ভক্তদের মনের কথা শোনে পঞ্চমুখী শিবলিঙ্গ , পূরণ করে সব ইচ্ছা, কোথায় রয়েছে এমন জাগ্রত মন্দির ? জেনে নিন
বেস্ট কলকাতা নিউজ : নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে পঞ্চমুখী শিবলিঙ্গ। দর্শন করলেই পূরণ হবে মনের সব ইচ্ছা। কোথায় আছে এমন মন্দির? মুহূর্তে মনটা ভালো হয়ে যাবে। বারংবার ছুটে যেতে ইচ্ছা হবে। এই মন্দিরে রয়েছে বিশেষ টান। শ্রাবণ মাসে ভক্তদের ভিড় দেখার মতো। কি রয়েছে এই মন্দিরে? মন্দিরটা এত জাগ্রত কেন? পাঁচটা মুখ অর্থাৎ পঞ্চমুখী শিবলিঙ্গ নিয়ে কি বলছে শাস্ত্র?
মুর্শিদাবাদ মানেই ঐতিহ্যবাহী জেলা। যারা আনাচে-কানাচে রয়েছে ঐতিহ্যে মোড়া প্রচুর মন্দির। বিশ্বাস করা হয়, এর মধ্যে অন্যতম বড়নগরের জাগ্রত শিব মন্দির। মন্দিরটি আয়তনে ছোট, কিন্তু দেখতে অসাধারণ। মন্দিরে দেয়ালে খোদাই করা রয়েছে সুন্দর নকশা। মন্দিরের ছাদ উল্টানো নৌকার মতো। মন্দিরের দেয়াল বলে দেবে রাম রাবণের যুদ্ধের কাহিনী। মহাকাব্যের কথা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে টেরাকোটার কাজের মাধ্যমে।
বলা হয়, এই মন্দিরে এসে পুজো দিলেই নাকি ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। সেই উদ্দেশ্যে প্রতিদিন প্রচুর ভক্ত দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। মন্দিরটি কবে প্রতিষ্ঠা হয়েছ সেই সম্পর্কে বিশদ কিছু জানা যায় না। তবে শোনা যায়, ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এক জৈন ব্যবসায়ী মন্দিরটির সংস্করণ করেছিলেন। মন্দিরের চারদিকটা ঘেরা, সামনে রয়েছে ভীষণ সুন্দর ফুলের বাগান। মন্দিটির মুখ দক্ষিণ দিকে। দোচালা মন্দিরের সামনে রয়েছে তিনটি খিলান। মন্দিরের গর্ভ গৃহে রয়েছেন পঞ্চমুখী শিব। কথিত আছে, এই শিবলিঙ্গ ভীষণ জাগ্রত। ভক্তদের মনের কথা ঠিক শুনতে পান।
শাস্ত্র অনুযায়ী, পঞ্চমুখী শিবলিঙ্গের পাঁচটা মুখ হল অঘোর, তৎপুরুষ, বামদেব সদ্যোজাত এবং ঈশান। শিবের ডানদিকে যে মুখটি থাকে তাকেই বলা হয় অঘোর, এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। শিবের প্রসন্নরূপ অর্থাৎ তৎপুরুষ থাকে মন্দিরের সম্মুখভাগে। তৎপুরুষের বিপরীত দিকে দেখা যায় শিবের শান্ত শিশুসুলভ রূপ, একে বলা হয় সদ্যোজাত। আর লিঙ্গের ঠিক বাম দিকে বামদেব। শিবলিঙ্গের মাথায় যে মুখটি থাকে এবং চারটি রূপের উপর লক্ষ্য করে যায় তাকে বলে ঈশান। এটি নাকি মহাকাশের সঙ্গে সংযুক্ত।
মন্দিরটি যে জায়গায় রয়েছে সেই জায়গার ইতিহাসও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। শোনা যায়, স্বামী রাজা রামকান্ত রায়ের মৃত্যুর পর এখানকার জমিদারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন রানী ভবানী। তিনি তার মেয়েকে নিয়ে এখানে বসবাস করতে শুরু করেন। স্থানীয়রা রানী মাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি সবসময় নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন দান ধ্যানের মতো কাজে। মনে করতেন, শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করলে মনের ইচ্ছা পূরণ হবে। আর তাই বড়নগরে প্রায় ১০০ টি শিব মন্দির তৈরি করেছেন।
আপনি যদি কলকাতা থেকে এই মন্দিরে যেতে চান তাহলে হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ধরে যেতে হবে আজিমগঞ্জ জংশনে। সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পাবেন মুর্শিদাবাদের বড়নগর গ্রাম। স্টেশন থেকে বড়নগর যাওয়ার পথে ডানদিকে নদীর ধারে মন্দিরটি রয়েছে। যাওয়ার পথে পঞ্চমুখী মন্দির যাবেন বললে, যে কাউকে ঠিকানা বলে দেবে। একদিন কাজের ফাঁকে চট করে ঘুরে আসতে পারেন এই জাগ্রত মন্দির থেকে।