যোগ্য কোনো চাকরি জোটেনি, হবু ইঞ্জিনিয়ারের চমক নেশাকে পেশায় বদলে দুর্গা প্রতিমা গড়ে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : ছেলেবেলার নেশাকেই পেশাতে বদলে ফেলেছেন পান্ডুয়ার সিমলাগড়ের চাঁপাহাটি গ্রামের বাসিদা প্রদীপ মন্ডল। ইঞ্জিয়ারিং পাশ করে লকডাউন ও বাবাব অসুস্থতা দুই মিলে যাওয়া হয়নি চেন্নাইতে পাওয়া প্রথম চাকরি। অতিমারী পর্ব পেরিয়ে সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও মন্দার চাকরির বাজারে রাজ্যে জোটেনি তেমন যোগ্য চাকরি। আর ঠিক সেই কারণেই ছেলেবেলার নেশাকেই বর্তমানে পেশাতে বদলে ফেলেছেন ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ।

পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ার সময় থেকেই ঠাকুর বানানোর হাতেখড়ি। একেরপর তাক লাগানো প্রতিমার মূর্তি গড়ে সকলকে চমকে দেন তিনি। সেই সময় হঠাৎ করেই গড়ে ফেলেন দুর্গামূর্তি। বাড়ির সকলে তো ছেলের এমন কাজে অবাক। সেই দুর্গামূর্তিকে পুজোয় করতে হয় মণ্ডল পরিবারকে। সেই থেকে ঠাকুর বানানোর প্রতি অদমাই আগ্রহ প্রদীপের। এর আগে লক্ষ্মী, সরস্বতী, বিশ্বকর্মা, গণেশের মত মূর্তি বানালেও পেশাগত ভাবে দুর্গামূর্তি গড়ার কাজ এই প্রথম আর এই প্রথম বারেই বাজিমাৎ প্রদীপের। পুজোর আগে নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই প্রদীপের হাতে। একের পর এক মূর্তি গড়ে চলেছেন নিজের হাতে। দুর-দুরান্ত থেকে প্রথম বারেই মিলেছে অর্ডার। যে পরিমাণ অর্ডার মিলেছে তাতে বেশ খুশি প্রদীপ।

পুজোর আর বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। শুরু হয়ে গিয়েছে পাড়ায় পাড়ায় পুজোর প্রস্তুতি। আর হাতে গোনা মাত্র কয়েকদিন আগে সিমলাগড়ের ইঞ্জিনিয়ারের হাতে গড়া প্রতিমা নিয়ে উৎসাহ পাশ্ববর্তী এলাকার বারোয়ারীগুলিতে। সকাল থেকে রাত প্রতিমা গড়তে ব্যস্ত প্রদীপ। পলিটেকনিক পড়ার পরও যোগ্যতা অনুসারে চাকরি না মেলায় শখকেই পেশায় বদলে ফেলেছেন তিনি।

প্রতিমা গড়ার ব্যস্ততার মাঝেও প্রদীপ জানিয়েছেন, “পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ার সময় থেকেই মূর্তি তৈরির হাতেখড়ি। তারপর ইঞ্জিয়ারিং শেষে চেন্নাইতে মেলে চাকরি। এমনকি আদানির মত সংস্থাতেও চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লকডাউন আর বাবার অসুস্থতার কারণে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়। রাজ্যে সেভাবে চাকরি না থাকায় হতাশার কথাও জানিয়েছেন তিনি। প্রদীপ বলেন, “ মূর্তি গড়ে আয় হচ্ছে ভালোই। সেই সঙ্গে নিজের শখ এভাবে পূরণ করতে পেরে ভালোই লাগছে। তবে রাজ্যের সামগ্রিক চাকরির বাজার খুবই খারাপ। বেসরকারি সংস্থায় যে মাহিনা দেবে তাতে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়বে। সরকারি চাকরি প্রায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির এক মাত্র ছেলে হিসাবে বসে না থেকে যেটা আমি পারি সেটা করে উপার্জনের বিকল্প পথ খুঁজে বের করে নিয়েছি। দূরদুরান্ত থেকে মানুষজন আসছেন প্রতিমা অর্ডার দিচ্ছেন। ভালোই লাগছে”।

প্রদীপের বাবা দীপক কুমার মণ্ডল বলেন, “ছেলে যখন নিজেই প্রতিমা তৈরির কাজ পছন্দ করেছে তখন আমি চাই ও এই পেশায় আরও যেন উন্নতি করতে পারে। ছেলের মূর্তি গড়ায় উৎসাহ দেখে আমি নিজে অসুস্থ শরীরের ওর পাশে থেকে ওকে মনোবল জুগিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মধ্যে ওর সঙ্গে মুর্তি তৈরিতে হাতও লাগাই”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *