প্রথমে মূর্তি এবারে ছবি , বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না শহর শিলিগুড়িকে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

শিলিগুড়ি : স্বাধীনতার আগের রাত। শহরের রাজপথ সেদিন উত্তাল। ‘মেয়েদের রাত দখল’-এ শামিল পুরুষরাও। উচ্চকিত কণ্ঠে গর্জে উঠছে প্রতিবাদ। সেদিনের হাসমি চক কিংবা হিলকার্ট রোড দেখে মনে হয়েছিল, এ শহরে মেয়েদের অসম্মান করার মতো হয়তো আর কেউ নেই। শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে নজর গেল দেওয়ালে। নারীর সশক্তিকরণের প্রতীক হিসেবে রংতুলিতে ফুটিয়ে তোলা প্রতিটি ছবিতে আঁচড়। অশ্লীলতা ফুটে উঠছে পরতে পরতে। ছবিগুলিকে এমনভাবে বিকৃত করা হয়েছে যে, কোনও সভ্য মানুষের চোখ পড়লেই ‘ছি’ শব্দ বেরিয়ে আসতে বাধ্য। এখন ওই ছবিগুলির সামনে গেলে শিল্পকলা নয় বরং কিছু মানুষের বিকৃত চিন্তাধারা ফুটে ওঠে।

যে শহর নারীর নিরাপত্তা, নারীর স্বাধীনতা চেয়ে পথে নামে, সেই শহরে এমনটাও হতে পারে! ঘটনা দেখে এবং শুনে তাজ্জব সেদিনের রাত দখল কর্মসূচির আহ্বায়করা। রীতিমতো অবাক ও ক্ষুব্ধ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অত্যুহা বাগচীও । বেশ হতাশার সুরেই বলছিলেন, ‘সৌন্দর্যায়নের জন্য ও সমাজে একটি বার্তা তুলে ধরতে এই চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে কিছু মানুষের যে মস্তিষ্ক বিকৃত, বারবার তারই প্রমাণ পাওয়া যায়। আমরা এত আন্দোলন করছি, এত প্রতিবাদ করছি, কিন্তু কিছু মানুষের চিন্তাধারা কিছুতেই বদলাচ্ছে না।’

২০২২ সালে ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলটিকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। সীমানা প্রাচীরের গায়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি নারী সশক্তিকরণের বিভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। কোথাও আঁকা হয়েছিল মহিলা নাবিকের ছবি, কোথাও শিক্ষক, কোথাও আবার পাইলটের। এই ছবিগুলির অধিকাংশই বিকৃত করেছে দুষ্কৃতীরা। এলাকাবাসীর একাংশ বলছেন, ‘রাতে কেউ বা কারা এসে এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে। মাঝরাতে অনেকে দেওয়ালে আঁকা ছবির ওপর প্রস্রাবও করছে।’

এদিন স্কুলের বাইরে মেয়েকে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সুচেতা সাহা। দেওয়ালে আঁকা মহিলা নাবিকের ছবিটির ওপর অশ্লীল দাগগুলি যেন সমাজের একটা কালো দিককে তুলে ধরছে বলে জানাচ্ছিলেন তিনি। প্রথমে মূর্তি নিয়ে লজ্জিত হলাম আমরা, এবারে বিকৃত করা ছবি নিয়ে, সত্যি সত্যি লজ্জিত আমরা জানালেন শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার গৃহবধূ অনুষ্কা মুখার্জি। তিনি জানান সত্যিই ভাবতে লজ্জা লাগে, এত কিছু এত প্রতিবাদের পর এইসব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আমাদের প্রানের শহর শিলিগুড়িতে, এ কোথায় বাস করছি আমরা? আমরা চাই মেয়র এই ব্যাপারটি দেখুন। পদক্ষেপ যদি এখন থেকেই না নেওয়া হয়, তবে আরও লজ্জিত হবো আমরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *