বাংলার গর্ব! , ‘পদ্মশ্রী পেলেন দু’টাকার মাস্টার মশাই তথা বাংলার শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায়
বেস্ট কলকাতা নিউজ : বর্ধমানের শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায় পেলেন ২০২১-এর পদ্মশ্রী সম্মান। তাঁকে ওই বিশেষ সম্মান জানানো হল শিক্ষায় অসামান্য অবদানের জন্য। সম্প্রতি তিনি ‘বছরের বেস্ট’ হয়েছেন আনন্দবাজার ডিজিটালের বিবেচনায়। পদ্মশ্রী পাওয়ার খবরে আপ্লুত ‘মাস্টারমশাই’ এও বলেন, ‘‘প্রথমে তো বিশ্বাসই হয়নি! ওঁরা গ্রামাঞ্চলের এক জন মাস্টারমশাইয়ের কথা ভেবেছেন, আমি কৃতজ্ঞ।’’বর্ধমানের আউশগ্রামের রামনগরে সুজিত বাবু দীর্ঘ দিন ধরে ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’ চালান। সেই পাঠশালায় পড়ে প্রায় ৩০০ পড়ুয়া। পড়ুয়া পিছু ‘গুরুদক্ষিণা’ বছরে মাত্র ২ টাকা। সঙ্গে চারটি ছোট চকোলেট।
আইএএনএস-এর সাথে কথা বলার সময় সুজিত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে তাঁর জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মানিত হওয়া। তিনি এও বলেন, “আমার শিক্ষার্থীদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে গেছে যে পুরস্কৃত করা হয়েছে এমনকি আমাদের স্কুলকেও । আমি একজন শিক্ষক এবং অবসর নেওয়ার পরেও শেষ হয় না একজন শিক্ষকের দায়িত্ব। তাই আমি পড়াই আমার এলাকার গরিব শিশুদের।” রামনগর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক সুজিত বাবু । অবসর নেন প্রায় ৪০ বছর স্কুলে পড়ানোর পর। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের গরিব-দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের প্রায় বিনামূল্যে প্রাইভেট টিউশন দেন গত ১৮ বছর ধরে। পড়ান এমনকি নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পাশাপাশি প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদেরও। তাঁর পাঠশালার ৮০ শতাংশই ছাত্রী।
পড়ুয়াদের যাদের মোবাইল আছে, মাস্টারমশাই লকডাউনের সময়ে এমনকি তাদেরও পড়িয়েছেন। এমনকি চার দফায় ৭৫ হাজার টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দিয়েছেন লকডাউনের জেরে কর্মহীন আড়াইশো পরিবারের হাতেও। এদিকে গ্রামের ৭ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর পাশেও আছেন সুজিত বাবু। বছরে এক বার ৫ হাজার করে টাকা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও তুলে দেন তাদের হাতে। কর্মকাণ্ডের সবটাই চলে ‘মাস্টারমশাই’য়ের পেনশনের টাকায়।সুজিতবাবুর যৌথ পরিবার। সংসারে রয়েছেন স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিরাও। সুজিতের একমাত্র ছেলে কাজ করেন কালনায় এসডিও অফিসে।সুজিতবাবুর মেয়ের ধানবাদে বিয়েও হয়েছিল। কিন্তু জামাই মারা গিয়েছেন। নাতি-নাতনিদের পড়াশোনাও এমনকি সুজিতবাবুর দায়িত্ব।