মনমোহন সরকারের অয়েল বন্ডই দায়ী জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জন্য ? এমনি দাবি কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের
বেস্ট কলকাতা নিউজ : দেশবাসীর একরকম নাভিশ্বাস অবস্থা পেট্রল, ডিজেলের আকাশছোঁয়া দামে৷ এমনকি ভারতের বাজারে তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কম থাকা সত্ত্বেও৷এর জন্য বর্তমান মোদি সরকারকেই একমাত্র দায়ী করা হচ্ছে৷ কিন্তু, এক্ষেত্রে বিজেপির দাবি, কিছুই করার নেই মোদির , কারণ এর জন্য ইউপিএ জমানার (২০০৪-১৪ ) মনমোহন সিংয়ের সরকারের “অয়েল বন্ড” নীতিই একমাত্র দায়ী৷
অয়েল বন্ড কী? তেলের বাণিজ্যিক সংস্থা (OMCs) , সারের কোম্পানি, ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (FCI), কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ভরতুকি দেওয়া হয় এদের বাঁচাতে ৷ যা একরকম সমান “সরকারি নিরাপত্তা” (government securities)-রও ৷ ১৫ -২০ বছর পর্যন্ত হতে পারে এই বন্ডগুলির মেয়াদ৷ তেল কোম্পানিগুলি কম দামে দেশের বাজারে তেল বিক্রি করবে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অপরিশোধিত তেল কিনে৷ এতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে দেশে বাজারে তেলের দাম৷ আর এতে তেল কোম্পানিগুলির যে ক্ষতি হবে সরকার এই বন্ডের মাধ্যমে তা পুষিয়ে দেবে৷ এর জন্য সংস্থাগুলিকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সুদ দিতে হবে৷ কিন্তু কেন্দ্র সংস্থাগুলিকে সরাসরি নগদ অর্থ দেয় না ৷ অয়েল বন্ডগুলি থেকে নগদ টাকা পেতে তা বিক্রি করা হয় বিমা কোম্পানি, ব্যাঙ্ক আর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে ৷ সাধারণত ভরতুকিকে রাজস্ব খাতে রাখা হলেও এই বন্ডগুলিকে রাখা হয় বাজেটের বাইরেই৷
প্রসঙ্গত ,২০০৫ -২০০৯ পর্যন্ত কংগ্রেস শাসিত ইউপিএ সরকার তেল সংস্থাগুলিকে ভরতুকির এই অয়েল বন্ড দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল দেশে জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে৷ মূলত ২০০৮ -এ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও মনমোহন সরকার ১ .৪ লক্ষ কোটি টাকার বন্ড দিয়েছিল ২ .৯ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি পূরণের জন্য৷ সেই সময় ইউপিএ সরকার সমগ্র দেশবাসীকে এভাবেই রক্ষা করেছিল দেশে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে৷ আরেক দিকে কংগ্রেস নিজেদের জনকল্যাণমূলক রাজনৈতিক ভাবমূর্তিও বজায় রেখেছিল সমস্ত দেশবাসীর কাছে৷
২০১৫ সালে তেল সংস্থাগুলি থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ৩,৫০০ কোটি টাকা পেয়েছে আসল বাবদ৷ এবছর কেন্দ্রীয় সরকারের পাওয়ার কথা ১ ,৩০ ,৭০১ কোটি টাকা, আর সুদের পরিমাণ ১০,০০০ কোটি টাকা৷ গত ৭ বছরে মোদি সরকার সুদ দিয়েছে ৭০০০০ কোটি টাকা , আর এবছরে শুধু প্যানডেমিকের জন্যেই বরাদ্দ করতে হয়েছে ৩৫০০০ কোটি টাকা৷ সূত্রের মতে, বর্তমান সরকারকে না-চাইতেও অনেক কিছু করতে হচ্ছে এই বিপুল ঘাটতির চাপ সামলাতে গিয়ে৷ বিজেপির আইটি সেল-এর জাতীয় প্রেসিডেন্ট অমিত মালব্য ইউপিএ সরকারকে দায়ী করে একটি লেখা পোস্ট করে টুইটও করেন৷
যদিও বিজেপি-র এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ রূপে নস্যাৎ করে কংগ্রেস নেতা অমিতাভ দুবে একে “অগ্রহণযোগ্য” বলে টুইট করেন৷ তিনি টুইটে লেখেন,এই দাবি “অগ্রহণযোগ্য৷ ভারতীয়রা ৩ কোটি মেট্রিক টন পেট্রল আর ৭ কোটি ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন ডিজেল বা ২০১৯ -২ ০ সালে ১৪ ,২২৮ কোটি লিটার জ্বালানি ব্যবহার করেছ৷- প্রতি লিটারে ১.৪০ টাকা পর্যন্ত ভরতুকি দিতে পারে ২০,০০০ কোটি টাকার বন্ডের “ড্রামরোল”৷ যেখানে, মোদি সরকার শুধুমাত্র গত ছ’সপ্তাহে প্রতি লিটারের ৭ টাকা দাম বাড়িয়েছে৷” উল্লেখ্য, অমিতাভ দুবে দিল্লিতে প্রফেশনালস’ কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ৷ তবে শেষমেশ, সেই জনসাধারণকেই দায় মেটাতে হচ্ছে ইউপিএ-বিজেপি উভয় সরকারের৷