আর মন গলে না ভোট-আশ্বাসে ! বাংলার এপ্রান্তে এযেন ‘মুক্তিযুদ্ধ’ জারি হাজারো উপেক্ষা সহ্য করে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : মনোজ লেপচা। দেশের স্বাধীনতার বয়স থেকে ২৬ বছর কমিয়ে তাঁর বয়স এখন ৫১ বছর। বসতি বক্সার সদর বাজারের ডাড়াগাঁও। পেশায় একজন গাইড । বাবা লাক্ষুচ্ছ্রিং লেপচাকে হারিয়েছেন মাত্র ২০ বছর বয়সেই। সংসারের বোঝা টানছেন তখন থেকেই। বছর তিনেক বাদে মারা গিয়েছেন মা মায়া লেপচাও। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে দিতে হয়েছে সেই পঞ্চম শ্রেণিতেই। কিন্তু তাঁর দু’চোখ ভরা স্বপ্ন ছেলে ও মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তাঁরা যেন লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। খাঁড়া পাহাড়ে এভাবে দিনভর তাঁদের যেন ওঠা-নামা করতে না হয়। মনোজ লেপচার মতোই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন বক্সার ১৩টি গ্রামের আরও অনেকেই। ভোট তাঁদের কাছে তেমন কোনও অর্থ বহন করে না।

মনোজ লেপচা পাহাড়ে উঠতে উঠতে বলেন, “বহু কষ্ট করে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করতে বাইরে পাঠিয়েছি। এখানে তো অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে। তবে শিক্ষক তেমন নেই। অষ্টম শ্রেণির পর অন্যত্র যেতেই হবে লেখাপড়া করতে হলে। ছেলে সুজল লেপচা জলপাইগুড়িতে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ে প্রশাংসা দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাড়িতে রয়েছে ছোট ছেলে আশিষ লেপচাও। গাইডের কাজ করে কোনওরকমে সংসার চলে। এখানে না আছে হাসপাতাল, অসুস্থ হলে দুর্গতির শেষ থাকে না। স্ট্রেচারে করে বহু কষ্টে নামাতে হয়। কয়েক কিলোমিটার হাঁটার পর জিরো পয়েন্ট থেকে গাড়ি চলাচল করে।” ভোট এলেই প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলো নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়। তারপর আর তাঁদের দেখা মেলে না। একনাগাড়ে বলে চললেন মনোজ লেপচা।

আত্মা, ফুলবাড়ি, টাঁসি গাঁও, বক্সা , সদর বাজার, ডাড়াগাঁওসহ ১৩ গ্রাম নিয়ে এই বক্সা অঞ্চল। মনোজ জানান, এখানে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। ২টো বুথ। বক্সা ফোর্টের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথ সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ২,৬০০ ফুট উঁচুতে। ভুটান সীমান্তের এই গ্রামগুলির বাসিন্দারা জীবনযুদ্ধ জারি রেখেছেন। একদিকে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, বন্য প্রাণীর হানা তো রয়েছেই। অন্যদিকে, স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও উন্নয়নের ছোঁয়া না পৌঁছালেও হারতে রাজি নয় মনোজ লেপচারা। প্রতিদিন তাঁরা বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। ঘুম থেকে উঠেই শুরু করেন জীবন জয়ের সংগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *