ফের পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক রাজ্যজুড়ে, জুনিয়র ডাক্তারদের এমনটাই ঘোষণা ৮ ঘণ্টা জিবি বৈঠকের পর
বেস্ট কলকাতা নিউজ : ফের রাজ্যজুড়ে পূর্ণ কর্মবিরতির ঘোষণা জুনিয়র ডাক্তারদের। আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তাঁরা। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পর ৮ ঘণ্টা ধরে জিবি বৈঠক চলে তাঁদের। তার পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান জুনিয়র ডাক্তাররা।
আন্দোলনকারীদের দাবি, সরকার নিরাপত্তা দিতে না পারায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভয়ের রাজনীতি বন্ধ না হওয়ায় কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত বলে দাবি তাঁদের। দ্রুত ন্যায়বিচার, দুর্নীতির দায় নিয়ে স্বাস্থ্যসচিবকে অপসারণ-সহ মোট ১০ দফা দাবি পেশ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
জিবি বৈঠকের পর ডাক্তারদের দাবি, রাজ্যের তরফে বার বার নিরাপত্তার আশ্বাস মিলেছে। কিন্তু সেই আশ্বাসই সার। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ঘটনাই তার উদাহরণ। তাই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তাঁরা। যে ১০ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে সেগুলি হল-
নির্যাতিতার দ্রুত ন্যায়বিচার।
স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ।
হাসপাতালগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা বৃদ্ধি।
সমস্ত সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় রেফারেল সিস্টেম চালু করা ।
হাসপাতালের খালি বেডের মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন।
হাসপাতালগুলিতে শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ করা।
হুমকি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ।
দ্রুত সমস্ত হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে টাস্ক ফোর্স গঠন করে সিসিটিভি বসানো ।
প্যানিক বাটনের ব্যবস্থা করা
এই দাবিগুলি নিয়েই ফের পূর্ণ কর্মবিরতিতে জুনিয়র ডাক্তাররা। প্রসঙ্গত, শুধু জরুরি পরিষেবা দেওয়া নয়। সব পরিষেবাতেই কাজে ফিরতে হবে। সোমবার আরজি কর মামলার শুনানিতে জুনিয়র ডাক্তারদের এমনই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের সুরক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকে। এর মধ্যেই এদিন সুপ্রিম কোর্টে আরজিকর মামলার স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই।
এদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং দাবি করেন, ‘সাধারণ মানুষ যাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জানতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হোক। এটা কোনও সাধারণ খুনের ঘটনা নয়। ধর্ষণ-খুনে একজন নয় আরও অনেকে জড়িত। ৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সিবিআই। কিন্তু, তারা এখনও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত। তাদের সাসপেন্ড করা হোক বা ছুটিতে পাঠানো হোক।’ রাজ্য সরকারের আইনজীবী জানান, ইতিমধ্যেই ৫ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিনি জানান, সিবিআই কারও বিরুদ্ধে তথ্য দিলেই, পদক্ষেপ করা হবে। আইনজীবী করুণা নন্দী বলেন, ‘৭ জন আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। তারা ক্রাইম সিনেও ছিলেন। তারা কীভাবে কর্মরত? তাদের ছুটিতে পাঠানো হোক বা সাসপেন্ড করা হোক।’
ইন্দিরা জয়সিং এও বলেন, ‘অভিযুক্তরা কর্মরত থাকলে জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে ফিরবেন কীভাবে?’ প্রধান বিচারপতি জানতে চায়, ‘আর্থিক দুর্নীতিতে সিবিআই স্ক্যানারে কাদের নাম আছে? আমরা এখন কেবল ধর্ষণ, খুন, আর্থিক দুর্নীতির ব্যাপারে নজর রাখছি। কিন্তু, তদন্তের ব্যাপ্তি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন হলে দেখা হবে। এটি একটি বড় চক্রের অংশ।’ সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্টে আমরা সেই ইঙ্গিতও দিয়েছি।’ সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই রিপোর্ট দেখে আদালত প্রশ্ন তুলেছে, ‘ঘুমন্ত অবস্থায় নিহত চিকিৎসকের চোখে চশমা কেন? চিকিৎসকদের সুরক্ষায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৫০ শতাংশের বেশি কাজ হয়নি কেন?’ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দেবাশিস সোমকে কি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই? সেই প্রশ্নও ওঠে এদিনের শুনানিতে। উঠে আসে, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রসঙ্গও।