বাংলার হরপ্পা আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের হাতছানি নিয়ে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : কলকাতার কাছেই রয়েছে এক পৌরাণিক সৌধের ধ্বংসাবশেষ চন্দ্রকেতুগড়। এখানে নিদর্শন মেলে চতুর্থ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের প্রাক মৌর্য যুগের। তারই জ্বলন্ত প্রমাণ উত্তর ২৪ পরগণার বেড়াচাঁপায় ‘চন্দ্রকেতুগড়’। এটি আসলে পরিচিত বরাহমিহিরের ঢিপি নামেও। এটি ছিল আসলে এক বিশাল দূর্গ পরিবেষ্টিত শহর। অনেকটা হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর মতোই।খুব বেশি দিন আগে এটি আবিস্কার হয়নি। আবিস্কার হয় মাত্র ৬৫ বছর আগে। ১৯৫৬-৫৭ সালে এখানে খনন কার্য চালান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ সংগ্রহশালা । উদ্ধার হয় খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর প্রাক মৌর্য যুগ থেকে দ্বাদশ খ্রীষ্টাব্দের পাল সাম্রাজ্যের সময়কাল পর্যন্ত বিশাল সময়ের ইতিহাস । খোঁজ পাওয়া যায় এমনকি সেই সময়ের সংস্কৃতিরও। বিশাল ধ্বংসাবশেষের ইতিহাসেরও সন্ধান মেলে , যা দাঁড়িয়ে রয়েছে এক নিদর্শন হয়ে ।

খনন কার্য্যে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারটি ছিল একটি উত্তরমুখী বহুভূজাকৃতি ইটের মন্দির। মন্দিরিটির তিনদিকে প্রক্ষিপ্ত অংশ এবং এটি একটি বর্গাকার দালানের সঙ্গে যুক্ত। প্রথমে গুপ্ত যুগের ভাবা হলেও মন্দিরটির নকশা, স্থাপত্যশিল্প ও সজ্জা পরিকল্পনা দেখে পরে ধারণা করা হয় এটি পাল যুগের বলে। খননকার্য্যের ফলে মাটির নিচ থেকে পাওয়া যায় বুদ্ধের প্রতিমূর্তি, স্তুপ, পোড়ামাটির ফলক যাতে বুদ্ধ ও জাতকের গল্প প্রতিফলিত, মুদ্রা, পোড়ামাটির শিলমোহর, পৌরাণিক সময়ের বিভিন্ন ধরণের পুঁতি প্রভৃতি প্রত্ন সামগ্রী। এই স্তুপটিকে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সৌধ ঘোষণা করা হয় ১৯৬৩তে।

অনেক ঐতিহাসিকের মতে এই চন্দ্রকেতুগড় ও তার আশেপাশের অঞ্চল ছিল গ্রীক দার্শনিক টলেমির বর্ণিত পৌরাণিক রাজ্য ‘গঙ্গারিদাই’ এর অংশ। এই এমনকি চন্দ্রকেতুগড় সাক্ষী রয়েছে মৌর্য যুগ থেকে শুরু করে শুঙ্গ, কুষান, গুপ্ত ও পরবর্তীকেলের পাল রাজত্বের ইতিহাসেরও। এই ঐতিহাসিক স্তুপের সাথে জড়িত আছে গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত ২ বা বিক্রমাদিত্যের সভার নবগ্রহের অন্যতম জ্যোতির্বিজ্ঞানী বরাহমিহির এবং কিংবদন্তী ভবিষ্যতদ্রষ্টা ও বাঙালি কবি খনার নামও । ধ্বংসাবশেষের মধ্যে থেকে এই দুজনের নাম খোদিত একটি ফলক আবিষ্কৃত হয় খননকার্য্যের ফলে।

কলকাতা থেকে চন্দ্রকেতুগড় দেখে নেওয়া যায় অর্ধদিবসের মধ্যেই। এই স্থানকে ‘বাংলার হরপ্পা’ বলাই যায়। বস্তুত এখানে আজ দেখার কিছুই নেই কিছু সুপ্রাচীনকালের ইটের দেওয়াল ও ধংসাবশেষ ছাড়া। একপাশে সম্ভবত খনন কার্য্যের ফলে শিকড় উপড়ে পড়া দুটি প্রাচীন মহীরুহ। এই জায়গা শুধুমাত্র ইতিহাস প্রেমী ও প্রত্নতত্ত্বে উৎসাহীদের জন্যই বর্তমানে বাড়িঘর, দোকানপাট, লোকালয় গজিয়ে উঠেছে এই সৌধের চারপাশে। অনবরত যান চলাচল করে পরিখার বাইরের রাস্তা দিয়ে। পরিখা দিয়ে ঘেরা হলেও প্রবেশ অবাধ এই সৌধে।বেড়াচাঁপা তথা চন্দ্রকেতুগড়ের দূরত্ব মাত্র ২৩ কিমি বারাসাত থেকে টাকি রোড ধরে। মূল রাস্তা থেকে ১ মিনিটের হাঁটা পথে এই প্রাচীন স্তুপ পরিখা ঘেরা। সড়ক পথ ছাড়াও শিয়ালদা থেকে হাসনাবাদ লোকালে চড়ে হাড়োয়া রোড স্টেশনে নেমে সেখান থেকে অটোয় বেড়াচাঁপা তথা চন্দ্রকেতুগড় পৌঁছনো যায় মাত্র ১০ মিনিটেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *