খোদ প্রণব মুখোপাধ্যায়ও আস্থা হারিয়েছিলেন রাহুল গান্ধীর ওপর ! ফাঁস হল বিশাল সিক্রেট , ব্যাপক তোলপাড় জাতীয় রাজনীতিতে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : রাহুলের ওপর আস্থা হারিয়েছিলেন খোদ প্রণব মুখোপাধ্যায়! এমনই এক ঘটনার কথা সম্প্রতি সামনে এসেছে। যা জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলেছে। প্রণব কন্য শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘Pranab, My Father – A Daughter Remembers’-বইয়ে উল্লেখ করেছেন কেন প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা অন্যতম সিনিয়র কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় রাহুল গান্ধীর ওপর আস্থা হারিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন মনমোহন সিংয়ের সরকার একটি অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল। কিন্তু, সেই অধ্যাদেশ ছিঁড়ে ফেলে বিক্ষোভ দেখান রাহুল। কংগ্রেসে তাঁর সমর্থকরাও এই বিক্ষোভে শামিল হয়েছিল। যার জেরে সরকার অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্সটি ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। চূড়ান্ত অপমানিত হয়েছিলেন মনমোহন সিং।
প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্য শর্মিষ্ঠা মুখার্জির প্রণব, মাই ফাদার: এ ডটার রিমেম্বার্স বইটি রীতিমত তোলপাড় ফেলেছে জাতীয় রাজনীতিতে। তাঁর বাবার উপর লেখা বইটিতে তিনি অনেক চমকপ্রদ তথ্য তুলে ধরেছেন। সেই সকল তথ্য কংগ্রেসের মধ্যেই রাজনৈতিক আলোড়ন তৈরি করেছে। শর্মিষ্ঠা মুখার্জি বুধবার বলেছেন যে তাঁর বাবা প্রণব মুখোপাধ্যায় রাহুল গান্ধীর ২০১৩ সালের মনমোহন সরকারের আনা অধ্যাদেশের একটি অনুলিপি ছিঁড়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় রীতিমত অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় এই বিষয়ে রাহুল গান্ধীর সমালোচনাও করেছিলেন।
লিলি থমাস বনাম ভারত সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে, ‘কোনও সাংসদ, বিধায়ক বা বিধান পরিষদ সদস্য, যিনি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং ন্যূনতম ২ বছরের সাজা পেয়েছেন, তিনি অবিলম্বে সংসদের সদস্যপদ হারাবেন।’ শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশ জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ৮(৪)-কে ‘অসাংবিধানিক’ তকমা দিয়ে বাতিল করেছিল। আগের আইন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দোষমুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে উচ্চ আদালতে আবেদনের জন্য তিন মাসের ছাড় দিয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের দুই মাস পরে, ইউপিএ সরকার নির্দেশটি বাতিল করার জন্য একটি অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স পাস করেছিল। কারণ, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে কংগ্রেসের মিত্র তথা আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদবের সাংসদপদ খারিজ হতে পারত। পাশাপাশি, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং রাজ্যসভার সাংসদ রশিদ মাসুদ সেই সময় একটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। আর, সাংসদ পদ খারিজের মুখে পড়েছিলেন। তাই, ইউপিএ সরকার সেই সময় অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশটি পাশ করেছিল বলে মনে করা হয়।
এই অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশটি পাশ হওয়ার কয়েকদিন পরে, ২৭ সেপ্টেম্বর রাহুল দিল্লিতে দলের এক সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন।সেই সাংবাদিক বৈঠক ছিল অত্যন্ত চমকপ্রদ এবং নাটকীয়। সেই সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সহকর্মীদের রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেন রাহুল। তিনি প্রকাশ্যে ইউপিএ সরকারের অধ্যাদেশের তীব্র নিন্দা করেছিলেন। সেই অধ্যাদেশকে ‘সম্পূর্ণ অর্থহীন’ বলে অভিহিত করেছিলেন। সঙ্গে বলেছিলেন যে এই অধ্যাদেশ, ‘ছিঁড়ে ফেলা উচিত’।
শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় এপ্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গোটা ঘটনা নিয়ে তাঁর বাবা মোটেও খুশি ছিলেন না। তিনিই তার বাবাকে অর্ডিন্যান্সের ঘটনাটি জানিয়েছিলেন, তার পরে তিনি খুব ক্ষুব্ধ হন। তার মুখ লাল হয়ে যায় এবং তিনি চিৎকার করতে থাকেন। শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাহুল যেভাবে প্রতিবাদ করেছিলেন তাতে তিনি অবাক হয়েছিলেন… বিশেষ করে মনমোহন সিং (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং) বিদেশে থাকাকালীন কীভাবে রাহুল সেই অধ্যাদেশ ছিঁড়ে ফেলেন তা নিয়ে রাহুলের ওপর আস্থা হারিয়েছিলেন তিনি”। একই সঙ্গে তিনি বলেন ওঠেন, ‘মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করার তিনি কে? প্রধানমন্ত্রী বিদেশে আছেন। তিনি কি এটাও বুঝতে পারছেন যে তার কর্মকাণ্ড প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের ওপর প্রভাব ফেলবে? তার কী অধিকার আছে প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে অপমান করার?’
শর্মিষ্ঠা আরও বলেন, এমন অনেক ধরনের ঘটনা রয়েছে যা তাঁর বাবা প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে রাহুল গান্ধী “এখনও রাজনৈতিকভাবে পরিণত নন”। তিনি বলেন, “…বিশেষ করে ২০১৪ সালের পর যখন বিজেপির কাছে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের পরও রাহুল গান্ধীর অনুপস্থিতিতে বাবা বিশ্বাস করেছিলেন “আমরা যুদ্ধে হেরে যাচ্ছি।”
বইটিতে ২০০৪ সালে কংগ্রেসের জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তাঁর নাম বিবেচনা না করার বিষয়ে প্রণব মুখার্জির প্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। “ইউপিএ-১ এর সময় আমি একদিন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘বাবা, আপনি কি প্রধানমন্ত্রী হতে চান?’ তিনি বললেন, ‘অবশ্যই। যে কোনো যোগ্য রাজনীতিবিদ এটা চান… এর মানে এই নয় যে আমি প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাব।’ শর্মিষ্ঠা তখন বাবার কাছে জানতে চান, ‘আপনি সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে কথা বলছেন না কেন?’ তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘কী বিষয়ে কথা বলব?’
শর্মিষ্ঠা মুখার্জি এপ্রসঙ্গে বলেন, “তিনি আমাকে একবার বলেছিলেন, ‘রাজনীতির জগতে সবাই তাদের স্বার্থ রক্ষা করে চলে এবং সনিয়া সম্ভবত এমন কাউকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে তার পরিবারকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন যে তাকে চ্যালেঞ্জ করবে না।” শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি চ্যালেঞ্জ করবেন?” তারপর তিনি চতুরতার সাথে বিষয় পরিবর্তন করে বললেন, “সেটা প্রশ্ন নয়।” বিষয় হল যে ‘তিনি ভেবেছিলেন আমি এটা করতে পারি’। শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় আরও বলেছেন যে ‘বাস্তব হল প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত না হওয়ার পরেও সনিয়া গান্ধী বা ডাঃ মনমোহন সিংয়ের সাথে বাবা প্রণবের সম্পর্কের মধ্যে কোনও তিক্ততা ছিল না’।