সাহেব ডাকাতরা ছিল কলকাতার চরম আতঙ্ক! কুখ্যাত এই গ্যাং হানা দিয়েছিলো এমনকি বিখ্যাত শীলবাড়িতেও
বেস্ট কলকাতা নিউজ : কলকাতার ধনী ব্যবসায়ী চৈতন্য শীলের বাড়িতে ১৭৯৫ সালের ২৯ জানুয়ারি ডাকাত পড়েছিল। সেই সব ডাকাত আবার সাধারণ ডাকাত নয়। এক্কেবারে সাহেব ডাকাত। যাদের আবার পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এক ভারতীয়। সেযুগের ভাষায় নেটিভ। এই চৈতন্য শীলেরই ছেলে হলেন সমাজসেবী মতিলাল শীল। যিনি উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ধনসম্পত্তির বিচারে আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন ‘মাল্টিমিলিয়নেয়ার’।
এই ডাকাতির মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। যার বিচার চলেছিল বিচারপতি জন হাইডের এজলাসে। বিচারপর্বে অভিযুক্তদের একজন রাজসাক্ষী হয়েছিল। আদালতে ওই রাজসাক্ষী জানিয়েছিল, ‘আমাদের ডাকাতদলে ইউরোপিয়ান আছে, পর্তুগিজ আছে, ইতালিয়ান লোক আছে। আরও নানান দেশের লোক আছে। সব মিলিয়ে আমরা সংখ্যায় প্রায় ২০০।’ সাহেব ডাকাতদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, শহর কলকাতার এক অবাঙালি। নাম রামমোহন লাল। এই রামমোহন নাকি পর্তুগিজ ভাষাটা খুব ভাল জানত। সেই ভাষাতেই ডাকাতদের সঙ্গে কথা বলত।
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলা হয়েছে, বর্তমানে ভারতে জেলবন্দি অপরাধীদের এক তৃতীয়াংশ বিদেশি বন্দি। যারা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংশোধনাগারে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র তথ্য অনুযায়ী, সংখ্যাটা ১,৭০০-র বেশি। এই বন্দিদের বেশিরভাগই প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে ২,২০০ কিলোমিটার সীমান্ত পেরিয়ে আসা লোকজন। বাকিরা মায়ানমার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, চিন, আফ্রিকার অন্যান্য কিছু দেশের বাসিন্দা। পুরোনো সোভিয়েত ইউনিয়নের অঞ্চলের নাগরিকও এই বন্দি তালিকায় আছে।
যা দেখে বলা যায়, বাংলায় বিদেশি অপরাধীদের আসার ‘ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে’! চৈতন শীলের বাড়িতে যে ‘আন্তর্জাতিক’ ডাকাতদল হানা দিয়েছিল, কলকাতায় সেসময় এমন ‘গ্যাং’ ছিল একাধিক। উদাহরণ, ১৭৮৯-এর ২১ অক্টোবর কলুটোলার চৈতন্য দত্তের বাড়িতে বাঙালি আর পর্তুগিজ মিশ্রিত এক গ্যাং-এর দুঃসাহসিক ডাকাতি। ডাকাতরা শুধু ৬,০০০ টাকা লুঠ করেই ক্ষান্ত হয়নি, নির্মম প্রহার করে প্রায় প্রাণে মেরেও ফেলেছিল দত্তবাবুকে। কীসের টানে কলকাতায় হানা দিত সাদা চামড়ার এই অপরাধীরা? সহজ উত্তর, তৎকালীন কলকাতার সম্পন্ন চেহারা এবং শহরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব। ভাগ্যের সন্ধানে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ তখন ভিড় জমাতেন ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের রাজধানীতে। এঁদের একটা বড় অংশ ক্রমে ঝুঁকে পড়ত অপরাধ জগতে।