কি লুকিয়ে আছে সমুদ্রের নীচে? অবশেষে ইসরো ফাঁস করল রাম সেতুর রহস্য
বেস্ট কলকাতা নিউজ :রাম সেতুর রহস্য ফাঁস করল ইসরো (ISRO)। নাসার (NASA) আইসিইস্যাট-২ (ICESat-2) স্যাটেলাইট ব্যবহার করে রাম সেতুর সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত থাকা অংশের মানচিত্র তৈরি করল ইসরোর যোধপুর এবং হায়দরাবাদ ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টারের গবেষকরা। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ওই স্যাটেলাইটের তথ্য ব্যবহার করে রাম সেতুর নিমজ্জিত অংশের পূর্ণ দৈর্ঘ্যের একটি ১০-মিটার রেজোলিউশনের মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। রামায়নেও এই রামসেতুর কথা উল্লেখ রয়েছে। রামায়ণের কাহিনী অনুসারে, শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার জন্য বানরসেনার সাহায্যে সমুদ্রের উপর এই সেতু তৈরি করেছিলেন রাম। তবে, অনেকেই দাবি করেন, রামসেতু আসলে একটি প্রাকৃতিক গঠন। ইসরোর মানচিত্র কি সেই রহস্য ফাঁস করতে পারল?
গিরিবাবু দান্ডাবাথুলার নেতৃত্বে গবেষণা দলটি দেখেছে, রামসেতুর দুই পাশের তির্যক ঢালে অসামঞ্জস্য রয়েছে। এই ঝালের অসামঞ্জস্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, পক প্রণালির তুলনায় মান্নার উপসাগরের জলের বস্তুগত শক্তি বেশি। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, রামসেতুর প্রায় ৯৯.৯৮ শতাংশই অগভীর এবং অতি-অগভীর জলে নিমজ্জিত থাকে। মাত্র ০.০২ শতাংশই সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে থাকে এবং উপর থেকে দেখা যায়। তাঁরা আরও দেখেছেন, রাম সেতুর কাঠামো বরাবর ১১টি সংকীর্ণ জলের চ্যানেল রয়েছে। এই চ্যানেলগুলি থেকেই মান্নার উপসাগর এবং পক প্রণালির মধ্যে জল প্রবাহিত হয়। এই চ্যানেলগুলি থাকার জন্যই সমুদ্রের ঢেউয়ের থেকে রক্ষা পেয়েছে রামসেতুর কাঠামো।
কিন্তু, সবথেকে বড় প্রশ্ন, অর্থাৎ রামসেতু প্রাকৃতিকভাবে তৈরি না কৃত্রিমভাবে তৈরি? ইসরোর বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রের নীচে ডুবে থাকা সেতুটি প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি। রামসেতু আসলে, ভারতের ধনুশকোডি থেকে শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নার দ্বীপ পর্যন্ত সমুদ্রের নীচে স্থলভাগের ‘ধারাবাহিকতা’ বলে নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সায়েন্টিফিক রিপোর্টে ইসরোর এই বিজ্ঞানীরা বলেছেন, “ধনুশকোডি এবং তালাইমান্নার দ্বীপের একটি নিমজ্জিত স্থলভাগের ধারাবাহিকতা হল রাম সেতু, আমাদের গবেষণার ফলাফলগুলি এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। রামসেতুর দুই পাশে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা অত্যন্ত ঢেউ খেলানো। অতি-অগভীর জলের মধ্যে আকস্মিক গভীর খাদ রয়েছে।”
এর আগে, স্যাটেলাইট থেকে রামসেতুর সমুদ্রের উপরে উন্মুক্ত অংশগুলির মানচিত্র তৈরি করা হয়েছিল। এই এলাকার সমুদ্র অত্যন্ত অগভীর। কোথাও এক মিটার, কোথাও দশ মিটার গভীরতা। ফলে এই এলাকায় জাহাজে করে মানচিত্র তৈরি করা কঠিন। নাসার স্যাটেলাইট থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠে লেজার রশ্মি বাউন্স করিয়ে এই নয়া মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। সমুদ্রের জলে প্রায় ৪০ মিটার গভীর পর্যন্ত সমুদ্রতলের হদিশ দিতে পারে নাসার উপগ্রহের এই লেজার।
প্রসঙ্গত, খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে ভারতে এসে পারস্যের বাসিন্দারা রামসেতুকে ‘সেতু বান্ধাই’ বা সমুদ্রের উপর তৈরি সেতু বলে উল্লেখ করেছিল। তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের মন্দিরে যে ইতিহাস নথিবদ্ধ আছে, তাতে বলা হয়েছে, ১৪৮০ সাল পর্যন্ত রামসেতু নাকি সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে ছিল। এক শক্তিশালী সাইক্লোনের পর সেতুটি সমুদ্রের জলের নীচে ডুবে গিয়েছিল।