“মিরাকেল আজও ঘটে”, গত বুধবার প্রবাদবাক্যকে প্রমাণ হতে দেখল রানাঘাট স্টেশনের ২নং প্লাটফর্মের মানুষজন
বেস্ট কলকাতা নিউজ : এক ব্যক্তি নাম রাজীব সরকার দুপুর ১-১৭ মিনিটের শিয়ালদহগামী লালগোলা ফার্ষ্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্টেশনে পৌচ্ছে দেখতে পান ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। কোনক্রমে ট্রেনটি ধরতে গিয়ে ট্রেনের কামরার হাতল ধরে ফেললেও পা স্লীপ খেয়ে যায়। ফলে চলন্ত ট্রেনে ঝুলতে থাকে। কিন্তু বডি ট্রেনের চাকার দিকে চলে যেতে থাকলে সেই ট্রেনেই সাক্ষাৎ দেবদূতের মতো এসে জাপটে ধরেন এক জল বিক্রেতা। ট্রেনের সেই হকার নিজের জীবন বিপন্ন করে সমাজকর্মী রাজীব সরকারের জীবন বাঁচান। পরে জানা যায় ট্রেনের সেই নিত্যদিনের হকারের নাম রাজীব ধর ওরফে রাজা ধর। বাড়ি রানাঘাট পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত।
ঘটনা ফেসবুকে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হতেই ট্রেনের সেই হকার রাজা ধরকে অভিনন্দন জানান। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ডঃ পবিত্র সরকার বলেন “মানুষ ঘৃণা জাগায়, বিশেষত ভ্রষ্ট রাজনীতির মানুষেরা। আবার মানুষই আনন্দে চোখে জল আনে। রাজীব ধরকে প্রণাম”। অন্দরসজ্জার কারিগর এবং লেখক সুদীপ ভট্টাচার্য জানান “মানুষের কর্ম দিয়ে মানুষের বিচার হয় না। বিচার হয় তার জীবনবোধ দিয়ে। নিঃস্ব রাজা ধরের সেই জীবনবোধ অবশ্যই আছে, যা শিক্ষিত অনেক মানুষের ভিতর নেই”। লেখক মানবেন্দ্র দিওয়ানজী জানান “খুব বাজে ঘটনা। রাজা বাবু যা করেছেন তাতে হয়তো উভয়ের দূর্ঘটনা হতেই পারতো, কিন্তু উনি নিজের কথা না ভেবেই মানবিক কাজ করেছেন, আমি এমন একজনকে কূর্নিশ জানাই। অদৃশ্য শক্তি বাঁচিয়ে দিয়েছেন মানে রাজীব সরকারের প্রয়োজন এখনো আছে।” সি এন চ্যানেলের দিল্লীর প্রতিনিধি ইন্দ্রাণী দাশগুপ্ত জানান “ভালো মানুষদের পাশে ভগবান নানা রূপ ধরে বিরাজ করেন। আমি জীবনে বহুবার এর প্রমাণ পেয়েছি। এই ঘটনাটা সেই বিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করল”। লেখক অমরেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন “চারদিকের অমানবিক চিৎকার ছাপিয়ে ওঠা এইসব গভীর মানবিক আশ্রয় ও আলিঙ্গনই আমাদের আলো দেখায়”। কবি দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন “সবার নবজন্ম হোলো, বলা যায়। মানুষ মানুষকেই মারে, আবার বাঁচায়ও”। সাংবাদিন তরুণ চট্টোপাধ্যায় জানান “ঈশ্বর আছেন কি নেই সেই তর্কে যাব না। তবে রাজীবের যিনি প্রান বাঁচালেন তাঁদের মতো ঈশ্বর আমি দেখেছি। আমি সৌভাগ্যবান এমন বেশ কিছু ঈশ্বর দেখার উপলব্ধি আমার হয়েছে”। কবি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় ঘটনাটি জানতে পেরে বলেছেন “আলো দেয়…”। রাজারহাট গোপালপুরের কংগ্রেস নেতা নারায়ণ সাহা রাজা ধর ওরফে রাজীব ধরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
যাকে সমাজের সমস্ত মানুষ শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিচ্ছেন সেই রাজীব ধর জানালেন তার মা বাবা দুজনেই মৃত। ঘরে এক মানসিক ভারসাম্যহীন দিদি আছে। রাজাবাবু কিছুদিন আগে বিয়ে করেছেন। রানাঘাটে চরম অভাবের সংসার। স্টেশন চত্তরে সকলেই জল বেচা রাজা বলেই চেনে। রাজা ধর আরো জানালেন “ওই মানুষটি পা স্লীপ করে যেভাবে পড়ে যাচ্ছিলেন তাতে উনি কোনভাবেই বাঁচতেন না। আসলে বাঁহাতে ট্রেনের কামরার রড ধরে ওনার শরীর উল্টে গিয়েছিল। উনি পড়ে গেলেই ট্রেনে চাকার তলায় চলে যেতেন। তাই ওনাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেছিলাম। উনি যে বেঁচে যাবেন তা ট্রেনের এবং রানাঘাট স্টেশনে উপস্থিত কোন যাত্রী বিশ্বাস করতে পারেননি। আমরা হকার। মানুষ আমাদের খুব ছোট করে। আমরা যারা হকারগিরি করি তারা সকলেই চরম অভাবে সংসার চালাতে এসব করি। আমাদের যন্ত্রণার কথা শোনার কেউ নেই। লকডাউনে আমরা সর্বশ্রান্ত হয়ে গেছি। পরে ফেসবুকে এই ঘটনাটি জেনে অনেকে আমায় ফোন করেছিলেন। ভাল লাগল যে আমাদের মতো ছোট মানুষদের কথাও মানুষ জানতে পারে। জানবেন ট্রেনের হকারই ট্রেনযাত্রীদের বন্ধু। হাতের পাঁচটা আঙুল কোথাও সমান নয়। তাই বলে আমরা নোংরা নই”।
এ বিষয়ে অবশ্য সমাজকর্মী রাজীব সরকারের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি, কিন্তু তার ফেসবুকে তিনি রাজীব ধরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েন।