এ যেন এক অভূতপূর্ব তৎপরতা! জোর চর্চায় কোপাই বাঁচাতে বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের সাড়া জাগানো এই প্রয়াস

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : “আমাদের ছোট নদী চলে আঁকেবাঁকে / বৈশাখ মাসে তাঁর হাঁটু জল থাকে”। কোপাই নদীকে নিয়েই এই পদ্য লিখেছিলেন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এমনকি কোপাই নদীর কথা রয়েছে সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস জুড়েও। হাঁসুলি বাঁকের উপকথা মূলত এই কোপাই নদীকে ঘিরেই।

কিন্তু বর্তমানে রবীন্দ্রনাথ, তারাশঙ্করের কোপাই নদী আর ভালো নেই। দিনের পর দিন নদীর পার দখল করে গজিয়ে উঠছে এমনকি একের পর এক হোটেল, রেস্তোঁরা। এখন আবার মন্দিরের নামে গজিয়ে উঠছে অট্টালিকা। অবশেষে কোপাই নদী বাঁচাতে নদীর তীরে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছিলেন এমনকি শান্তিনিকেতন খোয়াই সাহিত্য সংস্কৃতি সমিতি। তাঁরা জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জমি দখলের কথা জানিয়েছেন এমনকি মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়েও।

কোপাই বাঁচাতে অবস্থান বিক্ষোভে অধ্যাপকরা

উল্লেখ্য , শান্তিনিকেতনের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে এই কোপাই নদী। আঞ্চলিক নাম শাল নদী। এটি মূলত ময়ূরাক্ষী নদীর একটি উপনদী। রবীন্দ্রনাথের লেখনিতে আমরা কোপাই নদীকে পাই প্রতিবেশিনী কোপাই নদী হিসেবে। বর্তমানে সেই কোপাই নদীর ব্যাপকভাবে অবৈধ নির্মাণ চলছে পাড় দখল করে । এভাবে দিনের পর দিন কোপাই নদী দখল করে নির্মাণ কাজ চলতে থাকলে আর নদীর কোনোই অস্তিত্বই থাকবে না আগামী দিনে, এমনই আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে দিন-দিন।

মূলত , কোপাই নদীর জলের উপর নির্ভর করেন স্থানীয় মানুষজন। নদীতে গ্রীষ্মকালে জল পান করে গৃহপালিত পশুও। এখন চরম দূরবস্থা সেই নদীরই । নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি, মাটি তোলা চলছে ক্রমাগত । কোপাই নদীকে বাঁচাতে নদীর তীরে চরম অবস্থান বিক্ষোভও চলে বিশ্বভারতীর পাঠভবনের অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে। সেখানে সামিল হয়েছিলেন এমনকি বিশ্বভারতীর অধ্যাপক, কর্মী, পরিবেশবিদ অনেকেই।

কোপাই নদীর পাড়ে এমনই সব নির্মাণ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

বিশ্বভারতীর পাঠভবনের অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, “কোপাই নদী রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের নদী। শান্তিনিকেতনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে কোপাই নদী বেশ পছন্দের। কবিগুরু তাঁর লেখনিতে কোপাই নদীকে প্রতিবেশিনী নদী হিসাবে বর্ণনা করেছেন। সেই নদীকে বাঁচাতে আমাদের অবস্থান। জানি না কার মদতে কোপাই নদী দখল করে গজিয়ে উঠছে রেস্তোঁরা, অট্টালিকা। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে মানুষ বাঁচতে পারে না। আদিবাসী গ্রামের মানুষজন এই নদীতে স্নান করেন। তাঁদের গবাদি পশুকে স্নান করান।”

তিনি আরও বলেন, “এরকম একটা নদীকে লোপাট করে সংস্কৃতি বেঁচে থাকতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত বিষয়টি জানেন না। আমরা একশোজন অধ্যাপক-অধ্যাপিকার সাক্ষরিত অভিযোগপত্র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাব। জেলাশাসক, বিশ্বভারতীর ছাত্র মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার কাছেও প্রতিলিপি জমা দেব। আমাদের লক্ষ্য কোপাই নদী বাঁচানো”। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মলয় মুখোপাধ্যায় এও বলেন, “রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের নদীকে বাঁচাতেই এই অবস্থান আমাদের। কোপাই নদীকে বাঁচাতেই হবে আমাদেরকে ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *