ক্রমশ সন্দেশখালি ফুঁসছে, সেই আবহেই মুখ্যমন্ত্রীর বড় হুঙ্কার বাঁকুড়া জেলা সফরে গিয়ে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : বিরোধীদের নজরে সন্দেশখালি। বাম আমলের সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের ঘটনার সঙ্গে বিরোধী দলের নেতৃত্ব সন্দেশখালির তুলনা করতে মরিয়া। বাম শাসনের সময় সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আন্দোলনে ভর করেই ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতন হয় ২০১১ সালে। রাজ্যপাটে বদল ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। বছর ১৩ পরে সেই মমতা প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের অভিযোগ উঠছে। বঙ্গ রাজনীতিতে তুমল চর্চায় এখন সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতাদের ‘দমনপীড়ন’-এর কাহিনী। এই আবহেই বুধবার বাঁকুড়া থেকে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘যারা যারা বড় কথা বলে বেড়াচ্ছে, খুলব ভান্ডার?’ সন্দেশখালির নাম মুখে না আনলেও আদতে যে মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করে দিলেন তা স্পষ্ট।

বাঁকুড়ার সভা থেকেঠিক কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী?

সিঙ্গুর হল সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম নন্দীগ্রাম, খাতরা খাতরা বিষ্ণুপুর বিষ্ণুপুর। এক এক জায়গার এক একটা জায়গার আলাদা আলাদা চেহারা মনে রাখবেন, একটার সঙ্গে আর একটার তুলনা করে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিয়ে ভুল করবেন না। আশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। কোথাও রক্ত ঝরুক আমি চাই না।’

‘যারা যারা বড় কথা বলে বেড়াচ্ছে, খুলব ভান্ডার? ভান্ডারে কিন্তু অনেক কিছু জমা আছে। ভান্ডার যখন খুলব তখন বুঝতে পারবেন কোনটা ভুল কোনটা ঠিক। আমি জ্ঞানত কোনও ভুলকে প্রশ্রয় দিই না। যখন জানতে পারি সবরকম সাহায্য করি। হিংসা ছড়িয়ে ভুল করবেন না।’
‘ভাল কথা বললে শুনবেন। খারাপ কথা শুনবেন না। তাহলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। চিরসবুজ থাকতে হলে মনে রাখবেন, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা তৃণমূল সরকারই ভরসা।’

‘সারি এবং সারনা ধর্মকে স্বীকৃতি না দিলে আমরা বড় আন্দোলন করব। কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছি। কুর্মী সম্প্রদায় কোথায় থাকে তার একটা সমীক্ষা করছি। আদিবাসী শংসাপত্র নিয়েও সমস্যা দূর হবে দুয়ারে সরকারে অভিযোগ করলে।’

‘বিজেপি শাসিত রাজ্যে আদিবাসীদের উপর অত্যাচার হয়। আমরা আদিবাসীদের উপর অত্যাচার হতে দেব না। আমরা আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আইন করেছি। আমরা আদিবাসীদের জমি দখল করতে দেব না।’

‘পাগড়ি দেখলেই খলিস্তানি আর মুসলমান দেখলেই পাকিস্তানি? আর তোমরা কী?’
‘বাঁকুড়ায় দু’টি আসনে গতবারও জিতে গিয়েছে বিজেপি। তার পরে আর ওদের দেখেছেন? এ বার আবার ভোটের আগে আসবে গ্যাসবেলুন ফোলাবে। ওই গ্যাসবেলুনে ফুটো করে দিতে হবে।’

‘আদিবাসীদের ধর্মের একটা কোড আছে। আপনি আপনার নিয়ম মতো বিয়ে করেন। হিন্দু, মুসলিম দের আলাদা কোড আছে। ওরা বলছে ইউনিভার্সাল সিভিল কোড করতে হবে। মাংস খাওয়া যাবে না। মাছ খাওয়া যাবে না। কী পোশাক পরবে মেয়েরা, সব ওরা ঠিক করে দেবে। এসব মানব না।’

‘নারীশিক্ষা, কোথায় গেল বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও। আমাদের কন্যাশ্রী সারা পৃথিবী জয় করেছে। আমাদের দেখে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করছে। তাও পরিবারের এক জন। আমরা সবাইকে দিই। পরিযায়ীদের জন্য স্বাস্থ্যসাথী। মৎস্যজীবীদের পাঁচ হাজার টাকা কর বছরে ২ মাস।’

‘বিজেপি বলে বেড়ায় আমি দিচ্ছি তুমি কি দিচ্ছ? নির্বাচন এলে উজালা। নির্বাচনের পরে ওটা হাজোলা, বিজোলা। ভোটের আগে ব্যাঙ্কে ১৫ লক্ষ টাকা। এক হাজার টাকার গ্যাসে ফুটছে বিনা পয়সার চাল। নির্বাচন এলে গ্যাসের দাম ২০০ টাকা কমিয়ে দেয়। নির্বাচন পেরোলে ৪০০ টাকা বাড়িয়ে দেয়। কেরোসিনের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে।’

‘একশো দিনের কাজের টাকা দেয় না। তারা গরীব লোক। পোর্টাল সেন্ট্রাল গর্ভমেন্টের। পোর্টাল আমাদের ছিল না। তাই কত মানুষ টাকা পায়নি তা জানা ছিল না। আসলে টাকা না পাওয়া লোকের সংখ্যা ২১ লাখ নয় ৬৯ লাখ। খাটিয়ে নিয়ে পয়সা দেয়নি। তাঁদের বঞ্চিত করেছে।’

উল্লেখ্য , প্রায় গত দু’মাস ধরে ব্যাপক উত্তপ্ত সন্দেশখালি। একদিকে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে যখন জমি লুঠ করার মতো অভিযোগ , তখন অপর দিকে মহিলাদের সম্মানহানির বিরুদ্ধে লাঠি, ঝাঁটা হতে সরব হয়েছে গ্রামের মা-বোনেরাও । যা দেখে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘সন্দেশখালির মানুষ বশ্যতা বিরোধী সংগ্রামে নেমেছেন। নন্দীগ্রামে যে যে কারণে মানুষের ক্ষোভ ছিল এখানে সেসব সব ক’টা কারণই রয়েছে। ওখানে জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা দিয়ে শুরু হয়েছিল। এখানে নারীদের ওপর, মায়েদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ প্রথম সংগ্রাম করেছে। এছাড়া জমি দখল একটা বড় ইস্যু। আর এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানুষ কোনও ভোট দিতে পারেনি। লোকসভা – বিধানসভা নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি। কার্ড নিয়ে নেওয়া হত। ভোট লুঠ, গণতন্ত্র হত্যা, সীমাহীন নারী নির্যাতন আর জমি দখল, এই তিনটে বড় ইস্যু নিয়ে বশ্যতাবিরোধী সংগ্রাম হচ্ছে।’ মনে করা হচ্ছে এ দিন শুভেন্দুরই মন্তব্যের জবাব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বেস্ট কলকাতা নিউজ : ক্রমশ সন্দেশখালি ফুঁসছে, সেই আবহেই মুখ্যমন্ত্রীর বড় হুঙ্কার বাঁকুড়া জেলা সফরে গিয়ে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *