পাত পেড়ে ভুরিভোজ আর অগাধ আনন্দ বাংলা নববর্ষে ! কেন এত দাম পয়লা বৈশাখের! জানেন কি ?
বেস্ট কলকাতা নিউজ : ১৪২৯ কে বিদায় জানানোর পালা, বরণ করে নেওয়া হবে ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে। নববর্ষে নব রূপে সেজে উঠবে প্রতিটি মুহূর্ত। পিছনে পড়ে থাকবে ফেলে আসা একরাশ দুঃখ হাসি মাখা স্মৃতি। মানুষ আবার নতুন করে নতুন বছরকে আঁকড়ে ধরবে। পয়লা বৈশাখ বলতে এক সময় ছিল যৌথ পরিবারের মধ্যে আনন্দের হুটোপুটি, একসাথে বারান্দায় কলা পাতায় পাত পেড়ে খাওয়া, সকালে উঠে নিম হলুদ বাটার জন্য তাড়াহুড়ো। সেসব স্মৃতি এখন কিছুটা ম্লান। তার পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে ঝাঁ চকচকে মিষ্টির দোকানে রকমারি মিষ্টি। পরিবার আরো ছোট হয়েছে, কমেছে সদস্য সংখ্যা, তবে পয়লা বৈশাখের আনন্দের পারদ বিন্দুমাত্র কমেনি। বাঙালির আবেগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে রয়েছে নববর্ষের আনন্দ। আজও গ্রামাঞ্চলের দিকে গেলে দেখতে পাবেন পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে কত নিয়মরীতি রয়েছে। নববর্ষের আগে থাকে গাজন, চড়ক থেকে শুরু করে কত নিয়ম। বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে পয়লা বৈশাখ এতটা মিশে কেন? কেনই বা প্রতিবছর মানুষ মেতে উঠে পয়লা বৈশাখে? শুধুই কি নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার পালা, নাকি রয়েছে আরও অনেক কিছু?
আসলে সময় যত বদলায় তার মধ্যে মানুষও বদলায়। বদলে যায় অনেক কিছু। কত নিয়ম ভাঙে, কত নিয়ম গড়ে। ভাঙা গড়ার মধ্যে অটুট থাকে আমাদের ঐতিহ্য, বাঙালির স্মৃতি। পোশাক পরিচ্ছদ খাদ্যাভ্যাস বদল আসলেও মানুষ তার বাঙালি সংস্কৃতিকে কখনোই ভুলতে পারেনি। আগে পয়লা বৈশাখ বলতে যেখানে শুধুমাত্র মিষ্টি দই আর রসগোল্লার রমরমা ছিল, এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে রকমারি মিষ্টি। ঠিক তেমনি নিয়ম কানুনে এসেছে নতুন নতুন চল। মিল রয়ে গিয়েছে একটা জায়গায়। পয়লা বৈশাখ আগে যেমন বাঙালিদের কাছে বড় উৎসব ছিল, এখনও বাংলা ক্যালেন্ডারের এই প্রথম দিন বড় উৎসব হিসেবেই রয়ে গিয়েছে।
হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, বৈশাখ মাসের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। ধর্মীয় দিক থেকে কিংবা ফসল কাটার সময় দুই ক্ষেত্রেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই সময় কৃষকরা ফসল কাটেন, আবার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অনেকে বৈশাখ মাস থেকে শুরু করেন নতুন আর্থিক বছর। দোকানে দোকানে করা হয় হালখাতা। সেখানে সারা বছরের লেনদেনের হিসাব করা হয়। অপরদিকে কৃষকরা ভালো ফসলের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। শুধু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি নয়, যেখানে যত বাঙালি আছে সবাই পয়লা বৈশাখ পালন করে। বাংলাদেশেও ধুমধাম করে পয়লা বৈশাখ পালন করা হয়। অসমে নববর্ষই আবার বিহু নামে পরিচিত। পয়লা বৈশাখ আসলে ফসল কাটার উৎসব।
শোনা যায়, একটা সময় গ্রাম বাংলার মানুষরা চৈত্র মাসের শেষ দিনকে খাজনা আদায়ের দিন বলে মনে করতো । সেই দিন নতুন হালখাতা নিয়ে নতুন ভাবে খাজনা আদায়ের হিসেব করা হত। সেটি ছিল মূলত বছরের প্রথম দিন। অতীতে যাই থাকুক না কেন, বাঙালির খাওয়া-দাওয়া, গৃহপালিতে পশুদের স্নান, নিম হলুদ মাখা, মিষ্টিমুখ, বড়দের প্রণাম সবমিলিয়ে দুঃখের কোন জায়গা নেই বাংলা নববর্ষে। আছে শুধু পাত পেড়ে ভুরিভোজ আর অগাধ আনন্দ।