, বেশ কয়েকটি রাজ্য মূলত ভূমিকম্পের প্রবণতা বেশি। একটি সমীক্ষা অনুসারে, দেশে চারটি ভিন্ন ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চল রয়েছে।
জোন ১ অধীনে রয়েছে কর্ণাটক মালভূমি বরাবর অঞ্চল। জোন ২-এর অধীনে যার মধ্যে রয়েছে কেরালা, গোয়া এবং লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ, পাশাপাশি পাঞ্জাব, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা এবং তামিলনাড়ুর কিছু অংশ।
জোন ৩-এর অধীনে রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের বেশ কিছু অংশ, হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি-এনসিআর, সিকিম, উত্তর প্রদেশের উত্তর অংশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল এবং রাজস্থান।
জোন ৪-এর আওতায় রয়েছে উত্তর বিহার, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাটের কচ্ছের রণ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একাধিক অঞ্চল।
ভারতে সাম্প্রতিক ভূমিকম্প
২১ শে মার্চ, ২০২৩ – ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প, ‘জোন ২’ এর অধীনে রাজ্যগুলি সহ ভারতের বেশ কিছু অংশে কেঁপে ওঠে।
১২ মার্চ, ২০২৩ – ৪.৮ মাত্রার ভূমিকম্প। যার কেন্দ্রস্থল ছিল ওয়াংজিং, মনিপুর থেকে ৭৬ কিমি দূরত্বে ছিল এর কেন্দ্রস্থল।
৮ মার্চ, ২০২৩ – ৪.০ মাত্রার ভূমিকম্প।
৭ মার্চ, ২০২৩ – ৪.৯ মাত্রার ভূমিকম্প, ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল এর কেন্দ্রস্থল।
৩ মার্চ, ২০২৩ – ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প, ভারতের অরুণাচল প্রদেশ বরাবর ১০ কিমি গভীরে ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল।
২ মার্চ, ২০২৩ – ৪.০ মাত্রার ভূমিকম্প, নেপালের পূর্বাঞ্চলের বরাবর ১০ কিমি গভীরে ছিল এর কেন্দ্রস্থল।