নতুন জামা নেই ছোটদের , আনন্দ নেই পরিজনদের মনেও ! পরিযায়ীদের পরিবার ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন উৎসবের মরশুমেও
বেস্ট কলকাতা নিউজ : শারোদৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। চারিদিকে উৎসবের আবহ। পুজো মণ্ডপগুলিতে আলোর রোশনাই। দিন কয়েক পর থেকেই বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা নতুন জামাকাপড় পরে আনন্দে মাতবে। তাঁদের পাতে পড়বে সুস্বাদু খাবার। কিন্তু এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই রয়েছে এমন কিছু পরিবার, উৎসবে যাদের ‘বাজে নাই বাঁশি, সাজে নাই গেহ’। উৎসবের আলোর ছটাতেও তাঁদের পরিবারে পড়ে বিষাদের ছায়া! কখনও অল্প খেয়ে বা না খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে বাচ্চারা। তো কোনও সংসারে স্বামীর অপেক্ষায় থাকা স্ত্রী লুকিয়ে চোখের জল মুছে নেন। আসলে ওদের পরিবারের লোকেরা পরিযায়ী শ্রমিক। অভাব অনটন তাঁদের পরিবারে নিত্যসঙ্গী। তাই রোজগারের আশায় বাড়ি ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ বেছে নিতে হয়েছে কারও ছেলেকে, কারও স্বামীকে বা কারও বাবাকে। তাঁদের অনেকেই পুজো ফিরতে পারবেন না বাড়িতে। তাই পরিবারের লোকেদের মন খারাপ।
কাটোয়া মহকুমায় বহু পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্যে পেটের টানে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত। অনেকেই নিজের গ্রামের নিজের পাড়ার দুর্গা পুজোয় এ বছর বাড়ি ফিরবেন না। কাটোয়ার শ্রীখন্ড গ্রামের বাথানতলা পাড়ার কালিদাস মাঝি। মাটির বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছোট ছোট ছেলে নিয়ে অভাবের পরিবার। অভিযোগ, কাজ না থাকায় মুম্বাইয়ে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে গিয়েছেন পাঁচ বছর আগে। এবারে বৃষ্টির জন্য কয়েক মাস কাজ না থাকায় রোজগারহীন হয়েই কাটাতে হয়েছে ওখানে। সবে মাত্র শুরু হয়েছে কাজ।তাই এবারের দুর্গা পুজোয় বাড়ি ফিরবেনা কালিদাস। সেভাবে রোজগার না হওয়ায় পুজোর সময় পরিবারে টাকা পাঠাতে পারেননি তিনি। তাই পুজোতে হয়নি স্ত্রী বা দুই ছেলের নতুন জামা কাপড়। স্ত্রী বুলটি মাঝির বলেছেন, “স্বামী এবারে টাকা পাঠাতে পারবে না। অভাবের সংসারে কোনও রকমে পেট চলে। সংসার চালাব না নতুন জামা কাপড় কিনব।অন্যদের দেখে ছেলেরা বায়না করলে পুরনো জামা পরিয়ে পুজো মন্ডপে পাঠাব তাদের।”
এই পাড়ারই আর এক পরিযায়ী শ্রমিক মধু মাঝি। তিনিও নির্মাণ শ্রমিকের পেশায় রয়েছেন মুম্বইয়ে। তিনিও ফিরবেন না এ বছরের পুজোতে। বৃষ্টির জন্য রোজগার না থাকায় মধু মাঝিও পুজোর জন্য টাকা পাঠাতে পারেনি পরিবারে। গ্রামে মাটির বাড়িতে থাকে স্ত্রী ও ছেলে। পাড়ায় অন্যরা যখন পুজোর কটা দিন আনন্দে কাটবে তখন স্বামী বাড়িতে ফিরে না আসার বেদনায় বাড়িতেই দিন কাটবে মধুর স্ত্রীর। মন খারাপ ছেলেরও। মধু মাঝির স্ত্রী টুকি মাঝি বলেছেন, “স্বামী এবারের পুজোয় বাড়ি ফিরবে না। গত কয়েক মাস কাজ না হওয়ায় রোজগার হয়নি। এবারে পুজোর জন্য টাকাও পাঠাতে পারবে না। কোনও রকমে এখানে আমাদের দিন কাটছে। পুজোয় পাড়ার অন্যরা আনন্দ করলেও আমাদের কিছু করার নেই। টাকা নেই তাই নতুন শাড়ি বা ছেলের জামা কিছুই হবে না।”