বড়দিনের প্রাক্কালে বেলুড় মঠে আধ্যাত্মিক আবেশে সম্পন্ন হল প্রভু যীশুর মহাপুজো
বেস্ট কলকাতা নিউজ : বাঙালির শীতের সন্ধ্যায় যখন শহর ক্রিসমাসের আলোকমালায় ঝলমল করছে, ঠিক তখনই গঙ্গাতীরে নীরব, সংযত অথচ তীক্ষ্ণ আধ্যাত্মিক পরিবেশে প্রথা মেনে যীশুপুজোর আয়োজন করল বেলুড় মঠ । নিয়ম-অনুশাসনের কঠোরতা বজায় রেখেই রামকৃষ্ণ মিশনে বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হল এই বিশেষ উপাসনা । সন্ধ্যারতি শেষে মন্দির প্রাঙ্গণে ভক্তদের ভিড়ে তৈরি হল এক অন্য রকম নিস্তব্ধ উত্তরণের আবহ ৷ যেখানে ধর্ম নয়—মানবতাই ছিল একমাত্র মন্ত্র । মূল মন্দিরের দক্ষিণাংশে যীশুর প্রতিমূর্তি স্থাপন করে নিবেদন করা হল ফুল, ফল, নানা প্রসাদ, কেক, পেস্ট্রি ৷ কিন্তু আড়ম্বর নয়, ছিল সংযমী সৌন্দর্য । আলোর ক্ষীণ ঝলক আর ধূপের সুগন্ধে পুরো প্রাঙ্গণ আবিষ্ট হয়ে ওঠে । অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ক্যারল সঙ্গীত দিয়ে ।

সেই গানের আওয়াজ ভেসে উঠতেই এক প্রবীণ ভক্তের গলায় শোনা গেল অকৃত্রিম উচ্চারণ—”ভক্তিই আমাদের একমাত্র পরিচয় ৷”এটাই যেন এদিনের সমাবেশের সারকথা ।চিরাচরিত প্রথা মেনে পাঠ করা হয় যীশুর জন্মকথা । বাইবেলের অংশবিশেষ পাঠের পাশাপাশি ছিল আন্তধর্মীয় প্রার্থনা । একজন বিষয়ে একজন সন্ন্যাসী বলেন, “যার প্রেম সর্বজনের জন্য, তাঁর জন্মদিন শুধু খ্রিস্টানদের উৎসব নয়; মানবসমাজের উৎসব ।” তাঁর বক্তব্যেই ফুটে ওঠে রামকৃষ্ণ পরম্পরার মর্মবাণী— সব ধর্মই আসলে সত্যের পথে ভিন্ন ভিন্ন যাত্রা ।
এদিন যীশুপুজোর প্রাঙ্গণে আগত ভক্তদের ভিড়ে ছিলেন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ ৷ কেউ হাতজোড় করে প্রার্থনায় রত আবার কেউ বা নীরবে ধ্যানমগ্ন । কারও চোখে জল, কারও মুখে সন্তুষ্টির শান্ত রেখা । এদেরই মধ্যে উপস্থিত এক যুবক জানালেন, এখানে এসে বোঝা যায়, ধর্ম মানে বিভাজন নয়; সংযোগ । সেই সংযোগের বার্তাই যেন এই যীশুপুজোকে অন্য মাত্রা দেয় । বেলুড় মঠ বহুদিন ধরেই সর্বধর্মসমন্বয়ের জীবন্ত প্রতীক । রামকৃষ্ণ-স্বামীজির দর্শনের ধারাবাহিকতায় এখানে কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং সচেতন বার্তা দেওয়া হয় ৷ ঘৃণার বদলে ভালোবাসা, সংঘাতের বদলে সহমর্মিতা বেছে নেওয়ার । তাই এই যীশুপুজো শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়; এটি মানবিকতার প্রকাশ ৷ এক নীরব প্রতিবাদও; কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ।

