অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে বিপিন রাওয়াতের, সেনায় ‘প্রলয়’ আসছে চিনকে চাপে রাখতে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : ভারতের মাটিতে প্রথমবার হাতে-কলমে পরীক্ষা হয়ে গেল এস-৪০০ মিসাইল ডিফেন্সের। আলাদা, আলাদা পরিস্থিতিতে কেমন কাজ করছে ভারতের দুই প্রধান অস্ত্র? তারও পরীক্ষা হয়ে গেল। কেন এই পরীক্ষা? আচমকাই শক্রু যাবতীয় শক্তি নিয়ে হামলা চালালে কী হবে? সেই হামলা রুখতে কতটা তৈরি আমরা? নিজেদের প্রস্তুতি বুঝতেই পরীক্ষায় নামে ভারতীয় সেনা। পরীক্ষা মানে সেনা মহড়া। সূত্রের খবর, উত্তর-পূর্বের বেশ কয়েকটি এলাকায়, ৮টি প্রতিকূল ও সংবেদনশীল অঞ্চলে পাঁচদিনের সেনা মহড়া হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই সেনা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জায়গাগুলির নাম গোপন রেখেছে।
সোজা কথায় এই প্রথম ভারতের মাটিতে কোনও মহড়ায় এস-৪০০-এর কার্যকারিতা দেখা হল। দেখা হল আচমকা শক্তিশালী মিসাইল হানার হলে এস-৪০০ কতটা তা প্রতিহত করতে পারছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাও অনেকটা ঠিক করে ফেলল সেনা। সেটা হল, উত্তর- পূর্বে ভারতের জমি ও আকাশ পাহারার রূপরেখাটা ঠিক করা। সেনা সূত্রে খবর, মহড়ায় আরও একবার প্রলয় নিজেদের গুরুত্ব বুঝিয়েছে। তাই চিন সীমান্তে ব্রহ্মসের পাশাপাশি প্রলয় মোতায়েনের সুপারিশ করতে চলেছে সেনা। ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি প্রলয় চিনের ভিতরে ঢুকে আঘাত করতে পারে। সেটা ব্রহ্মস বা অগ্নি সিরিজের মিসাইলও পারে।
তবে প্রলয় একটা জায়গায় এদের থেকে এগিয়ে। প্রলয়কে ইন্টারসেপ্ট করা সহজ নয়। বলা ভাল, কাজটা বেশ কঠিন। সেনার ভাবনা, চিন সীমান্তে প্রলয়, ব্রহ্মস ও অগ্নিকে নিয়ে মিসাইল ডিভিশন তৈরি করা। ভারতের এই ত্রয়ী সেক্ষেত্রে চিনের যাবতীয় হামলার জবাব দিতে তৈরি থাকবে। সূত্রের খবর, এমন একটি মিসাইল ডিভিশনের ভাবনা ভারতের প্রয়াত চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতের। ইউনিফায়েড কম্যান্ডের মতোই। তিনিই প্রথম প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে জানিয়েছিলেন, চিন ও পাক সীমান্তে দুটি ফ্রন্টের কথা ভেবে মিসাইল ডিভিশন তৈরি করতেই হবে।
সূত্রের খবর, আগামী দু – তিন বছরে জেনারেল রাওয়াতের সেই ভাবনা ও স্বপ্ন সফল হতে চলেছে। ভারতের সেনায় যুক্ত হতে চলেছে রকেটফোর্স বি ডিভিশন। আর সেখানে ব্রহ্মস, অগ্নির পাশাপাশি থাকবে প্রলয়। প্রলয় তুলনায় কম রেঞ্জের মিসাইল? ব্রহ্মস ও অগ্নি- ৫’র তুলনায় তো বটেই। জেনারেল রাওয়াতই প্রথম বলেছিলেন, কম রেঞ্জের হলেও প্রলয় ম্যাজিক দেখাতে পারে। বিশেষত চিন ও পাক সীমান্তে সংঘর্ষের ক্ষেত্রে প্রলয় বিরাট ভূমিকা নিতে পারে। তাঁর উদ্যোগে প্রলয় মিসাইলে বেশ কিছু পরিবর্তন আনার কাজ শুরু হয়। ঘণ্টায় ২ হাজার কিলোমিটার গতিতে ৫০০ কিমি দূরের টার্গেটে নিখুঁতভাবে আঘাত করতে পারে প্রলয়। এটি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কেজি পে-লোড বহনে সক্ষম। তবে প্রলয়কে ইন্টারসেপ্ট করার সম্ভাবনা ৯২ শতাংশেরও কম। উপরন্তু প্রলয় শত্রুর মিসাইলকে ফাঁকি দিয়ে টার্গেটে হিট করতে পারে। এই ক্ষমতা খুব কম মিসাইলেরই আছে। এই জন্যই প্রলয় মিসাইলকে এতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন জেনারেল রাওয়াত। মহড়া শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার ওড়িশার উপকূল থেকে প্রলয়ের আধুনিক ভার্সনটির পরীক্ষা করে সেনা। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে এক সেনা আধিকারিক বলেছেন, এই ভার্সনটিও পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ সফল।
সবমিলিয়ে দীপাবলির আগে স্বস্তি দেওয়ার মতো খবর। আরও একটা খবর আপনাদের জানা দরকার। উত্তর পূর্বে সামরিক বিমান অবতারণের সমস্যার কথা মাথায় রেখে একটা চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছিল সেনা। তা হল অসামরিক বিমান ঘাঁটিতেও সামরিক বিমান নামানোর পরিকাঠামো তৈরি করা। সেই কাজ কতটা এগিয়েছে, সেটাও হাতেকলমে দেখে নিতে চেয়েছিল বায়ুসেনা। মহড়ার সময় সেটাও যাচাই করা হয়েছে। প্রয়োজনে অ্যাডভান্স ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড তৈরি করার প্রস্তুতিও হাতে নেয় সেনা। সেই সংক্রান্ত প্রস্তুতিও খতিয়ে দেখা হয়েছে।