লিঙ্গ পরিবর্তন করাবে তান্ত্রিক! সমকামী যুবতী ‘নিরুদ্দেশ’ প্রেমিকাকে বিয়ে করতে চেয়ে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : কলেজে পড়তে পড়তেই প্রেম হয়েছিল তাঁদের। ২৭ বছরের পুনম কুমারী এবং ২৫ বছরের প্রীতি সাগর। জানাজানি হতে, দুজনের বাড়ি থেকেই আপত্তি জানানো হয়েছিল। এই অবস্থায় লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ হতে চেয়েছিলেন পুনম। প্রীতির বাড়ির লোকজন তাঁকে পাঠিয়েছিলেন এক তান্ত্রিকের কাছে। তারপর থেকে আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। লিঙ্গ পরিবর্তন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে ওই তান্ত্রিক। প্রাথমিক তদন্তের পর এমনই জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার (২১ জুন), পুনমকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই তান্ত্রিককে। গ্রেফতার করা হয়েছে পুনমের প্রেমিকা প্রীতি সাগরকেও। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরিতে।
পুলিশ জানিয়েছে, শাহজাহানপুরের বাসিন্দা ছিলেন পুনম। কয়েক মাস আগে তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল লখিমপুর খেরির প্রীতি সাগরের। এদিকে, প্রীতির বাড়ি থেকে তাঁর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল তাঁর পরিবার। বহু চেষ্টা সত্ত্বেও কোনও পুরুষকেই বিয়ে করতে চাননি প্রীতি। এরপরই, পরিবারের কাছে পুনমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা খুলে বলেছিলেন প্রীতি। খবর পৌঁছে যায় পুনমের বাড়িতেও। সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে দুই পরিবারই এই সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু, তা মানেনি প্রীতি ও পুনম। এই অবস্থায় রাম নিবাস নামে এক পূর্বপরিচিত তান্ত্রিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন প্রীতির মা উর্মিলা। ওই তান্ত্রিক তাঁকে বলেছিলেন, পুনমের লিঙ্গ পরিবর্তন করা হলে, তিনি পুরুষ হয়ে যাবেন। সেই ক্ষেত্রে তাঁর মেয়ের বিয়ে এক পুরুষের সঙ্গেই হবে।
এরপর, ১৮ এপ্রিল পুনমকে ডেকে পাঠিয়েছিল রাম নিবাস। লখিমপুর খেরি থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে এক জায়গায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকেই পুনমের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ২৬ এপ্রিল পুনমের ভাই পারবিন্দর কুমার লখিমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এফআইআর-এ, প্রীতি, তাঁর মা উর্মিলা পুনমের ভাই পারবিন্দর কুমার ওই তান্ত্রিকের বিরুদ্ধে তাঁর বোনকে হত্যার অভিযোগ দায়ের করেন। পারবিন্দরের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে শুরু করে পুলিশ। পুনমের ফোনের কল ডিটেইলস স্ক্যান করে পুলিশ প্রীতি সাগরের সঙ্গে পুনমের সম্পর্কের খোঁজ পেয়েছিল। পুলিশ দেখেছিল, তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে ফোনে কথা বলতেন।
প্রীতির বাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ রাম নিবাসের খোঁজ পায়। তাকে আটক করে জেরা করতেই সে তার অপরাধ স্বীকার করে নেন। ওই তান্ত্রিক জানায়, লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য একটি বিশেষ আচার-অনুষ্ঠান করার অজুহাতে পুনমকে সে গোমতীর তীরে এক নির্জন জঙ্গলে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর, সেখানে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। সে আরও জানিয়েছে, পুনমকে হত্যার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন প্রীতির মা উর্মিলা। মেয়ের বান্ধবীকে হত্যা করার জন্য তাকে উর্মিলা ১.৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে রাম নিবাস। এর জন্য তাকে ৫০০০ টাকা অগ্রিমও দেওয়া হয়েছিল। পুনমকে হত্যার পর বাকি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ অবশ্য এখনও এই অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত নয়। রাম নিবাস আরও জানিয়েছে, হত্যার পর পুনমের দেহ ওই জঙ্গলেই ফেলে রেখে পালিয়েছিল সে। পুলিশ এখনও পুনমের দেহ খুঁজে পায়নি। প্রীতির বাড়ির কাছে থেকে ১১টি হাড় উদ্ধার করেছে তারা। ওই হাড়গুলি পুনমের কিনা, তা জানতে সেগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।