রাম সেতু নির্মাণ করেছিল বানরসেনারাই! পাথর জলে ভাসছে অদ্ভুতভাবেই , গবেষণা কী বলছে? জেনে নিন একবার
বেস্ট কলকাতা নিউজ : মাঝ সাগরে অদ্ভুত ভাবে ভেসে রয়েছে রাম সেতু! এর ইঞ্জিনিয়ার মানুষ নয়, বানর! বানর বাহিনী নাকি এই রাম সেতু তৈরি করেছে। এই সেতু প্রকৃতির একরকম বিস্ময়কর নিদর্শন, যাকে নিয়ে কোনো শেষ নেই জল্পনা কল্পনার। সেই আদিকাল থেকে ধর্মীয় বিশ্বাস-অবিশ্বাস ঘিরে নানান তর্ক বিতর্ক রয়েছে রাম সেতু নিয়ে। রাম সেতুর এপার অর্থাৎ ভারত থেকে ওপারের শ্রীলঙ্কাকে নাকি দেখা যায় দূরবীন দিয়ে। রাম সেতুর পাথরগুলি অদ্ভুতভাবে ভাসছে সমুদ্রের উপর। এমনটাই উল্লেখ রয়েছে বাল্মিকীর রামায়ণে। রাম সেতু কি আদৌ মানুষের তৈরি? নাকি সত্যি বানর বাহিনী তৈরি করেছে? নাকি প্রকৃতির আবিষ্কার? কী বলছে গবেষণা?
রাম সেতু বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত। কারোর কাছে পরিচিত আদম সেতু নামে, কারো কাছে সেতু বাঁধ, আবার কারো কাছে নল সেতু নামে। তবে বেশিরভাগ মানুষ এই সেতুকে বলেন রাম সেতু। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক কাহিনী। যে কাহিনী মানুষ অভিভূত হয়ে পড়েন বারংবার শুনে। এই সেতু তৈরির পিছনে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন একদল বানর। এই সেতুর প্রত্যেকটি পাথরে আশ্চর্যজনক ভাবে শ্রী রামের নাম খোদাই করা রয়েছে।
কবে কিভাবে রাম সেতু তৈরি হয়েছিল? এর আদৌ কোন ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে কিনা এই নিয়ে কয়েক বছর আগে জোর কদমে শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা।। ভারত এবং শ্রীলঙ্কাকে সেতুর আকারে এক টুকরো ভূখণ্ড জুড়ে রেখেছে, বর্তমানে যার বেশিরভাগ অংশ জলের তলায়। এর গবেষণা কাজে সম্মতি দিয়েছিল ভারতের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনস্ত কেন্দ্রীয় নৃতাত্ত্বিক গবেষণা পরিষদ। তখন বলা হয়েছিল রেডিওমেট্রিক পদ্ধতিতে এই সেতুর বয়স বোঝা যাবে। এক্ষেত্রে যে কোন বস্তুর বয়স নির্ধারণ করতে ব্যবহার করা হবে অ্যাকটিভ বিকিরণ ও টিএল ডেটিং পদ্ধতি। যদিও ২০০৭ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছিল মানুষ যে এই সেতু তৈরি করেছে সেই তথ্য সম্পূর্ণ সঠিক নয়। গবেষণার কাজে সাহায্য করতে মাঝ সমুদ্রে দুটি বড় জাহাজ নামার কথা, তারা সেই সেতুর প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মিটার নিচে থেকে বালি সংগ্রহ করবে।
রাম সেতু মানুষ বানিয়েছে না বানর সেনাবাহিনী? এই নিয়ে বিতর্ক আর পৌরাণিক কাহিনীর জল ঘোলার যেন কোনো শেষ নেই। পৌরাণিক কাহিনী বলছে, বানর সেনাবাহিনী রামের আদেশে এই সেতু তৈরি করেছিল। সেতুর কার্বন পরীক্ষা এবং বিশ্লেষণ করে রামায়ণের সাথে সময়কাল মিলে যায়। যদি এখনো পর্যন্ত সেতুটি যে কোন মানুষের তৈরি তার কোন শক্তপোক্ত প্রমাণ মেলেনি। আজ সেতু জলের তলায় কিন্তু ১৫ শতকের দিকে নাকি এই সেতু পায়ে হেঁটে পার হওয়া যেত। ১৪৮০ সাল নাগাদ এই সেতু সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে সম্পূর্ণভাবে ভাসমান ছিল। কিন্তু একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেতুটি বিধ্বস্ত হয়ে এখন সমুদ্রের তলায় তলিয়ে গিয়েছে।
চুনা পাথরের তৈরি এই সেতুকে দেখতে আজও সমুদ্রের ধারে এসে হাজির হন লক্ষ লক্ষ পর্যটক। এই সেতুর তৈরির সময় যে সমস্ত পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল সেখানে খোদাই করা আছে রামের নাম। মানুষ আজও বিশ্বাস করেন পাথরগুলো নাকি ডুবে যায়নি রাম নাম খোদাই করার জন্যই। এখনো জলে ভাসছে সেই পাথর । যদি ওর পিছনে আবার বৈজ্ঞানিক যুক্তি রয়েছে। পাথর জলে ভাসা একেবারেই অবিশ্বাস্য ব্যাপার নয়। আসলে কোন পাথর জলে ভাসবে না ডুববে তার নির্ভর করে তার প্লবতার ওপর। তার প্লবতা বোঝা যায় না কোন পাথরকে বাইরে থেকে দেখে । আসলে বিশেষ কিছু পাথর আছে কিছুটা স্পঞ্জের মত যাদের অভ্যন্তরীণ গঠন। যার মধ্যে বাতাসের থলি থাকে। পাথর গুলি ওজনে ভারী কিন্তু তা সহজেই জলে ভাসতে পারে তার মধ্যে বাতাস থাকায়।
জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ‘প্রজেক্ট রামেশ্বরম’ এর তথ্য অনুযায়ী, চুনা পাথরের এই সেতু একসাথে জুড়েছে রামেশ্বরম দ্বীপ আর শ্রীলঙ্কাকে । এই সেতুটি ছিল প্রায় পৌনে ১ লক্ষ বছর আগের। কিন্তু রেডিও কার্বন কপি অনুযায়ী, এই সেতু আবিষ্কার হয়েছে ৭ হাজার থেকে ১৮ হাজার বছর আগে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। সমুদ্রের বুকে কিভাবে ভাসমান পাথর দিয়ে এত বড় সেতু তৈরি হল তা আজও রহস্যজনক ব্যাপার সমগ্র বিশ্বের কাছে। হিন্দু পুরাণ বলছে, রামের স্ত্রী সীতাকে অপহরণ করে রাবণ শ্রীলঙ্কায় রেখে দিয়েছিলেন। সীতাকে উদ্ধার কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে বানর সেনা। তারাই এই সেতু তৈরি করেন সমুদ্র পেরিয়ে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছানোর জন্য। আজও এই ভাসমান পাথরের দেখা মেলে তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে ।