শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন শ্রীরামপুরের ৮ বছরের অরণ্যতেশ গঙ্গোপাধ্যায়

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

সুমন কারাতি, হুগলী : শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে যে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব তার উদাহরন এর আগেও বহু মানুষ রেখেছেন। শ্রীরামপুরের আট বছরের খুদে অরণ্যতেশ গঙ্গোপাধ্যায় ও সেরকমই একটি দৃষ্টান্ত । কিছুদিন আগেই মস্কোতে শেষ হয়েছে World Children’s Winners Games 2019। আর সেখানেই গোটা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে সোনা জিতে নিয়েছে শ্রীরামপুরের অরণ্যতেশ। আট বছরের এই খুদে সত্যিকারেরই যোদ্ধা। ডাক্তারদের মতে ব্লাড ক্যানসারের মতো রোগের সঙ্গেও লড়াই চালিয়ে সে আজ সুস্থ।গত জুলাইয়ের চার থেকে সাত তারিখ রাশিয়ার মস্কোতে শিশু ক্যানসার যোদ্ধাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা। ছোট্ট অরণ্যতেশের মা কাবেরী বলছিলেন, ‘খেলতে যাবে বলে অরণ্য এতটাই উদগ্রীব ছিল যে, নিজের এত বড় রোগ আছে, সে সব কিছু ভুলে গিয়েছিল। আর এখন তো বিশ্বজয়ের আনন্দে মেতে আছে!’

মস্কোতে এই প্রতিযোগিতায় খুদেদের মূলত যে খেলাগুলি হয় সেগুলি হল, ট্র্যাক, ফুটবল, দাবা, টেবিল টেনিস, সাঁতার এবং রাইফেল শুটিং। মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে অরণ্যের চিকিৎসা চলছিল। সেখানকারই এক চিকিৎসক জানান, ভারতের দশ খুদের মধ্যে অরণ্যতেশই এই চমৎকার করে দেখাল। আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে তো ও একাই এই প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিল। দুর্দান্ত খেলতে পারে অরণ্য। এই ছয়টি খেলাই অত্যন্ত পটুতার সঙ্গে খেলতে পারদর্শী সে। ২০১৬ সালের এপ্রিল নাগাদ লিউকেমিয়া ধরা পড়েছিল অরণ্যতেশের। মুম্বইতে এগারো মাসের জন্য থাকতে হয়েছিল তাকে। কেমোথেরাপি এবং ঠিকঠাক চিকিৎসার পর ২০১৮ সালে ক্যানসার যুদ্ধে জয়ী হয় সে। তবে সম্পূর্ণ সেরে এখনও সে ওঠেনি। নিয়মিত চিকিৎসা এখনও তার চলছে।

কিন্তু সে সবকে থোরাই কেয়ার! যবে থেকে এই বিগ ইভেন্টের কথা তার কানে আসে, ঠিক সেই দিন থেকেই অক্লান্ত পরিশ্রম শুরু করে দেয় ছোট্ট অরণ্যতেশ। ছেলের গর্বিত মা বলেন, ‘বিগত দুই মাস ধরে কঠিন কসরত করে চলেছে আমার ছেলে। সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু হত ওর দিন। ৬টা থেকে ৭ টা ৩০ মিনিট অবধি ট্র্যাক এবং ফুটবল প্র্যাকটিস করত। আর তারপরেই সাঁতার, দাবা এবং টেবিল টেনিস খেলত। সন্ধে বেলায় শ্যুটিং ক্লাসে যেত অরণ্য।’তবে এসবের মধ্যেও রয়েছে কঠিন লড়াই। ছেলের কঠিন রোগে র খরচ জোগাতে অরন্যর বাবা মা কে জীবনের সবচেয়ে বড় সম্বল নিজেদের বাড়ী পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। কিন্তু ছেলের মুখের হাসি সেই সম্বল হারানোর থেকে যে অনেক দামী তা হৃদয় কঠিন করেও হাসতে হাসতে বলতে পারেন মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *