মথুরাপুরের ‘ভাঙ্গাচোরা মেলায় পুরনো যা কিছু সবই আছে শুধুমাত্র প্লেন এবং জাহাজ ছাড়া
বেস্ট কলকাতা নিউজ : যদি আপনাকে বলা হয়, কোনও এক শীতের সকালে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে টাইম মেশিনে চেপে চলে যেতে পারেন আপনার শৈশবে! বিশ্বাস হবে না বুঝি! এই অনলাইনের যুগে এসব ঢপবাজি গল্প বিশ্বাস না হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে বলি, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লক্ষ্মীকান্তপুর বা নামখানা লোকালে উঠে নেমে পড়ুন মথুরাপুর রোড স্টেশনে। নেমে মিনিট সাতেক হাঁটাপথ। তারপর দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের মেলার মাঠ। মেলায় ঢোকার পরেই আপনার মনে হবে ট্রেন নয় টাইম মেশিনে চড়ে চলে এসেছেন পুরনো যুগের কোনও মেলায়।
যার বয়স ২০০ বছরের বেশী কিংবা কম নয়। এখানকার স্থানীয়রা বলেন ভাঙা বা পুরনো মেলা। সেখানে দাদু-ঠাকুরদার মুখে শোনা গল্পের মতো ক্যামেরা, সাদাকালো টিভি, আবলুস বার্ণিস করা কাঠের আসবাব, বই, সংবাদপত্র, ঘড়ি, বাদ্যযন্ত্র, লন্ঠন থেকে বোতাম টেপা ভিডিও গেমস, কী নেই! মেলায় ঘুরতে ঘুরতে মনে হবে, ছোটবেলার দুনিয়াটা এখানে থমকে আছে। মেলায় সকালে ঢুকলে ঘুরতে ঘুরতে বিকেল গড়িয়ে যাবে তবুও যেন মেলা শেষ হবে না। এই মেলায় যা মিলবে সবই পুরনো। ‘ওএলএক্স, কুইকার’-এর সৌজন্যে এমনিতেই ইদানিং পুরনো জিনিস কেনা বেচার একটা চল শুরু হয়েছে। এই গ্রামের মানুষ ‘ওএলএক্স’ বা অনলাইনের জিনিসের প্রতি ওয়াকিবহাল নয়। এই মেলায় সকলের কাছে একমাত্র জায়গা যেখানে সহজে অনেক কমা দামে মূল্যবান জিনিস কিনতে পারে।
ক্রমে ক্রমে বেড়েছে জনপ্রিয়তা। আড়ে বহরে বিশাল মেলাটি বসে ১০০ একর জায়গা জুড়ে। ১৫ দিন মেলা চালানোর অনুমতি দেয় প্রশাসন। তবে মেলা চলে প্রায় একমাস ধরে। তাই পৌষ সংক্রান্তির পূণ্যদিনে এখানকার মহাশ্মশান সংলগ্ন পবিত্র পুকুরটিতে চলে পুণ্যার্থীদের স্নান পর্ব। সেই উপলক্ষ্যেই এই মেলার আয়োজন। কিন্তু কালচক্রে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ভাঙাচোরা পুরনো জিনিসপত্রের মেলায় পরিণত হয়েছে এই সংক্রান্তির মেলা। ভাঙ্গা মেলার দোকানদার বিজয় দাস, মজা করে বলছিলেন ‘এই মেলায় প্লেন আর জাহাজ ছাড়া সবই পাওয়া যায়। আপনারা শহরের বাবুরা মোবাইলে পুরনো জিনিস অর্ডার করে কেনেন, আমরা তেমনই এই মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকি।’