হাড় কাঁপানো ঠান্ডা মানুষের রক্ত চামড়া ভেদ করে ঠান্ডা অ্যাটাক করছে মস্তিষ্ক, হার্টে কীভাবে বাঁচবেন মৃত্যু কবল থেকে? এক বার জেনে নিন
হাড় কাঁপানো ঠান্ডা মানুষের রক্ত চামড়া ভেদ করে আঘাত করছে ডায়রেক্ট মস্তিষ্ক (Brain) আর হার্টে (Heart)। হার্ট অ্যাটাকের গল্পে কোলেস্টেরল, দুশ্চিন্তা এখন অতীত। ঠান্ডায় জুবুথুবু হয়ে আপনার সামনে কথা বলতে থাকা মানুষটিও কখন মৃত্যুর করে ঢলে পড়বে টেরও পাবেন না। কানপুর (Kanpur) থেকে একের পর এক উঠে আসছে হাড় হিম করা ভিডিও। সুস্থ মানুষ মুহূর্তের মধ্যে মারা যাচ্ছে। যে মানুষটি সুস্থ সবল ভাবে কথা বলছিলেন তিনি হঠাৎ করেই পড়ে গিয়ে পড়ে যান। কয়েক সেকেন্ডের সব শেষ। প্রাথমিক চিকিৎসার সময়টুকু পাওয়া যাচ্ছে না। ভিলেন একমাত্র হাড় কাঁপানো ঠান্ডা।
এভাবেই যদি তাপমাত্রার পারদ কমতে থাকে তাহলে হয়তো কদিন পর দেখবেন দিল্লিতেই বরফ পড়ছে। ইতিমধ্যেই দিল্লির (Delhi) তাপমাত্রা ১ ডিগ্রির কাছাকাছি, যা গত দু বছরে সর্বনিম্ন। পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) অধিকাংশ জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে গিয়েছে। কলকাতা (Kolkata) তাপমাত্রা ঘোরাঘুরি করছে ১০ ডিগ্রির কাছে। ২০২৩ এর ঠান্ডাকে একেবারেই হালকা ছলে নেবেন না। এই ঠান্ডা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। মুহূর্তে জমিয়ে দিতে পারে রক্ত মাংস হাড়। উত্তরপ্রদেশের এক ব্যক্তি ট্রাক্টর চালিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ করে সেই ট্রাক্টরেই তার মৃত্যু ঘটে। এক ব্যক্তি জিমে ঢুকে জাস্ট তার জ্যাকেটটা খুলেছেন। কয়েক সেকেন্ডে মৃত্যুরুপী ঠান্ডা তাকে জড়িয়ে ধরে। এই ঠান্ডায় সামান্য কিছু ভুলেই বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি। সবথেকে খারাপ অবস্থা কানপুরে। মাত্র ২৪ ঘন্টায় শহরটিতে শুধুমাত্র ঠান্ডার কারণে মারা গিয়েছে ২৫ জন লোক। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র ঠান্ডার কারণে হার্ট অ্যাটাক আর ব্রেন স্টোকের কারণে এমন করুণ পরিণতি। উত্তর ভারতের অবস্থা বেশ সঙ্গীন। আবৃত হিমালয় থেকে আসা মারণ শৈত্যপ্রবাহ একের পর এক কামড় বসাচ্ছে ভারতের এই অংশে। মোটা শীত পোশাককেও হার মানিয়ে দিচ্ছে এই ঠান্ডা, বাড়ছে রক্তচাপ। জমাট বেঁধে যাচ্ছে রক্ত। কানপুরে যে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে ১৭ জনকে প্রাথমিক সেবাটুকু দেওয়া যায়নি। কানপুরে হু হু করে ব্রেন স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহের জেরে পূর্ব এবং পশ্চিম উত্তর প্রদেশের প্রায় ২৫ টি জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রায় ৩৭টি জেলার উপর দিয়ে বইছে মারণ শৈত্য প্রবাহ ।
শীতকালে কেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকে ঝুঁকি বাড়ে? আসলে অন্যতম কারণ শীতল আবহাওয়া। এর কারণে শরীরের রক্তবাহী নালীগুলি সংকুচিত হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। হার্টের করোনারি আর্টারিওতে রক্ত চলাচলে সমস্যা হলেই হার্ট অ্যাটাক দেখা দেয়। আসলে শরীরের তাপমাত্রা আর বাইরের তাপমাত্রার মধ্যে বিস্তার ফারাক ঘটলে স্নায়ুতন্ত্র গুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। সরু হয়ে যায় রক্তনালী। সেই মুহূর্তে যদি রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় তখন হার্টকে রক্ত পাম্প করার জন্য একটু বেশি কাজ করতে হয়। তখনই দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাক। বিশেষ করে যারা প্রায় মদ্যপান করেন কিংবা আগে থেকে হার্টের সমস্যা রয়েছে, ধূমপান করেন, ব্লাড প্রেসার, সুগার, কোলেস্টেরলের মত সমস্যা রয়েছে তারা এই শীতকে একটু সমঝে চলুন। হার্ট অ্যাটাকের কোনো লক্ষণ দেখা দেবে না। রীতিমত সাইলেন্ট কিলারের মতো মৃত্যু ডেকে আনবে। যদি হার্ট অ্যাটাক হয় দ্রুত মাথা ঠান্ডা রেখে অসুস্থ ব্যক্তিকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। আগে প্রয়োজন প্রাথমিক চিকিৎসা । অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু না পাওয়ার কারণে মৃত্যু ঘটছে
শীতকাল মানেই ঠান্ডা হিমশীতল হাওয়া আর তার যাবে জ্বর সর্দি কাশির মতো হাজারো সমস্যা। যদি ঠান্ডা লাগার সমস্যায় বহুদিন ভোগেন সে ক্ষেত্রে কিন্তু হৃদরোগ হতে পারে। তাই এই ধরনের উপসর্গগুলিকে একেবারেই এড়াবেন না। মাঝেমধ্যে শীতকালে একটু রক্তচাপ পরীক্ষা করিয়ে নিন। যদি বারংবার ঘর আর বাইরে যান আর নিয়ম না মানে তাহলে কিন্তু হার্টের দফারফা। কারণ বাইরে ঠান্ডা আর বাড়ির মধ্যে থাকা গরম আবহাওয়া বারংবার পরিবর্তনের কারণে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। যখনই বাইরে বেরোবেন অবশ্যই ভালোভাবে শীত পোশাক পরুন। বিশেষ করে নাক কান গলা ভালোভাবে ঢেকে রাখবেন। গরম পোশাক শরীরকে গরম করে যার ফলে ঠান্ডা রক্ত সঞ্চালনে প্রভাব ফেলতে পারবে না। হার্ট অ্যাটাকের কিছু কমন লক্ষণ রয়েছে। এই লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করবেন। যেমন বুকের বাম দিকে সামান্য ব্যথা, চোয়ালে ব্যথা, বমি বমি ভাব ,বুকে ব্যথা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা প্রভৃতি। শরীরকে গরম রাখতে ধূমপান বা অ্যালকোহল পান, এই ধারণাকে একেবারে ত্যাগ করুন। শীতকালটা জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত মশলাদার খাবার থেকে দূরে থাকুন। তার পরিবর্তে বেছে নিন সুষম খাবার। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত শরীর চর্চা করলে আরো ভালো।
শীতে কিন্তু হার্ট অ্যাটাক আপনাকে জানিয়ে আসবে না। হার্ট অ্যাটাক শরীরের তাপমাত্রা আর বাইরের আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। আগে যে ধারণা ছিল ষাট বছর বয়স হলে হার্ট অ্যাটাক হয়, সেই সব গল্প এখন বাতিলের খাতায়। কুড়ি থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে থাকা বয়সী মানুষেরও হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বহু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যখনই হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন হয় তখন স্ট্রোক, হার্ট ফেলিওর, হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিওভাসকুলার মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই শীতকে একটু সমঝে চলুন