চরম অসাংবিধানিক নির্বাচনী বন্ড , অবশেষে এক যুগান্তকারী রায় দেশের শীর্ষ আদালতের
বেস্ট কলকাতা নিউজ : চরম অসাংবিধানিক নির্বাচনী বন্ড, অবশেষে এক যুগান্তকারী রায়ে এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের তরফে এ দিন পাঁচ বিচারপতির সর্বসম্মতিতে এও বলা হয়, “রাজনৈতিক দলের ইলেকটোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে আর্থিক সাহায্য নাগরিকের তথ্যের অধিকার লঙ্ঘন করে। এই আইন সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক”। লোকসভা নির্বাচনের আগেই সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
এ দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, “নির্বাচনী বন্ড অসাংবিধানিক ও বিধিবহির্ভূত। ইলেকটোরাল বন্ডের ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল ও আর্থিক অনুদানকারীর মধ্যে সুবিধার সম্পর্ক বা কুইড প্রো কিউ ব্যবস্থা তৈরি হতে পারে। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্যের অধিকার আবশ্যক। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রয়োজনীয় তথ্য জানানো জরুরি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রাজনৈতিক দলগুলিই।”
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চের তরফে রায়ে স্পষ্ট জানানো হয়, এই প্রকল্পের লক্ষ্য কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই ও আর্থিক অনুদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হিসাবে তুলে ধরা হলেও, তা কার্যকর নয়। নির্বাচনী বন্ডই কালো টাকা রোখার একমাত্র উপায় নয়।
এ দিন শীর্ষ আদালতের তরফে মূলত স্টেট ব্য়াঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে ইলেকটোরাল বন্ড বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ২০১৯ সাল থেকে এতদিন অবধি যে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করেছে রাজনৈতিক দলগুলি, তার বিস্তারিত তথ্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনকেও জানাতে বলা হয়েছে। আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এই তথ্য। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এদিন এও বলেন, “পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতিতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার । আমার ও বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার মত আলাদা হলেও, আমরা সকলেই একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।”
নির্বাচনী বিধি আসলে কী? রাজনৈতিক দলগুলিকে অর্থ সাহায্যের জন্যই ২০১৮ সালে নির্বাচনী বন্ড বা ইলেকটোরাল বন্ড আনা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। এই নিয়মে নিয়মে কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা যদি কোনও রাজনৈতিক দলকে আর্থিক সাহায্য করতো চায়, তবে তারা বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দিতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলি সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু কে, কত টাকা বন্ডের মাধ্যমে অনুদান দিচ্ছেন, সেই তথ্য প্রকাশ করা হবে না। ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ ও ১ কোটি টাকা অবধি বন্ড পাওয়া যায় স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ায়।
এদিকে সরকারের তরফে নির্বাচনী বন্ডের স্বপক্ষে এও যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে নির্বাচনে অবাধে কালো টাকা ঢালা রুখতেই এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। যদিও বিরোধীরা নির্বাচনে অস্বচ্ছতারই অভিযোগ আনেন এই নিয়মে। আর্থিক সাহায্যের বিনিময়ে নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীক গোষ্ঠীরা সরকারের থেকে বিশাল লাভবান হবে, তুলে ধরা হয় এই যুক্তিও। এ দিন নির্বাচনী বন্ড বৈধ কি না, তারই শুনানি ছিল মূলত শীর্ষ আদালতে।