আদিবাসী, কৃষক অধিকার রক্ষার,সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একাধিক গণ-সংগঠনের ডাকে আয়োজিত হল মত বিনিময় সভা
সিউড়ী, বীরভূম,১৫.০৫.২০২৩: আমরা নিম্নস্বাক্ষরিত আদিবাসী সংগঠন, কৃষক সংগঠন এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনরত গণসংগঠন এবং মঞ্চসমূহ ১৩ মে, ২০২৩ তারিখে সিউড়ী শহরের বীরভূম সাহিত্য পরিষদ ভবনে একটি মত বিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলাম। বীরভূম তথা পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আদিবাসী, দলিত, অনগ্রসর শ্রেণী, সংখ্যালঘু, কৃষক, দিনমজুর, সরকারি কর্মচারী এবং অন্যান্য শ্রমজীবী অংশের মানুষের স্বার্থে আমরা কয়েকটি দাবির ভিত্তিতে যৌথভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে একমত হয়েছি।
আদিবাসী অধিকার রক্ষার দাবিঃ
১। দেউচা-পাঁচামি, দেওয়ানগঞ্জ-হরিণশিঙা অঞ্চলে প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল করতে হবে; কয়লা খনির নামে বেআইনি জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং আদিবাসী উচ্ছেদ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
২। কেন্দ্রীয় জমি অধিগ্রহণ আইন, ২০১৩ এবং বনাধিকার আইন, ২০০৬-কে উলঙ্ঘন করে, গ্রামসভার সম্মতি ব্যতীত, কোন প্রকল্পের কাজ করা চলবে না।
৩। ভারতের সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে প্রদত্ত অধিকারের আদলে পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী গ্রামগুলিতে গ্রামসভার বিশেষ অধিকারের স্বীকৃতি দিতে রাজ্য বিধানসভায় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৪। পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংসকারী পাথর, বালি, কয়লা, মাটি ইত্যাদির বেআইনি খনন এবং তোলাবাজি বন্ধ করতে হবে; পাথরবাহী ডাম্পারের অবিরত যাতায়াতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামত করতে হবে।
৫। পাথর শিল্পাঞ্চলে ধুলো এবং পরিবেশ দূষণরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; বায়ুদূষণের ফলে সিলিকোসিস-সহ অন্যান্য ফুসফুসের অসুখে আক্রান্ত গ্রামবাসীদের সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
কৃষকদের দাবিঃ
১। ধান, গম, সর্ষে, আলু, তিল, আখ, সবজি ইত্যাদি ফসলের ন্যায্য দাম সুনিশ্চিত করতে পশ্চিমবঙ্গে এবং জাতীয় স্তরে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) গ্যারান্টি আইন প্রণয়ন করতে হবে।
২। ছোট কৃষকদের ঋণমুক্তি এবং কম সুদে ঋণ সুনিশ্চিত করতে হবে; কর্পোরেট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছোট কৃষকদের সমবায় এবং জৈবচাষকে উৎসাহিত করতে বীজ, জৈবসার, সেচ এবং বিদ্যুতে বিশেষ ভর্তুকি দিতে হবে।
৩। প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষতি রোধে সঠিক ও কার্যকরী ফসল বিমা প্রকল্প চালু করতে হবে।
৪। সকল কৃষক ও খেতমজুরের সরকারি পেনশন সুনিশ্চিত করতে হবে।
৫। জমির পাট্টা ছাড়া মৌখিক লিজে জমি নিয়ে চাষ করা সকল ভাগচাষিদের নথিভুক্ত করে কৃষকবন্ধু/পিএমকিষাণ-এর মতন সরকারি প্রকল্প, কৃষিঋণ, ফসল বিমা ইত্যাদির আওতায় আনতে হবে।
সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার দাবিঃ
১। জাতভিত্তিক জনগণনা সুনিশ্চিত করতে হবে; কেন্দ্রের সরকার উদ্যোগী না হলে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যস্তরে জাতভিত্তিক জনগণনা এবং সকল জাতের আর্থ-সামাজিক সমীক্ষা অবিলম্বে চালু করতে হবে।
২। মণ্ডল কমিশন সুপারিশ লাগু হওয়ার তিন দশক এবং সাচার কমিটি রিপোর্টের দেড় দশক পরে পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী, দলিত, অনগ্রসর শ্রেণী এবং সংখ্যালঘু সমাজের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন, বহুমুখী উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ‘বহুজন কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৩। সরকারি ক্ষেত্রে সমস্ত শূন্যপদে স্বচ্ছ নিয়োগ এবং অস্থায়ী ঠিকাকর্মীদের স্থায়ীকরণ সুনিশ্চিত করতে হবে; তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য সংরক্ষিত আসন পূর্ণ করতে হবে।
৪। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনরত পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কর্মচারিদের ন্যায্য হারে মহার্ঘভাতা দিতে হবে।
৫। আমরা সমবেতভাবে দাবি জানাচ্ছি যে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন যেন যথাসময়ে, আইনসম্মত ভাবে করা হয়। রাজনৈতিক হিংসা-সন্ত্রাসমুক্ত এবং স্বচ্ছ পঞ্চায়েত নির্বাচন সুনিশ্চিত করতে হবে।
কৃষক আন্দোলনের যৌথ মঞ্চ সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার জাতীয় সভায় ২৬ থেকে ৩১ মে, ২০২৩, ভারতের সমস্ত রাজ্যে বিক্ষোভ ও আন্দোলন শুরু করার ডাক দেওয়া হয়েছে। এই সর্বভারতীয় আন্দোলনের সংহতিতে এবং জনস্বার্থ রক্ষার পূর্বোক্ত ১৫ দফা দাবির ভিত্তিতে আগামী ৩১শে মে, ২০২৩ বীরভূমের সিউড়ী শহরে বেলা ২টোর সময় যৌথ মিছিল এবং জেলাশাসক দপ্তরে ডেপুটেশনের যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে। বীরভূম-সহ পশ্চিমবঙ্গের সকল আদিবাসী সংগঠন, কৃষক সংগঠন এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনরত গণসংগঠনগুলিকে এই কর্মসূচিতে যোগদান করার আহ্বান জানাই।
স্বাক্ষরঃ জগন্নাথ টুডু, লখীরাম বাস্কি, সনদী হাঁসদা, জসীমুদ্দিন শেখ, ইয়াসিন খান, জীবন মুর্মু, অরুণ চ্যাটার্জি, বাগাল মার্ডি, দেবব্রত মুখার্জি, মহম্মদ আশরাফ আলি, তপন সিনহা, স্বপন রুজ, বিশ্বজিৎ হালদার, রাম বচ্চন, অমর্ত্য রায়, অভীক সাহা, প্রসেনজিৎ বসু
গণ-সংগঠন সমূহঃ আদিবাসী অধিকার মহাসভা; জয় কিষাণ আন্দোলন; কৃষক ফ্রন্ট; জন-অধিকার সুরক্ষা কমিটি, সারা ভারত ক্ষেত মজদুর কৃষক সভা, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ, কুশকর্ণী নদী সমাজ, ইয়ং বেঙ্গল