দুরন্ত রকেট গতিতে উত্থান শাসক ঘনিষ্ঠ শাহজাহানের , মারাত্মক সব অভিযোগ উঠে আসছে বাহুবলী এই নেতার কাণ্ডকারখানা নিয়েও
বেস্ট কলকাতা নিউজ : পুলিশকে এর আগেও এমন চরম ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়েছিল শাহজাহানের ডেরায় গিয়ে। তবে সেবার ছিল রাজ্য পুলিশ। তবে এবারে শাহাজাহানের ‘গুহা’য় গিয়ে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সিকেই পড়তে হল কয়েকশো উন্মত্ত শাহাজাহান অনুগামীর মারাত্মক রোষের মুখে। মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হল এমনকি এক ইডি অফিসারেরও মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হল। ইডির অফিসার-সহ অন্য কর্মীদের মারতে মারতে বের করা হল শাহাজাহানের বাড়ি থেকে। মূলত এলাকায় শাহাজাহানের এই বিরাট প্রভাবের শুরুটা কবে থেকে? কী তার কাণ্ড-কারখানা! তার বিরুদ্ধে আর কত মারাত্মক সব অভিযোগ রয়েছে…জেনে নিন বিশদে।
উল্লেখ্য , ইডি গতকাল শুক্রবার সকাল-সকাল সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল রেশন দুর্নীতির তদন্তে। মূলত ইডির অফিসাররা তল্লাশিতে গিয়েছিলেন এলাকারই দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা তথা সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শেখ শাহাজাহানের বাড়িতে । সূত্রের দাবি, রেশন দুর্নীতিতে ধৃত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ এই শাহাজাহান। এদিন সকালে তাঁর বাড়িতে ইডি হানার খবর ছড়িয়ে পড়তেই কয়েকশো জনতা দ্রুত তাঁর বাড়ির সামনে এসে জড়ো হয়। ততক্ষণে ইডির অফিসাররা ঢুকে গিয়েছিলেন তৃণমূলের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ শেখ শাহাজাহানের বাড়িতে।
তারপর ঘটনাক্রমে শাহজাহান অনুগামীরা এরপর ইডির অফিসারদের উপর চড়াও হয় । মারতে মারতে তাঁদের বের করা হয় তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে। বাড়ির বাইরে বড় রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল ইডির গাড়ি। এমনকি বেপরোয়া ভাঙচুর চলে সেই গাড়িতেও। অবশেষে জনতার তাড়ায় প্রাণ ভয় ইডির লোকজন ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় । তাতেও নিস্তার মেলেনি। বাঁশ-পাথরে ঘায়ে মাথা ফেটে যায় ইডির এক অফিসারের।
কে এই শাহাজাহান? ২০১১ সালের আগে সিপিএমের সমর্থক ছিলেন শাহাজাহান। তবে ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তার। ক্রমেই সন্দেশখালি ও আশেপাশের এলাকার ‘ত্রাস’ হয়ে ওঠে এই শাহাজাহান। এখন তো শাহাজাহানের ইশারাতেই নাকি এলাকায় গাছের পাতা নড়ে। এমনই প্রভাব তার। জোর করে জমি-ইটভাটা-মাছের ভেড়ি দখলের অভিযোগ রয়েছে এই বাহুবলী তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। সড়বেড়িয়ায় বাড়ি হলেও দূরে মালঞ্চেও তার প্রভাব কিছুমাত্র কম নয়। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঘোষপুরে চিংড়ির কারবারও কব্জা করেছে শাহাজাহান। বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ শাহাজাহান। সরবেড়িয়া ১ নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতিও তিনি। আগে সরবেড়িয়া পঞ্চায়েতের উপ-প্রপধান ছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই তৃণমূল নেতা। বিজেপির অভিযোগ, ন্যাজাটের ভাঙ্গি পাড়ায় তাদের কর্মী প্রদীপ মণ্ডল খুন ও এক কর্মী নিখোঁজের ঘটনায় শাহজাহানেরই হাত রয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে এই মামলায় চার্জশিটে শাহজাহানের নাম মেলেনি।
এদিকে , বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তাপস ঘোষ আরও বলেন, “ওর নামে থানা অভিযোগই নেয় না। থানা-টানা ওর কেনা। স্টেট আইবি চার্জশিট থেকে ওর নাম বাদ দিয়েছে। শাহাজাহান জোর করে আদিবাসীদেরও জমি নিয়ে নিয়েছে। জমি কেড়ে নিয়ে ভেড়ি তৈরি করে দিল। শাহাজাহান ওই এলাকায় আমাদের পার্টির কাজ করতে দেয় না। এবারের পঞ্চায়েত ভোটে ২টো ব্লক অফিস সশস্ত্রভাবে দখল করে রেখেছিল। পঞ্চায়েত ভোটের দিন আমাদের ৮ কর্মীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। সিপিএমে যখন ছিল তখন এত অত্যাচারী ছিল না। ২০১৫-১৬ সাল থেকে অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে।”