জ্যোতি মালহোত্রার ঘটনা থেকে শিক্ষা ! রেল-মেট্রোয় ছবি ও ভিডিয়োগ্রাফিতে জারি করা হল কঠোর নিষেধাজ্ঞা
বেস্ট কলকাতা নিউজ : পাক গুপ্তচর ভারতীয় ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার রেলস্টেশন ও মেট্রোরেলে ফটো ও ভিডিয়োগ্রাফি করার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করল কর্তৃপক্ষ। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার দৌড়ে প্রায়ই ট্রেনে বা মেট্রোয় রিল বা শর্টস বানাতে দেখা যায় । গলা ছেড়ে গান বা উত্তাল নাচ কিংবা অন্য কোনও দৃশ্যর ভিডিয়ো ঘোরাঘুরি করে মোবাইল ফোনে । সেইসব ভিডিয়োতে লক্ষ লক্ষ লাইকও পড়ে । রাতারাতি সেই ভ্লগার বা ইউটিউবার জনপ্রিয়তা পায় । কিন্তু এই রিল বানানোর হিড়িক অনেক ক্ষেত্রেই বাকি যাত্রীদের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায় । শান্তিতে মেট্রোয় বা ট্রেনে সফর করতে পারেন না তাঁরা। তবে ভ্লগার বা ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার কাজে স্তম্ভিত সকলে । এই ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় পোস্টের মাধ্যমে শত্রুদেশে তথ্য পাচার করেছে সে । তার ইউটিউব চ্যানেলে এখনও জ্বলজ্বল করছে হাওড়া-শিয়ালদা স্টেশনের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সম্বলিত ভিডিয়ো ।
ছবি ও ভিডিয়োগ্রাফিতে পূর্বরেলের জোর কড়াকড়ি : এই বিষয়টি নিয়ে পূর্বরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত জানান যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা দেশজুড়ে নিরাপত্তা বলয় আঁটোসাঁটো করা হয়েছে । তাই ‘লজিস্টিক মুভমেন্ট’ বজায় রাখার জন্য রেলস্টেশন, ট্রেনের ভিতরে, ট্র্যাক লাইনের মতো জায়গাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এইসব জায়গায় ফটোগ্রাফি বা ভিডিয়োগ্রফি করতে দেওয়া যথেষ্ট বিপজ্জনক । কোনও অসৎ বা দেশবিরোধী উদ্দেশ্যে এই ছবিগুলোকে ব্যবহার করা হতে পারে । তাই কিছুদিন আগে পর্যন্ত স্টেশনে বা ট্রেনের ভিতরে যে যত্রতত্র ছবি তোলা হচ্ছিল তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ।
তিনি আরও জানান, কেউ এই ধরনের কাজ করছেন কি না, সেটা দেখা জন্য সমস্ত স্টেশন চত্বর এবং ট্রেনের ভেতরে নিরাপত্তারক্ষী বা আরপিএফ জওয়ানরা সবসময় নজরদারি চালাচ্ছেন । তবে সিনেমা, সিরিয়াল কিংবা বিজ্ঞাপন শুটিংয়ের ক্ষেত্রে আগে যে নিয়ম ছিল তাই বলবৎ রয়েছে । সেক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই লিখিতভাবে অনুমতি নিতে হবে কর্তৃপক্ষের থেকে । তবে শুটিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম প্রথম থেকেই রয়েছে, যেমন সব স্টেশনে বা স্টেশন চত্বরে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে শুটিং করার অনুমতি মেলে না । তবে বিনা অনুমতিতে কেউ যদি ভিডিয়ো বা ফটোগ্রাফি করেন সেক্ষেত্রে আরপিএফ তাঁদের ধরবে এবং আইনানুগ জরিমানা ও শাস্তি হবে ।

শিয়ালদা স্টেশনেও ছবি ও ভিডিয়ো তোলার ক্ষেত্রে চলছে নজরদারি : এদিকে একই কথা জানিয়েছেন শিয়ালদা স্টেশনের জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী । তাঁর কথায়, “প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ শিয়ালদা দিয়ে যাতায়াত করেন । তাই এটি দেশের অন্যতম জনবহুল রেল স্টেশন । স্বাভাবিকভাবেই শিয়ালদা স্টেশনের ভিডিয়োগ্রাফ বা ফটোগ্রাফ খারাপ অভিসন্ধি নিয়ে ব্যবহার অভিপ্রেত নয় । আগাম অনুমতি ছাড়া স্টেশন চত্বরে এবং ট্রেনের ভিতরে কাউকে ভিডিয়োগ্রাফি বা ফটোগ্রাফি করতে দেওয়া হবে না । এমনকি খবরের জন্য যদি কোনও সংবাদমাধ্যম ছবি বা ভিডিয়ো করতে চায় সেক্ষেত্রেও নিতে হবে অনুমতি । ভ্লগার বা ইউটিউবারদের কাছে কর্তৃপক্ষের তরফে লিখিত অনুমতি থাকলে তবেই তারা শুট করতে পারবেন । ইতিমধ্যেই শিয়ালদা শহর-সহ শিয়ালদা শাখার আওতায় থাকা সবকটি স্টেশন, স্টেশন চত্বর এবং ট্রেনের ভিতরে আরও বেশি করে নজরদারি চালানো হচ্ছে । সব জায়গায় তৎপর রয়েছে আরপিএফ ।”
কলকাতা মেট্রোতেও জারি নিষেধাজ্ঞা : মেট্রোরেলের ক্ষেত্রেও আরও জোরদার করা হয়েছে নজরদারি । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানান, মেট্রো স্টেশন এবং রেকের ভেতরে অনুমতি ছাড়া ছবি বা ভিডিয়ো শুট নিষিদ্ধ করা হয়েছে । যদি কেউ বিনা অনুমতিতে ভিডিয়োগ্রাফি বা ফটোগ্রাফি করেন সেক্ষেত্রে আরপিএফ কর্তৃক তাদের শুট করা ভিডিয়ো ডিলিট করতে বলা হবে । তারপরে তাকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা হবে । প্রয়োজনে তাকে স্টেশন চত্বর থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হতে পারে ।
ভ্লগারের বক্তব্য : ভ্লগার সৌম্যদীপ মিত্র জানান, নিঃসন্দেহে দেশের স্বার্থ এবং সুরক্ষা সবার আগে । তাই কোনও ভ্লোগার কিংবা ইউটিউবার যদি ছবি তুলতে চান বা ভিডিয়োগ্রাফি করতে চান সেক্ষেত্রে তাদেরও সচেতন এবং দায়িত্ববান হতে হবে । তবে যেসব ইউটিউবাররা অনেক পরিশ্রম করে দর্শকদের কাছে প্রকৃত এবং প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরতে ভিডিয়ো বা ছবি তুলছেন তাঁদের জন্য যদি কর্তৃপক্ষ কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করে তাহলে তারা সত্যি উপকৃত হবেন ।