চিতার আগুন কখনও নেভে না বারানসীর এই ঘাটে, এখানেই পড়েছিল দেবীর চোখের একটি মণি, গঙ্গাতীরেই রয়েছে আরেক শক্তিপীঠ মণিকর্ণিকা ঘাট
বেস্ট কলকাতা নিউজ : চিতার আগুন কখনও নেভে না এই ঘাটে।বারানসীর এখানেই পড়েছিল দেবীর চোখের একটি মণি।গঙ্গাতীরে আরেক শক্তিপীঠ মণিকর্ণিকা ঘাট । প্রতি চৈত্র নবরাত্রির সপ্তমী তিথিতে কী হয় জানেন?মহাদেবের কোলে মৃত্যুর আশায় দূর দূরান্ত থেকে আসে মানুষ।অবাক লাগছে?মায়ার জালে জড়ানো মণিকর্ণিকা ঘাটের অজানা ইতিহাস জানুন।
কাশী বিশ্বের একমাত্র শহর, যেখানে মৃত্যুকে শুভ হিসেবে দেখা হয়।বারাণসীর মণিকর্ণিকা ঘাটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুরাণ।এই ঘাটের সঙ্গে জড়িয়ে দক্ষযজ্ঞ ও সতীর দেহত্যাগের গল্প । কাশীর সবচেয়ে প্রাচীন শ্মশান ।এই মনিকর্নিকা ঘাট হাজার হাজার বছর ধরে কখনও শান্ত হয়নি। এখানে চিতার আগুন কখনও নেভে না।
কথাতেই আছে বার্ধক্যের বারাণসী । হিন্দুশাস্ত্র ও পুরাণ অনুযায়ী, কাশীতে মৃত্যু হলে আর পুনর্জন্ম হয় না। সৎকার,ডোমদের লাঠি হাতে চিতায় আঘাত।মৃতের পরিজনদের হাহাকার ।বারাণসীতে নৌকায় গঙ্গা ভ্রমণেই দেখতে পাবেন সেই হৃদয় বিদারক ছবি।একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই চোখে পড়বে শক্তির আরাধনায় নিমগ্ন অঘোরী সাধুদের খাবার নিয়ে কোনওরকম বাছবিচার না করাটাই অঘোরীদের নিয়ম।শোনা যায় মৃতদেহের হাড় দিয়ে তৈরি গয়না গায়ে থাকে এই সাধুদের ।মনিকর্ণিকা বরাবরই যেন এক রহস্যের জালে জড়িয়ে ।
শিবকে শান্ত করতে বিষ্ণু নিজের সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেন। সেই খণ্ডিত দেহ যেখানে পড়ে সেখানেই গড়ে ওঠে শক্তিপীঠ। কথিত আছে, গঙ্গাতীরে বারাণসীতে এসে পড়েছিল দেবীর কর্ণকুণ্ডল।কর্ণ কুণ্ডল বা কানের দুলকে মণিকর্ণ বলা হয়। এই মণিকর্ণ শব্দ থেকেই ঘাটের নাম মণিকর্ণিকা হিন্দুপুরাণ মতে এই ঘাটে দেবী সতীর কর্ণকুন্ডল বা কানের দুল পড়েছিল। আবার কেউ বলেন বারানসীর এই ঘাটে পড়েছিল দেবীর চোখের একটি মণি।কনীনিকা পড়েছে বলেই নাম মণিকর্ণিকা ।দেবীর দিব্যচক্ষু সমগ্র বিশ্বকে( world) দেখতে পায় তাই দেবীর নাম এখানে বিশালাক্ষী। মণিকর্ণিকার শক্তিপীঠটি বিশালাক্ষীর মন্দির নামেও পরিচিত। এই পীঠের ভৈরবের নাম কালভৈরব।
মনিকর্ণিকার কথা উঠলে বছরের একটি বিশেষ দিনের কথা বলতেই হয়। প্রতি চৈত্র নবরাত্রির সপ্তমী তিথিতে এই প্রথা পালন হয়ে আসছে।নাচগানের আসর বসে মনিকর্ণিকা শ্মশানঘাটে l আর এই নাচগান করেন শহরের বারবনিতারা।রাজা মানসিংহের সময় থেকে শুরু নানা গল্প আছে এই প্রথাকে ঘিরে এই বিশেষ দিনে বারবনিতাদের মা সরস্বতীর দূত বলে মনে করা হয়।
এই ঘাটটিকে প্রাচীন হিন্দুধর্মে একটি বিশেষ তীর্থস্থান হিসেবেও দেখা হয়। দূর দূর থেকে মানুষ ছুটে আসে এই বারাণসীর বুকে, জীবনের শেষ কটি দিন কাটানোর আশায়।