ভরা অনুষ্ঠান থেকে ভর সন্ধ্যায় চুরি গেল মাথার চুল, অবাক সকলে
শিলিগুড়ি : রাস্তাঘাটে টাকাপয়সা, গয়না ছিনতাইয়ের কথা হামেশাই শোনা যায়। কিন্তু তাই বলে মাথার চুল ছিনতাই! তাও আবার ভরা অনুষ্ঠান থেকে! শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এবার এমনটাই ঘটল শিলিগুড়ির সূর্যনগর মাঠে। সন্ধ্যায় একটি বেসরকারি সংস্থার কার্নিভাল দেখতে সূর্যনগর মাঠে গিয়েছিলেন এক তরুণী। সঙ্গে কাকিমা ও কয়েকজন বান্ধবীও ছিলেন। অনুষ্ঠানের মাঝে হঠাৎ তরুণী খেয়াল করেন, মাথার সেই লম্বা চুল আর নেই। অলক্ষে কে যেন চুল কেটে নিয়েছে। মুহূর্তে কেঁদে ওঠেন তিনি, সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানও হারান। আর হবে নাই বা কেন? কিশোরী বয়সেই যে চুল পিঠ ছাড়িয়ে কোমরের নীচে নেমে এসেছিল তাঁর। ঘন কালো চুলের প্রতি সেই সময় থেকেই অসীম মায়া জাগে তরুণীর। চুল দেখেই নাকি তাঁকে পছন্দ করেছিলেন হবু শ্বশুরবাড়ির লোকেরা।
এরপর হঠাৎ করে কার্নিভাল এসেই ঘটে গেল এই দুর্ঘটনা।, এদিকে দুঃখে চোখ ছলছল তরুণীর। একবুক হতাশা নিয়ে বলছেন, ‘কার্নিভালে অনুষ্ঠান দেখছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করি, পেছন দিকের চুলের বিনুনি আর নেই। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে মাঠে উপস্থিত পুলিশকে জানাই। মনে হয়েছিল এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলে অপরাধীকে ধরা যেতে পারে। কিন্তু সেখানকার পুলিশকর্মীরা আগে থানায় অভিযোগ জানাতে বলেন।’ তাঁর আক্ষেপ, ‘যে চুল দেখে শ্বশুরবাড়ির মানুষ পছন্দ করেছিল, সেই চুলই থাকল না। ওঁদের কাছে মুখ দেখাব কী করে?’ ঘটনায় চরম হতভম্ব হলেও অপরাধীকে একেবারেই ছাড়তে নারাজ তরুণী। সেই কারণে দিনভর ছুটলেন পুলিশের কাছে। এদিন দুপুরে প্রথমে তিনি অভিযোগ নিয়ে এনজেপি থানায় যান। কিন্তু ঘটনাটি শিলিগুড়ি থানা এলাকায় ঘটায় সেখানে থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এরপর মহিলা থানা হয়ে অবশেষে শিলিগুড়ি থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

উল্লেখ্য ,মাসকয়েক আগে নদিয়ার শান্তিপুরে সক্রিয় হয়েছিল এরকম একটি গ্যাং। দুষ্কৃতীদের টার্গেটই থাকত লম্বা চুলের মহিলারা। সুযোগ পেলেই দলটি চুল কেটে পগারপার হয়ে যেত। উদ্দেশ্য একটাই, কাটা চুল আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে দেওয়া। কারণ বিদেশে ভারতীয়দের চুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মাঝেমধ্যে ফেরিওয়ালারাও পাড়ায় পাড়ায় হাঁক পেড়ে চুল কেনেন। বদলে দেওয়া হয় স্টিলের থালা-বাটি কিংবা খেলনা।
শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডের চুল ব্যবসায়ী আবদুল্লা গাজির কথায়, ‘চিন, থাইল্যান্ড, মায়ানমারের মতো বহু দেশে পরচুলা ব্যবহারে বা দামি খেলনা তৈরিতে চুলের প্রয়োজন হয়। কদর বেশি রয়েছে বড় চুলের।’ আর সেই কারণেই চুলের বাজারে বঙ্গ ললনাদের কদর সবসময়ই বেশি। নিউজিল্যান্ড, আমেরিকার মতো দেশে দুষ্কৃতীদের একটি অংশ পেশা হিসেবে চুল ছিনতাইয়ে বহুবার জড়িয়েছে বলে খবরে প্রকাশ হয়েছে। সাধারণ মানের ছোট ও মাথা থেকে খসে যাওয়া চুল কেজি প্রতি ১৫-৪০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু চুলের মাপ বড় হতে থাকলে দরও বাড়তে থাকে পাল্লা দিয়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে তিন লক্ষ টাকা প্রতি কেজিতেও চুল বিকোয় বলে জানা গিয়েছে। ফলে এনজেপির ওই তরুণীর চুলের ঠিকানা আপাতত শিলিগুড়ি ঝংকার মোড়ে বলে খবরে জানা গেছে।