ঘোড়সওয়ার পুলিশ কেন থাকে শুধু কলকাতার ময়দানেই ? এক অবাক করা কাহিনী রয়েছে নেপথ্যে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : ঘোড়সওয়ার পুলিশদের কলকাতা ময়দানেই কেন দেখা যায় , কখনো ভেবে দেখেছেন কি? কি কাজ করে এই পুলিশ ঘোড়ারা? জানেন কি, এই ঘোড়াদের ডিউটি করতে হয় রীতিমতো রোস্টার মেনে? চলুন এবার কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের গল্প জেনে নেওয়া যাক। কলকাতা পুলিশ কমিশনারেট চালু হয় মূলত ১৮৫৬ সালে। ১৮৪০ সালে কলকাতা পুলিশের অশ্বারোহী বাহিনী তৈরি হয় তারও ১৬ বছর আগে । তখন শহরের রাস্তায় মারপিট-দাঙ্গাহাঙ্গামা থামাতে পুলিশ ঘোড়ায় চড়ে টহল দিত। এই বাহিনীর পোশাকি নাম ছিল মাউন্টেড পুলিশ। প্রথমে এই বাহিনীতে ছিল মাত্র তিনটি ঘোড়া। ১৮৪২ সাল নাগাদ ময়দান এলাকা জুড়ে হঠাৎই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল ঠগ, চোর, কোম্পানির বদমেজাজি সৈন্যদের উপদ্রব। সেই বছর থেকেই ঘোড়সওয়ার বাহিনীর ওপর ময়দানে টহলদারির দায়িত্ব বর্তায়। তিন থেকে এক ধাক্কায় বেড়ে বারো হয় ঘোড়ার সংখ্যা । ঘোড়া-পুলিশদের দাপটে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া ময়দান চত্বর রাতারাতি ঠান্ডা হয়ে যায় । সে সময়ে যানবাহন কম থাকায় অনেক সহজ ছিল মাউন্টেড পুলিশের দাপুটে চলাফেরা।

বিপদে-আপদে এই ঘোড়সওয়ার পুলিশ বাহিনীই ঘটনাস্থলে সবার আগে পৌঁছত । তাদের দুরন্ত সাফল্যের কারণে একসময় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মাউন্টেড পুলিশের সঙ্গেও তুলনা করা হতো কলকাতার এই বাহিনীর। বর্তমানে এই বাহিনীতে ৬৭টি ঘো়ড়া রয়েছে। এক সময়ে বিলেত থেকে ঘোড়া আসত কলকাতা পুলিশে। স্বাধীনতার পরে ঘোড়া আসত দিল্লি, হরিয়ানা, পুণের খামার থেকে । ওদের দিন শুরু হয়ে যায় ভোরে সামান্য নাস্তার পরেই । কাউকে পিঠে সওয়ারি চাপিয়ে বেরোতে হয় টহলদারিতে। কেউ আবার চলে যায় কসরত করতে। ডিউটি, কসরত শেষে তারা এস এন ব্যানার্জি রোডে বাহিনীর সদর দফতরের আস্তাবলে ফিরে আসে। আস্তাবলেই বিরাট এক বালির বিছানা করা রয়েছে ওদের জন্য। ওই বালিতে গড়াগ়ড়ি দিয়ে পুলিশ-ঘোড়ারা ঘাম শুকিয়ে নেয়। তার পরে ছোলা, ভুসি আর ঘাসে পেট পুজো সেরে সামান্য জিরিয়ে নেওয়া। ফের রোস্টার মেনে ডিউটিতে বেরনো। নিয়মিত ডাক্তার ওদের স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করেন।

এক সময়ে পুলিশের যাতায়াতের মূল বাহন ছিল এই ঘো়ড়াই । যানবাহন সামলানো বা আইনশৃঙ্খলা, উর্দিধারীরা শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াতেন ঘোড়ায় চেপেই । এখন অবশ্য ময়দানেই সীমাবদ্ধ ঘোড়সওয়ার পুলিশের কাজ। কুচকাওয়াজ কিংবা গার্ড অব অনার দেওয়াতেও এই বাহিনী অপরিহার্য। দায়িত্ব কমলেও কদর কমেনি মাউন্টেড পুলিশের সকাল-বিকেল তাই এস এন ব্যানার্জি রোডের আস্তাবল থেকে খট-খট খুরের শব্দ পেলেই যানবাহন আজও থমকে যায়। পথচলতি মানুষ তাদের দাঁড়িয়ে দেখেন এমনকি সম্ভ্রমের দৃষ্টিতেই ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *