SIR বাতিলের দাবিতে আজ কলকাতার রাজপথে নামতে চলেছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন
বেস্ট কলকাতা নিউজ : বিহারের পর বাংলা ৷ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধনী (এসআইআর) প্রক্রিয়া চালানোর জন্য ইতিমধ্যেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন ৷ এই আবহে প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আজ শনিবার কলকাতার রাস্তায় নামতে চলেছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন ৷এসআইআর-এর নামে ঘুরপথে এনআরসি করা হবে ৷ এই অভিযোগে আজ দুপুর ২ টোয় কলেজস্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করবে মানবাধিকার সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ ৷ তাদের আরো অভিযোগ, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বহু মানুষের ভোটাধিকার এবং নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে । তাই এসআইআর বাতিলের দাবিতে এদিন সকলকে মানুষকে এই মিছিলে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা ৷ শুক্রবার এই নিয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করা হয় ৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন নো এনআরসি মুভমেন্ট, এপিডিআর, জনস্বাস্থ্য মোর্চা, সংগ্রামী শ্রমিক মঞ্চ-সহ একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা ।
সংগঠনগুলির বক্তাদের দাবি, “আমরাও নির্ভুল ভোটার তালিকা চাই । এসআইআর নয়, নির্ভুল ভোটার তালিকা রিভিশনের মাধ্যমে হয়ে গিয়েছে । তারপরও দু’বার আপডেট করা হয়ছে । এটা তালিকা তৈরির জন্য হচ্ছে না । ভোটার তালিকা তৈরির নামে, ১৮ বছর ও তার উর্ধ্বে বয়স প্রতিটি মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে SIR-এর ফর্ম পূরণ করতে হবে । সেই সঙ্গে, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য প্রতিটি আবেদনকারীকে সেলফ ডিক্লারেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে । জন্মস্থান ও জন্ম তারিখের সঙ্গে বাবা-মায়ের জন্মস্থান ও জন্ম তারিখ প্রমাণ-সহ বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে হবে । এমনকী, স্বামী ও স্ত্রীর তথ্যও নেওয়া হবে । কিন্তু এগুলির কোনও কিছুই ভোটার কার্ডে উল্লেখ থাকবে না । তাহলে নেওয়া হচ্ছে কেন ?”

তাঁরা আরও বলেন, “তারা এই সব তথ্যের ভিত্তিতে NRC করবে । ২০১৯ সালে এই তথ্যগুলোই জনগণনার সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল । কিন্তু তখন নাগরিক আন্দোলনের চাপে সরকার তা করতে পারেনি । নাগরিকত্ব প্রমাণের দায়িত্ব ব্যক্তির উপর চাপানো হয়েছে । এটা ভারতীয় ন্যায় ব্যবস্থার বিপরীত । তাছাড়া, নির্বাচন কমিশনের এই বিষয়ে অধিকার নেই । এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রায় রয়েছে । স্বল্পশিক্ষিত দরিদ্র দেশে যে সমস্ত নথি চাওয়া হচ্ছে, তা অধিকাংশ মানুষের কাছে পাওয়া যাবে না । অথচ, যে নথি পাওয়া যাবে তা ওরা নেবেন না ।”
বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ মানবাধিকার সংগঠনগুলির : তাঁদের দাবি, আধার কিংবা ভোটার কার্ড কোনওটাই নির্বাচন কমিশন গ্রাহ্য করছে না ৷ অর্থাৎ, সাধারণ মানুষ ঠিকমতো নথি জমা দিতে না-পারলে তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে ৷ এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আধারকে মান্যতা দেওয়ার কথা বললেও কমিশন তা শুনছে না । মানবাধিকার সংগঠনের যৌথমঞ্চের অভিযোগ, বিজেপি বিদেশি তাড়ানোর কথা বললেও বিহারে তারা প্রকৃত নাগরিকদের এবং মহিলাদের তাড়িয়েছেন ৷ জীবিত মানুষকে মৃত বানিয়ে দিয়েছে । সারা দেশে সরকার এটাই করবে । যাঁরা বিজেপিকে ভোট দেন না, তাঁদের নাম কেটে, অন্য রাজ্য থেকে বিজেপির ভোটার এনে ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের ।
মানবাধিকার সংগঠনের আরো দাবি, বিভিন্ন রাজ্যে ইতিমধ্যেই ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির নির্দেশ এসে গিয়েছে । গরিব, দলিত, ভূমিহীন, সংখ্যালঘু ও সর্বোপরি মহিলারা ব্যাপকহারে এদের শিকার হবে ৷ আসলে এটা এনআরসি এবং আরএসএসের শতবর্ষে হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ । ভোটাধিকার আর সর্বজনীন থাকছে না । এরা পিতৃতান্ত্রিক, ব্রাহ্মণ্যবাদী রাষ্ট্র চাইছে, যেখানে দলিত, আদিবাসী, মুসলমান এবং মহিলারা হবেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে অভিযোগ মানবাধিকার সংগঠনের যৌথমঞ্চের ।

