মহা জাগ্রত জলপাইগুড়ির এই ভদ্রকালী মন্দির, সকলের মনস্কামনা পূর্ণ করেন মঙ্গলময়ী দেবী
বেস্ট কলকাতা নিউজ : পরম পুণ্যভূমি আমাদের এই ভারতবর্ষ । এদেশে এমন অনেক মন্দির আছে, যার স্থাপত্যশৈলী ও সৌন্দর্য তারিফ কুড়িয়েছে বিশ্ববাসীর কাছ । আবার এদেশে এমনও অনেক মন্দির রয়েছে, যা কয়েক হাজার বছর ধরে মোড়া রহস্যের চাদরে। আবার এমনও মন্দির আছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহস ও ভরসা জুগিয়ে গিয়েছে যুগের পর যুগ ধরে। উত্তরবঙ্গের প্রাচীন ও রাজার শহর বলে পরিচিত জলপাইগুড়ির পাণ্ডাপাড়ায় রয়েছে এমনই এক মন্দির। নাম, দেবী ভদ্রকালীর মন্দির। এখানে, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। আর, তিনি বিরাজিত সাপের ওপর।
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে পাণ্ডাপাড়ায় পৌঁছে যাওয়া যায় বাসে ১০ মিনিট গেলেই । স্টেশন থেকে এই স্থানের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটারের মত। দেবী ভদ্রকালীর মন্দিরটি রয়েছে বাস রাস্তার ঠিক ওপরেই। কোচবিহারের মহারাজার রূপনারায়ণ এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৬৯৩ খ্রিস্টাব্দে। অবশ্য তা নিয়েও দ্বিমত রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ।
অনেকের আবার দাবি, মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বৈকুণ্ঠপুরের মহারাজা দর্পদেব রায়কত। পুরী থেকে পান্ডা নিয়ে এসে এই পুজো শুরু করেছিলেন। এই বিগ্রহের মূল বিশেষত্বহল , এখানে দেবীর পায়ের তলায় মহাদেব নেই। রয়েছে দুটি গোখরো সাপ। যা সৃষ্টি ও প্রলয়ের প্রতীক। দেবী এখানে জিহ্বা বার করে নেই। বরং, প্রসন্নময়ীর মত তাঁর মুখমণ্ডল।
বিগ্রহের উচ্চতা প্রায় চার ফুটের মত। দেবীকে এখানে পুজো করা হয় দক্ষিণকালী রূপে । প্রতি কার্তিক অমাবস্যায় বেশ ঘটা করে দেবীর পুজো করা হয়। প্রতিপুজোয় এখানে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে। সেই সময় মন্দির প্রাঙ্গণে মেলা বসে। ভক্তদের দাবি, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। তাঁর কাছে যা প্রার্থনা করা হয়, সেটাই পূরণ হয়।
প্রায় ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে দেবীমূর্তি পূজিত হচ্ছেন। দেবীর গড়নেও রয়েছে বৈচিত্র্য। যার সঙ্গে অগ্নিপুরাণে বর্ণিত দেবীর রূপের সাদৃশ্য আছে। দক্ষিণাকালীর তথাকথিত মূর্তির সঙ্গে এই রূপের কোনও মিল নেই। এই মন্দির ঘিরে রয়েছে পাণ্ডাদের বসতি। বংশ পরম্পরায় তাঁরা এই মন্দিরের পূজারি। তাই এলাকার নাম হয়েছে পাণ্ডাপাড়া।বর্তমানে এই মন্দিরের দায়িত্বে রয়েছেন রাজপরিবারের এক সদস্য। রাজা দর্পদেব রায়কত ছিলেন তাঁর প্রপিতামহ। নিত্যপুজোর পাশাপাশি, দীপান্বিতা কালীপুজো এখানে ধূমধামের সঙ্গে পালিত হয়। দেবী এখানে সৃষ্টি ও প্রলয়, উভয়কেই গিলে খাচ্ছেন। এমনটাই বোঝানো হয়েছে মূর্তির মাধ্যমে।