অবশেষে বিজ্ঞপ্তি সদস্যপদ বাতিলের, এবার কি শেষ হতে বসেছে রাহুলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার? শুরু জোর জল্পনা
বেস্ট কলকাতা নিউজ : গতকালই বাতিল হয়েছে রাহুল গান্ধীর সাংসদ সদস্যপদ। সামনেই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন এবং তারপর ২০২৯ লোকসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না রাহুল গান্ধী? থেকে গিয়েছে এক বিরাট প্রশ্ন। তাহলে কী রাহুলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষের পথে? যদিও কংগ্রেসের তরফে আইনি ও রাজনৈতিক ভাবে সিদ্ধান্তের মোকাবিলা করার কথা বারে বারেই বলা হয়েছে। এখন রাহুলের সামনে বিকল্প কী? শুধু সহানুভূতি আদায় নয় সেই সঙ্গে পদ্মশিবিরকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে নির্বাচনে লড়াইও রাহুলের অন্যতম লক্ষ্য।
মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে সুরাটের আদালত। এই মামলায় তিনি অবশ্য জামিন পেয়েছিলেন। এরপর লোকসভা সচিবালয় তাকে সংসদ সদস্যপদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করে।
শুক্রবার কংগ্রেস নেতা এবং কেরালার ওয়ানাডের সাংসদ রাহুল গান্ধীর লোকসভা সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। লোকসভা সচিবালয় এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বৃহস্পতিবার রাহুলকে ‘মোদী উপাধি’ সম্পর্কিত মানহানির মামলায় সুরাটের একটি আদালত দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়।
লোকসভা সচিবালয় কী বলেছে ?
লোকসভা সচিবালয় এই বিষয়ে সাত লাইনের একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে যে কেরালার ওয়েনাডের লোকসভা সদস্য রাহুল গান্ধী, সুরাটের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে লোকসভার সদস্যপদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এই অযোগ্যতা তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার দিন থেকে অর্থাৎ ২৩ মার্চ, ২০২৩ থেকে প্রযোজ্য হবে। সংবিধানের ১০২ (১) (ই) এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১ এর 8 ধারা অনুসারে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, সুরাট আদালত ২০১৯ সালে রাহুল গান্ধীর ‘মোদী পদবী’ সম্পর্কে করা মন্তব্যের মামলার রায় দিয়েছে। আদালত তাকে ৫০৪ ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। তবে রায় কার্যকর করতে ৩০ দিনের সময় দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি তাকে তাৎক্ষণিক জামিনও দেওয়া হয়।
কেন মামলা : আসলে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়, কর্ণাটকের কোলারে একটি জনসভায় রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘সব চোরেদের পদবী কীভাবে মোদী’ই হয়?’ এ নিয়ে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন বিজেপি বিধায়ক ও গুজরাটের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেশ মোদি। তিনি অভিযোগ করেছেন যে রাহুল তার মন্তব্যের মাধ্যমে পুরো মোদী সম্প্রদায়ের মানহানি করেছেন। রাহুলের বিরুদ্ধে IPC ৪৯৯ এবং ৫০০ (মানহানি) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
প্রসঙ্গত, সুরাটের এক আদালত বৃহস্পতিবার তাঁকে ফৌজদারি মানহানির জন্য দোষী সাব্যস্ত করার পরে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর, এটার নেপথ্যে ১০ জুলাই, ২০১৩ সালে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের এক যুগান্তকারী রায়ের জেরে। তার আগে আইন ছিল, দোষী সাব্যস্ত সাংসদ, বিধায়ক, বিধান পরিষদ সদস্যদের সমস্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষ না-হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আসন ধরে রাখার অনুমতি পাবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত পাবেন, যতক্ষণ না সুপ্রিম কোর্টে তাঁরা দোষী সাব্যস্ত হন।
রাহুলের পরবর্তী পদক্ষেপ
সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের পর যে কোন আদালতে নেতা দোষী সাব্যস্ত হলেই আইনসভা-সংসদ মর্যাদা চলে যায়। এতে ওই ব্যক্তি আগামী ছয় বছরের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য হয়ে পড়েন। রাহুলের সাংসদ সদস্য পদ ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে । যদি তিনি উচ্চ আদালত থেকে স্বস্তি না পান, তাহলে রাহুল ২০২৪ এবং ২০২৯ লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
রাহুলের সামনে বিকল্প কী? রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য রাহুল গান্ধীকে ৩০ দিনের সময় দিয়েছে সুরাট আদালত। সাজার বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন রাহুল। সুরাট আদালতের রায় স্থগিত হলে তা রাহুলের জন্য হবে এক বিরাট স্বস্তি।
একই সঙ্গে রাহুলও লক্ষদ্বীপের সাংসদ মহম্মদ ফয়জলের মতো স্বস্তির আশা করতে পারেন। একটি মামলায় ফয়জলকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার আসনে উপনির্বাচনও ঘোষণা করা হয়। তবে হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত করে। এই রায়কে টেনে রাহুল গান্ধীও আদালতে লোকসভা সাধারণ সচিবালয়ের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন।