বাংলা না পারলেও শেষমেশ করে দেখাল পড়শী রাজ্য বিহার, অবশেষে ৪ লক্ষ চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক পেলেন সরকারি চাকরি
বেস্ট কলকাতা নিউজ : বাংলায় চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে বহুদিন থেকে সরব চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকরা। বেতন বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। বঙ্গ সরকার এই বিষয়ে কোনও আশার কথা এখনও পর্যন্ত শোনাতে পারেনি। তবে, তার আগেই করে দেখাল বিহার। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর), রাজ্যের চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের নিয়ে এক বড় সিদ্ধান্ত নিল বিহারের নীতীশ সরকার। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নিয়ে, এদিন চার লক্ষেরও বেশি চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের স্থায়ী রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বিহার সরকার। এতদিন পর্যন্ত এই চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকরা শিক্ষা মিত্র নামে পরিচিত ছিলেন। এদিনের সিদ্ধান্তের ফলে, ৪ লক্ষের বেশি চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক এখন স্কুলগুলিতে সহকারী শিক্ষকের মর্যাদা পাবেন।
বিহারের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব, এস সিদ্ধার্থ বলেছেন, “রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই বিজ্ঞপ্তি জারির পর, এই চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের সরকারি কর্মচারীদের মর্যাদা-সহ ‘এক্সক্লুসিভ’ শিক্ষক হিসাবে গণ্য করা হবে। শিক্ষা বিভাগ এই প্রস্তাব দিয়েছিল। মন্ত্রিসভা তা মেনে নিয়েছে। নতুন নিয়মের আওতায় চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের সরকারি কর্মচারীদের মর্যাদা দেওয়া হবে। এই নয়া বিধির নাম ‘বিহার স্কুল এক্সক্লুসিভ টিচার্স রুলস, ২০২৩’।” তবে, সরকারি কর্মচারী হিসাবে মর্যাদা পাওয়ার জন্য এই শিক্ষকদের একটি যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এদিন, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে বিহার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকের পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০০৩ সালে, বিহারের স্কুলগুলিতে শিক্ষকের ব্যাপক অভাব দেখা দিয়েছিল। সেই সময় অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য রাবড়ি দেবীর সরকার ‘শিক্ষা মিত্র’দের নিয়োগ করেছিল। সেই সময় তাঁদের প্রতি মাসে ১,৫০০ টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হত। কালক্রমে, সেই বৃত্তির টাকার পরিমাণ বেড়েছে। বর্তমানে তাঁরা মাসে মাসে ২২,০০০ টাকা করে পান। তবে, সরকারি শিক্ষকের প্রাপ্য অনেক সুযোগ সুবিধা থেকেই বঞ্চিত ছিলেন তাঁরা। এখন, রাজ্য সরকারি কর্মচারী হলে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২৫,০০০ টাকা করে বেতন পাবেন। সেইসঙ্গে, পাবেন ভ্রমণ ভাতা, মহার্ঘ্যভাতা এবং অন্যান্য ভাতা। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকরা সকল ভাতা ছাড়া ৩১,০০০ টাকা করে বেতন পাবেন।
বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব বলেছেন, “আমরা যতটা সম্ভব মানুষকে সম্মান দিতে চাই। শিক্ষক এবং শিক্ষার মানের দিকে, আমাদের সবসময়ই নজর ছিল। আজ এই বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে, প্রায় ৪.৫ লক্ষ শিক্ষক নিয়োগ পাবেন। তাঁদের সরকারি কর্মচারীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। একে একে আমরা সব প্রতিশ্রুতিই পূরণ করছি।” এদিকে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতেন রাম মাঝি দাবি করেছেন, শিক্ষা মিত্রকে রাজ্য কর্মচারীদের মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তাঁর আমলেই। নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিলেন। এখন আবার তিনিই এই কাজের কৃতিত্ব নিতে চাইছেন। কৃতিত্ব যারই হোক, বিহারের চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হল। এদিকে বাংলার চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের শিকে কবে ছিঁড়বে? উঠছে এমন প্রশ্ন।