আমার পরবর্তী বক্তব্য নিয়ে চরম ভীত প্রধানমন্ত্রী, তাই বহিষ্কৃত: চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রাহুল গান্ধীর
বেস্ট কলকাতা নিউজ : ২০১৯ সালে নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) মন্তব্য বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। মোদী পদবি মন্তব্যে সুরাটের আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এবং দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। তবে তাঁকে ৩০ দিনের জন্য জামিনও দিয়েছে এই আদালত। সুরাট আদালতের এই সাজা ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিজের সাংসদ পদ খুইয়েছেন রাহুল। গতকাল লোকসভার সচিবালয়ের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেরলের ওয়ানাডের সাংসদ হিসেবে সংসদের সদস্যপদ খারিজ করা হয়। এর মধ্যেই গতকাল বৈঠকে বসেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বরা। এই পরিস্থিতির কীভাবে রাজনৈতিক মোকাবিলা করবে তার রূপরেখা করতেই এই বৈঠকে। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দেশজুড়ে সোমবার থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করবে কংগ্রেস। এই মর্মে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা বলা হতে পারে। এই আবহেই প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করতে চলেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আজ এই সাংবাদিক বৈঠক থেকে কী বলতে চলেছেন গোটা রাজনৈতিক মহলের নজর সেইদিকে। দেখে নিন এক নজরে…
এই ইস্যুতে সব বিরোধী দলগুলি কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই প্রশ্নে রাহুল বলেন, “সব বিরোধী দলগুলিকে ধন্যবাদ যে তাঁরা এক্ষেত্রে আমাদের সমর্থন করেছেন। আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে কাজ করব।”
মোদীর সঙ্গে আদানির গভীর সম্পর্ক। আদানির সেল কোম্পানিতে ২০ হাজার কোটি এল কোথা থেকে। কার টাকা এটা? এর মধ্য়ে অনেকগুলি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সংস্থা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই নিয়ে কোনও প্রশ্ন করছে না কেন? আমাদের ড্রোন ডেভেলপমেন্ট ও মিসাইল ডেভেলপমেন্টে, অর্ডিন্য়ান্সে কার টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে?
বোঝার চেষ্টা করুন আমাকে কেন বহিষ্কার করা হয়েছে। সংসদে আমার পরবর্তী বক্তব্য় নিয়ে ভীত প্রধানমন্ত্রী। যেটা আদানিকে নিয়ে হত। আমি সেটা তাঁর চোখে দেখতে পেয়েছি। সেই কারণেই প্রথম মামলা। তারপর বহিষ্কার। এটা নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। এটা আইনি বিষয়।
আমি ভারতের আইনি ব্যবস্থাকে সম্মান জানাই। আইনি বিষয় নিয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলনে কোনও কথা বলতে চাই না। কোনও আইনি প্রশ্ন থাকলে তা আমাদের আইনি টিমকে করে নেবেন।
বিজেপি নেতাদের আক্রমণের প্রশ্নে তিনি বলেন, “তাঁদের ওটাই কাজ। কারণ তাঁরা নরেন্দ্র মোদীকে ভয় পান। কারণ আপনারা সবাই জানেন। নরেন্দ্র মোদী তাঁদের যেদিকে নজর দিতে বলবেন তাঁরা সেদিকেই নজর দেবে।”
ওয়ানাডের বাসিন্দাদের আমি বলেছি তাঁদের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। ওয়ানাডের বাসিন্দাদের জন্য আমি চিঠি লিখব ঠিক করেছি। তাঁদের জানাব আমি তাঁদের জন্য আমার মনে কোন জায়গা রয়েছে।
এই দেশ আমাকে ভালবাসা, সম্মান সবকিছু দিয়েছে, তাই আমি এইসব করি।
রণনীতি কী সেই প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “রাষ্ট্র হোক আর যাই হোক আমি সত্য়ি দেখি। এছাড়া আর কিছুতে আগ্রহ নেই আমার। আমি সত্যি কথা বলি। রাজনীতিতে এটা ফ্যাশনেবল কথা নয়। কিন্তু এটা আমার রক্তে রয়েছে। এর থেকে অন্য রাস্তা আমি বের করতে পারব না। এটা আমার জীবনের তপস্যা। আমাকে মারলে, ধরলে, সদস্যপদ খারিজ করলে, জেলে রাখলেও আমার কিছু যায় আসে না। আমি আমার তপস্যা করব।”
এটা ওবিসি মামলা নয়। নরেন্দ্র মোদী ও আদানির সম্পর্কের মামলা। ২০ হাজার কোটি টাকা আদানি কোথা থেকে পেয়েছেন জানা নেই। সেই নিয়ে আমি প্রশ্ন করছি। আর তার জবাব চাই। বিজেপি দিকভ্রষ্ট করার চেষ্টা করছে। কখনও ওবিসি, বিদেশ আবার কখনও সদস্যপদ খারিজের কথা বলবে। তবে প্রশ্ন একটাই থাকবে। ২০ হাজার কোটি টাকা কার ছিল? সেটা আদানির টাকা হতে পারে না।
বিজেপি আপনার বিরুদ্ধে ওবিসি সম্প্রদায়ের অপমানের অভিযোগে এনেছে। সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, “গত কয়েক মাসে ভারত জোড়ো যাত্রার সব বক্তৃতায় আমি বলেছি সব সমাজ এক। সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। হিংসা ও ঘৃণা থাকা উচিত নয়। এর থেকে আমার অবস্থান তো স্পষ্ট।”
অতীতে বাকি প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া থেকে রাজনৈতিক দলগুলি যে সমর্থন পেত বর্তমানে তা পাওয়া যায় না। জনতার কাছে পৌছে যাওয়ার জন্য বিরোধীদের কাছে একটাই রাস্তা রয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো যাত্রায় সাড়ে ৪ মাস জনতার মধ্য়ে ছিল। এটা আমার কাজ। আমি করতে থাকব।
আমি ভারতের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। এবং আমি তা করতেই থাকব। কিছুতেই ভয় পাই না। এটাই সত্য়ি।
তাঁরা যদি ভেবে থাকেন আমার সাংসদ পদ খারিজ করে, ধমকে, জেলে পাঠিয়ে আমার মুখ বন্ধ করতে পারবেন, তা হবে না। আমার সেরকম কোনও ইতিহাস নেই।
এই গোটা ঘটনার পর কী হল তা আপনারা সবাই দেখেছেন। তবে আমি প্রশ্ন করা বন্ধ করব না, মোদী-আদানির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করবই। ২০ হাজার কোটি টাকা কার? আমি জিজ্ঞাসা করতেই থাকব। আমি ওঁদের ভয় পাই না।
আমার সম্পর্কে মন্ত্রীরা পার্লামেন্টে মিথ্যে কথা বলেছেন। আমি নাকি বিদেশি শক্তির থেকে সাহায্য় নিয়েছি। আমি এ ধরনের কোনও কাজ করিনি। স্পিকারকে বলেছি, সংসদে কোনও সদস্য অন্য সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে সেই অভিযুক্ত সদস্যের জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু একাধিক চিঠি লেখার পরও কোনও জবাব পাইনি।
সংসদে দাঁড়িয়ে মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়েই এই প্রশ্ন করেছিলাম। কিন্তু সংসদের কার্যবিবরণী থেকে আমার সেই বক্তব্য বাদ দেওয়া হয়েছিল। আমি স্পিকারকে বিস্তারিত চিঠি লিখেছি।
সংসদে সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট দেখিয়ে বিস্তারিত প্রমাণ দেখিয়ে, আদানি ও মোদীর সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত বলেছিলাম। এই সম্পর্ক নতুন নয়। মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময় থেকেই তাঁদের মধ্য়ে সম্বন্ধ। জনগণের সামনে তার প্রমাণও রয়েছে। সংসদে আমি ছবি দেখিয়েছিলাম, বিমানে নিজের বন্ধুর সঙ্গে খুব আরাম করে বসেছিলেন মোদী।
আমি একটাই প্রশ্ন করেছিলাম। আদানি জির শেল কোম্পানি রয়েছে। সেখানে কেউ ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। আদানি জির টাকা নেই। আদানি জির পরিকাঠামোর ব্যবসা। পয়সা অন্য কারও। প্রশ্ন একটাই, ২০ হাজার কোটি টাকা কার? এই প্রশ্নটাই আমি করেছিলাম।
ভারতের গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ নেমে আসছে। প্রতিদিন এর নতুন নতুন উদাহরণ আমরা দেখতে পাচ্ছি।