প্রকাশ্যে কাউকে ‘পাগল’ বলা অপরাধ নয় জনসমক্ষে, এমনটাই জানালো এলাহাবাদ হাইকোর্ট
বেস্ট কলকাতা নিউজ : চরম অভদ্রতা হতে পারে জনসমক্ষে কাউকে ‘পাগল’ বলাতা , কিন্তু একে কোনোভাবেই অপরাধ বলা যাবে না ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৪ ধারা, অর্থাৎ, শান্তি ভঙ্গের উদ্দেশ্যে অপমানের অধীনে । সাফ জানাল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এই ক্ষেত্রে হাইকোর্ট, মূলত উল্লেখ করেছে সুপ্রিম কোর্টের এক পুরোনো মামলা রায়ের । ওই মামলার রায়ে শীর্ষ আদালত এও বলেছিল, কোনও ব্যক্তির শান্তি নষ্ট করার অভিপ্রায়ে তাঁকে অপমান করা হলে তবেই ওই কাজকে অপরাধ বলে গন্য করা হবে ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ধারায়। কিন্তু, বর্তমান মামলায় পাগল বলাটা ছিল অনিচ্ছাকৃত স্বতঃস্ফূর্ত মন্তব্য। আবেদনকারী বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনেছিলেন মূলত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে, তার প্রেক্ষাপটেই ওই মন্তব্য করেছিলেন তিনি (আবেদনকারী)। এই ক্ষেত্রে, কোন ব্যক্তির শান্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্য ছিল, কিনা তা বলা যায় না।
বিচারপতি আরোও বলেন, “প্রায়শই, এই ধরনের মন্তব্যগুলি আকস্মিকভাবে করা হয় কোনও অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে। এমনকি এটা অংশও হতে পার একটা নৈমিত্তিক কথোপকথনেরও , যেখানে থাকে না মূলত ইচ্ছাকৃতভাবে শান্তি ভঙ্গের কোনও অপরাধ। যে কোনও ব্যক্তি এই জাতীয় মন্তব্য করলে, তা অভদ্র এবং অনুপযুক্ত বলা যেতে পারে। তবে এটা কোনো রকম অপরাধ বলে গণ্য হবে না ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৪ ধারার অধীনে।”
এই মামলার সূচনা হয়েছিল বারাণসী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। প্রতিবন্ধী এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা এক আইনজীবী, কিরণ সোসাইটি নামে এক সংস্থার বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপের অভিযোগ করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের নামে বিদেশ থেকে তহবিল নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। ওই সংস্থার পরিচালক এবং আরও দশজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্তকারীরা দুই পক্ষকেই এক বৈঠকে ডেকেছিলেন। সেখানেই ওই আইনজীবীকে কীরণ সোসাইটির পরিচালক পাগল বলে অপমান করেন বলে দাবি।
আর এরপরই তাঁর শান্তি ভঙ্গের জন্য তাঁকে অপমান করা হয়েছে বলে কিরণ সোসাইটির পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ওই আইনজীবী। ২০২১ সালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আইনজীবীর দায়ের করা আবেদন মেনে কীরণ সোসাইটির পরিচালককে দোষী সাব্স্ত করেছিলেন। এলাহাবাদ হাইকোর্টে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন কিরণ সোসাইটির ডিরেক্টর। হাইকোর্টে তিনি বলেন, ওই আইনজীবী তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অসার মামলা করেছেন। তাঁকে যে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করা হয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ নেই। হাইকোর্ট তাদের যুক্তি মেনে নিয়ে জানিয়েছে, নিছক কাউকে পাগল বলাটা ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে অপরাধ নয়।