ভারতের একমাত্র মন্দির, আপনিও পাথরের মূর্তি হয়ে যেতে পারেন যেখানে প্রবেশ করলে!
বেস্ট কলকাতা নিউজ : ভারতে এমন বহু মন্দির আছে, যা রহস্যের চাদরে ঢাকা আজও । তবে সময় বদলেছে। প্রসার ঘটেছে যুক্তি এবং বিজ্ঞানের। কিন্তু কুসংস্কার যায়নি তার পরও। বন্ধ হয়নি প্রচলিত বিশ্বাস। আজ ইন্টারনেটের যুগ। বিজ্ঞান সচেতন ও যুক্তিবাদীরা চাইলেই ভেদ করতে পারেন কুসংস্কার বা রহস্যের অন্ধকার । এমনকি ক্যামেরাবন্দি করতে পারেন তাঁদের সেই অভিজ্ঞতাকেও। তা ছড়িয়ে দিতে পারেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
আর এতেই সচেতনতা ক্রমশ বাড়বে। কমবে কুসংস্কার। ধ্বংস হবে এমনকি প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাসও। কিন্তু, সত্যি কথা হল, কারণটা যাই হোক না-কেন, এমন চেষ্টার খামতি আছে বিজ্ঞান সচেতন মানুষের মধ্যেও । আর, তার ফলেই ক্রমশ দানা বাঁধছে অন্ধবিশ্বাস। তার প্রতি অনেকেরই আস্থা জন্মাচ্ছে। এছাড়াও প্রশ্ন উঠছে, যদি অন্ধবিশ্বাসই হবে, তবে যুক্তিবাদীরা কেন তা দূর করতে পারছেন না ।
রাজস্থানের কিরাডু মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে এমনই এক বিশ্বাস। যে বিশ্বাস বলে, এই মন্দিরে প্রবেশ করলে দর্শনার্থী পাথরের মূর্তিতে পরিণত হয়ে যেতে পারেন। রাজস্থানের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লা ছবির দৌলতে। কিরাডু মন্দির রয়েছে এই মরুরাজ্যের বারমের জেলাতেই। বারমের শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার যার দূরত্ব । এখানকার সিহনি গ্রামে রয়েছে ওই মন্দির। মরুভূমি ঘেঁষা এলাকায় অবস্থান করছে গ্রাম ও মন্দির। দিনের বেলাতেও যেখানে এলে পর্যটকদের রীতিমতো গা ছমছম করে।
শিব এই মন্দিরের অধিষ্ঠাতা দেবতা। ষষ্ঠ শতকে এখানে রাজত্ব করতেন কিরাদবংশীয় রাজারা। সেই অনুযায়ী এই জায়গার নাম ছিল কিরাদকোট। বর্তমানে, কেবলমাত্র সেই পরিচয় বহন করছে মন্দিরের নামটুকু । প্রবেশের সদর দরজা বহুকাল অকেজো জং ধরে। ছোট দরজা রয়েছে মন্দিরে প্রবেশের জন্য । সেখান দিয়েই মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। এই মন্দির অভিশপ্ত এব রহস্যময় স্থানীয় বাসিন্দাদের এমনটাই বিশ্বাস। খাজুরাহো মন্দিরের সঙ্গে মিল রয়েছে এই মন্দিরের। সেই জন্য রাজস্থানের খাজুরাহোও বলা হয় এই মন্দিরকে।
বাসিন্দাদের আরও দাবি, এই মন্দিরে এমন ভাস্কর্য রয়েছে, যা নিখুঁতভাবে বলে দিতে পারে বৃষ্টির পূর্বাভাস। এখানকার পরিবেশ যতই শান্ত হোক না-কেন, সন্ধের পর বাসিন্দারা থাকেন না এই মন্দিরের ত্রিসীমানায়। ত্রিসীমানা দূর, বাসিন্দারা সন্ধের পর কিরাডু মন্দিরের এক কিলোমিটারের মধ্যেও ঘেঁষেন না। কারণ, তাঁদের বিশ্বাস যে সন্ধের পর এই মন্দির প্রবেশ করলে হয় মৃত্যু নয় তো পাথরের মূর্তিতে পরিণত হওয়া একরকম নিশ্চিত। গ্রামবাসীদের এও দাবি, অভিশপ্ত ছায়ামূর্তিরা মন্দির চত্বরে ঘুরে বেড়ায় রাত বাড়লেই। পাথর থেকে বেরিয়ে আসে এমনকি মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ।
এক কাহিনি রয়েছে বাসিন্দাদের মনে এই বিশ্বাস তৈরির পিছনে । তা হল বারোশো শতকে এখানে রাজত্ব করতেন সোমেশ্বর নামে পারমার বংশের এক রাজা । তিনি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন তুর্কিদের আক্রমণে । শিবভক্ত রাজা এক সন্ন্যাসীর শরণাপন্ন হন সেই ক্ষতি থেকে বাঁচতে। রাজার অনুরোধে সাড়া দিয়ে ওই সন্ন্যাসী শিষ্যদের নিয়ে ডেরা বাঁধেন এই মন্দিরে। তাঁর আশীর্বাদে বারমের জেলা ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। কিন্তু, গ্রামবাসীরা আর মনে রাখেননি সেই সন্ন্যাসী ও তাঁর শিষ্যদের কথা। একদিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই সন্ন্যাসীর এক শিষ্য। কিন্তু, তারপরও গ্রামবাসীরা তাঁকে সাহায্য করেননি ।এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রামবাসীদের অভিশাপ দেন ওই সন্ন্যাসী। তাঁর অভিশাপে সেই সন্ধ্যাতেই পাথরে পরিণত হন গ্রামবাসীরা । বারমের আজও মনে রেখেছে বারোশো শতকের সেই রোমহর্ষক ঘটনাকে। আজও সন্ধ্যের পর তাই গোটা এলাকা জনমানবশূন্য হয়ে যায়।