এক চরম হতশ্রী অবস্থা শহর জলপাইগুড়িতে, যেখানে সেখানে বসছে মদ এবং জুয়ার আসর
জলপাইগুড়ি : রক্ষণাবেক্ষণ দূরের কথা। শেষ বার কবে সাফাইয়ের কাজ করা হয়েছিল, সেটাও ঠিকমতো বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ভেঙে পড়েছে প্রাচীরের একাধিক অংশ। ওই ভাঙা অংশের ভিতরে সরকারি জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে হোটেল থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, লটারির কাউন্টার। সেখানে রাতের অন্ধকারে মদের আসর বসে বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি পুরসভার ১২৫ বছর উপলক্ষে রাজবাড়ির গেটকে কেন্দ্র করে যে সৌন্দর্যায়নের কাজ করা হয়েছিল, আজ তার এমনই হাল। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী কাউন্সিলারেরা। পুরসভার চেয়ারম্যান পাপিয়া পাল বলেন, ‘সম্প্রতি বোর্ড মিটিংয়ে ওই প্রাচীর সংস্কার থেকে শুরু করে অন্য কাজের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। টেন্ডার করে কাজ শুরু করা হবে। ওই স্থানে বসার জায়গা থেকে শুরু করে একাধিক কাজ করা হবে।’
জলপাইগুড়ি পুরসভার ১২৫ বছর উপলক্ষে ২০০৯ সালে শহরের একাধিক কাজ করেছিল তদানীন্তন কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ড। যার মধ্যে অন্যতম ছিল, ১ নম্বর ওয়ার্ডে বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির গেট ঘিরে সৌন্দর্যায়ন। লক্ষাধিক টাকা খরচ করে ওই গেটকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫০ মিটার এলাকায় হাতি, বাইসন, গন্ডারের পাশাপাশি বিভিন্ন মূর্তি বসিয়ে ছোটোখাটো পার্ক তৈরি করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি এই পার্কের উদ্বোধন করেন পুরসভার তদানীন্তন চেয়ারম্যান কংগ্রেসের মোহন বসু। উদ্বোধনের কিছুদিন পর পর্যন্ত ওই জায়গাটির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকঠাক হলেও সময় গড়াতেই দেখভালের কাজে ভাটা পড়ে। একসময়ে তা বন্ধই হয়ে যায়। আস্তে আস্তে ওই পার্কের প্রাচীর ভেঙে পড়তে থাকে। তবু পুরসভা পার্কটি বাঁচাতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ। এই ভাঙা পাঁচিলের সুযোগ নিয়েছেন স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী।
ওই ভাঙা জায়গার ভিতরে হোটেল তৈরি করে দিব্বি ব্যবসা করে চলেছেন তাঁরা। রাজবাড়ি গেট সংলগ্ন ভাঙা পাঁচিলের মধ্যে হোটেল ব্যবসায়ী পূজা হাজরা, রানা হাজরা বলেন, ‘আমরা ২০০৬-০৭ সাল নাসিংহোম তৈরির সময় থেকেই হোটেল চালিয়ে আসছি। আগে রাজবাড়ির জমিতে হোটেল চালাতাম। বছর দেড়েক আগে রাজবাড়ির পক্ষ থেকে থেকে আমাদের উঠে যেতে বলা হয়। তারপর একপ্রকার বাধ্য হয়েই পার্কের ভিতরে সরকারি জায়গাতে হোটেল করেছি। পাঁচিল যেহেতু ভেঙে পড়েছে, তাই হোটেল করতে সুবিধা হয়েছে।’
তাঁদের দাবি, বিষয়টি এক নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলার জানেন। এই বিষয়টি নিয়ে পুরসভার কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধী পক্ষ। কংগ্রেস কাউন্সিলার অম্লান মুন্সি বলেন, ‘আগের বোর্ড শহরের সৌন্দর্যায়নের জন্য বহু কাজ করেছে। কিন্তু বর্তমান বোর্ড রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সমস্ত কিছুই নষ্ট হতে বসেছে। এই পার্কের পাশাপাশি কমিউনিটি হলগুলিরও বেহাল অবস্থা।’ এদিকে এক নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান তৃণমূল কাউন্সিলার নীলম শর্মা বলেন, ‘রাজবাড়ি সংলগ্ন জায়গায় নতুন করে কাজ শুরু করা হচ্ছে। তার আগে ব্যবসায়ীদের ওই জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি বিষয়টি তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।