এবার একাধিক পুরুষের নির্বীজকরণ -এর অভিযোগ উঠলো করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার নাম করে!
বেস্ট কলকাতা নিউজ : এবার নির্বীজকরণের অভিযোগ উঠলো কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার নাম করে। সরকারি পরিষেবা দেওয়ার নাম করে এর আগে অভিযোগ সামনে এসেছে একাধিক প্রতারণার ঘটনা । কিন্তু এই অভিযোগে বঙ্গ স্বাস্থ্যের যে ছবি সামনে আসছে, তা রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। এত পরিযায়ী শ্রমিককে না জানিয়ে নির্বীজকরণের অভিযোগ উঠছে শান্তিপুর থানার চাঁদরা এলাকার রায়পাড়ায়। জানা যাচ্ছে, বছর পঞ্চান্নর বাসিন্দা মাধব দেবনাথ মুম্বইতে কাজ করেন। কালীপুজোর সময়ে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। তারপর আশাকর্মীরা তাঁকে কোভিডের টিকা দেওয়ার নাম করে নিয়ে যান। তাঁর অভিযোগ, আশাকর্মীদের খপ্পরে পড়ে NSB অপারেশন হয়ে যায় তাঁর। তাঁর বক্তব্য, প্রথমে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তারপর তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন। তারপরই অস্ত্রোপচার হয় বলে তাঁর অভিযোগ।
কী বলছেন মাধব দেবনাথ? তাঁর কথায়, “কোভিডের টিকা দেওয়ার নাম করে নিয়ে গেল। ওখানে আমাকে একটা ইঞ্জেকশনও দিল। মিনিট তিনেক পরে চোখে আর কিছু দেখছি না। তারপর যখন জ্ঞান ফেরে দেখি রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছি। কেউ আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।”
এদিকে আরও একটি বিষয় চোখে পড়ার মতো, মাধবের স্ত্রীর নির্বীজকরণ আগেই করানো হয়েছিল। তাহলে আর মাধবের নির্বীজকরণের কী প্রয়োজন ছিল? মাধবের স্ত্রী নিজেই বললেন, “একটা ভ্যাক্সিন নাকি বাকি রয়েছে, সেটা নিতে হবে। এটা বলেই নিয়ে গিয়েছিল। আমারই তো অপারেশন হয়ে গিয়েছিল। তাহলে ওর করানোর কী প্রয়োজন?”
ইতিমধ্যেই মাধবের পরিবার শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে একা মাধব নয়। এ তো গেল কেস নম্বর এক! এই একই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন খোকন দেবনাথ। বয়স ৬২ বছর। তিনিও শান্তিপুর থানায় মঙ্গলবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। নিঃসন্তান। তিনি আবার মানসিকভাবে ভারসাম্যহীনও। লোকের বাড়িতে কিংবা কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে টুকটাক কাজ করে দু’মুঠো অন্নের সংস্থান করেন। তাঁর চল্লিশ বছরের বিবাহিত জীবনে কোনও সন্তান হয়নি। এই ব্যক্তিকেও নির্বীজকরণ করা হয়েছে অভিযোগ পরিবারের। তাঁর দিদি শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
কেস স্টাডি আরও রয়েছে। তাঁদেরও একই ধরনের অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে মারাত্মক শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়। এর কারণ হিসাবে উঠে আসছে একাধিক তথ্য। গ্রামবাসীদেরই একাংশের অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে লক্ষ্যপূরণের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ, তাহলে কি এই লক্ষ্যপূরণের জন্যই কোভিডের নাম করে এসব হচ্ছে। তা না হলে এক জন ৬২ বছরের বৃদ্ধের নির্বীজকরণের কতটা প্রয়োজন রয়েছে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই আশাকর্মী কী বলছেন? তাঁর বক্তব্য, “ওরা সব মিথ্যা কথা বলছে। আমার স্যর, ম্যাডামরাই সব বলবেন। ওঁদের ওখানে যান, ওঁরাই পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেবেন।”
এবিষয়ে আবার নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “আমাদের এখানে তো ভ্যাসেকটমির কেস খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তার সঙ্গে আমরা টিউবেকটমি করছি। যাতে আমাদের পারফরম্যান্সটা ভাল থাকে। গ্রামীণ হাসপাতাল, স্টেট জেনারেল হাসপাতালে একটি ন্যূনতম লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।” তাহলে প্রশ্ন, এই লক্ষ্যপূরণ করতে গিয়েই কি এভাবে ধরে ধরে ‘নির্বীজকরণের প্রক্রিয়া’ শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্যভবনের নিয়ম অনুসারে, নির্বীজকরণের বিষয়টি একেবারেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিজের সিদ্ধান্তের ওপরেই নির্ভর করছে। দ্বিতীয় সন্তান হয়ে যাওয়ার পর সেই ব্যক্তির কাউন্সিলিং করানো হবে। তারপর যদি তাঁর কোনও মত থাকে, তাও শোনা হবে। শান্তিপুরের ঘটনার ক্ষেত্রে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। সর্বোপরি CMOH এর বক্তব্য নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। তাঁর বক্তব্য, তিনি একটা টার্গেট সেট করেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যভবন সূত্রের দাবি, এরকম কোনও টার্গেট দেওয়াই হয়নি।