International Mother Language Day 2022 : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশে আজ আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : ‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি ৷ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া-এ ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি ৷1954 সালে একুশে সংকলনে প্রকাশিত হয় সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গফফর চৌধুরীর লেখা এই গান ৷ সেটি বাজেয়াপ্ত করে তৎকালীন সরকার৷ তার পরে 70 বছর অতিক্রান্ত, বর্তমানে একুশের গান শুধু বাংলাই নয়, বিশ্বের মোট 12টি ভাষায় গাওয়া হয় ৷ ইতিহাস বলে, ভাষা বিভেদ ঘোচায় ৷ তারই এক জীবন্ত দলিল ‘একুশের গান’৷ যা আজ শুধু বাঙালির নয়,কাল-সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাসীর ৷ ঠিক যেমনভাবে দেশভাগের পর কাঁটাতার পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকায় শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন৷ যার ফলস্বরুপ, 1999 সালে ইউনেস্কোর ঘোষণার পরে ভাষা দিবস হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ৷ বাংলাদেশে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে রবিবার রাত 12টা বাজতেই ৷ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ।

পাকিস্তানের জন্মের পর, 1948 সালের মার্চে মহম্মদ আলি জিন্না পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল, গণপরিষদ এবং মুসলিম লিগের সভাপতি । পূর্ববঙ্গ সফরে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (এখন সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) এসে স্পষ্ট করেই বলেন, উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা – অন্য কোন ভাষা নয় । তা মানতে চায়নি দেশের 54% বাঙালি ৷1952 সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ধিকিধিকি আঁচে জ্বলতে থাকা সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে । ঐদিন সকালে 144 ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ৷ পুলিশ তাঁদের ওপর গুলি চালায় । নিহত হন আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম-সহ কয়েকজন ছাত্র। ঘটনার প্রতিবাদে পরের দিন 22 ফেব্রুয়ারি ফের রাজপথে নেমে আসে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী। 23 ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হস্টেল প্রাঙ্গণে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠে শহিদদের স্মৃতিতে , যা 26 ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয় দেশের সরকার ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা 144 ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে আসে

যদিও তাতে প্রতিবাদকে মুছে ফেলা যায়নি কোনওভাবে৷ বরং তা আরও বাড়িয়ে দেয় ভাষা আন্দোলনের গতিকে। যা ঠেকাতে না পেরে 1954 সালের 7 মে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় বাংলাকে। দু’বছর পরে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে ৷ জাতীয় সংসদে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন বিল’ পাশ হয় 1987 সালের 26 ফেব্রুয়ারি। যা কার্যকর হয় 8 মার্চ 1987 সাল থেকে । এতো গেল নিছক পরিসংখ্যান ৷ কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে কি আবেগকে বোঝা সম্ভব ?

‘মিল্লাত’ পত্রিকায় এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, ‘‘মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য কোন ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারূপে বরণ করার চাইতে বড় দাসত্ব আর কিছু থাকিতে পারে না ।’’ 1947 সালে দৈনিক আজাদি পত্রিকায় লেখক সাংবাদিক আবদুল হক লিখেছিলেন, ‘‘উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি উর্দু-শিক্ষিতই চাকুরির যোগ্যতা লাভ করবেন, এবং প্রত্যেকটি বাংলাভাষীই চাকুরির অনুপযুক্ত হয়ে পড়বেন ।’’ বুদ্ধিজীবীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে মাতৃভাষার পরিবর্তে উর্দু চাপিয়ে দিলে বাংলাভাষী পরবর্তী প্রজন্ম অশিক্ষিত হয়ে পড়বে, বাংলা ভাষার সত্ত্বা ঝুঁকিতে পরবে । অর্থাৎ শুধু মাতৃভাষার প্রতি ভাষার টানই নয়, ভাষা আন্দোলনের শিকড় গাঁথা আরও গভীরে ৷ যার সঙ্গে জড়িয়ে নিজের সত্ত্বা টিকিয়ে রাখা, অধিকার বুঝে নেওয়ার মতো আপাত ভারী বোধ, শব্দবন্ধও ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *