কোন্নগরের অ্যাথলিট অভিজিতের জাতীয় মিটে যাওয়া থমকে আছে অর্থাভাবের কারণে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

সুমন কারাতি, হুগলী : ছোট থেকেই নিয়ম করে তিনি হাঁটতেন,দৌড়াতেন।স্কুলে তাঁর খেলাধুলার প্রতিভা দেখে মুগ্ধ ছিলেন তাঁর শিক্ষকরাও।বড় হয়ে ট্রাক এন্ড ফিল্ডে নাম করবেন,এই আশাতেই বিদ্যালয় স্তর থেকেই বিভিন্ন ইভেন্টে নাম দিতেন কোন্নগরের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।সাইয়ের দুই কোচের তত্ত্বাবধানে শিখতেও থাকেন তিনি।দুই ভাইয়ের বড় অভিজিৎ যখন মাধ্যমিক দিচ্ছেন তখনই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর বাবা।সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে অভিজিতের ঘাড়ে।কিন্তু খেলাধুলার জগৎ থেকে সরে আসেননি তিনি।জেদ ও অধ্যাবসায় তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়েছে অ্যাথলেটিক ফিল্ডে।মূলত হাঁটা প্রতিযোগীতাতেই অংশ নিতে থাকেন অভিজিৎ।প্রথম সুযোগ আসে ১৯৯২ সালে।রাজ্য স্টেট মিটে অংশ নেন অভিজিৎ।৪২ তম রাজ্য অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটাতে ব্রোঞ্জ পান তিনি।এর ঠিক পরের বছর এই প্রতিযোগিতায় আবার ব্রোঞ্জ পান অভিজিৎ।সারাবাংলা ক্রস কান্ট্রি ৫ কিলোমিটার দৌঁড়ে অষ্টম হন তিনি।সংসারের পুরো দায়িত্ব সামলেও কখনো থেমে থাকেনি তার হাঁটা।এবছর ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের ১০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেয়া হয় অভিজিৎকে।একের পর এক রাজ্য মিটে অংশ নিয়ে সাফল্য পেয়েও উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে কোন্নগরের অরবিন্দ পল্লীর বাসিন্দা অভিজিৎ।চল্লিশ পেরিয়েছেন অভিজিৎবাবু।সাংসারিক চাপ সামলাতে তাকে বেছে নিতে হয়েছে হকারিকেও।হাওড়া মেন লাইনের ট্রেনে পাপড়ের থলে হাতে হকারি করেন অভিজিৎ।বালি জুটমিলে অস্থায়ী কাজও করেন সংসার চালাতে।আয়ও যৎসামান্য।এখনো নিয়ম করে চালিয়ে যাচ্ছেন হাঁটা।বিভিন্ন প্রতিযোগীতাতেও অংশ নেন তিনি।এতগুলো রাজ্য মিট করার পর সম্প্রতি তার কাছে সুযোগ এসেছে জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার।আগামী ১০ই জানুয়ারি ২০২০ কেরলে আয়োজিত হতে চলেছে জাতীয় মাস্টার্স অ্যাথলেটিক মিট।সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কোন্নগরের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে।৭ই জানুয়ারি কোলকাতা থেকে বাকি অ্যাথলিটদের নিয়ে যাওয়া হবে।কিন্তু অভিজিৎ যাবেন কেমন করে?তার যে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা।ভারতবর্ষের অত দূরের একপ্রান্তে গিয়ে জাতীয় অ্যাথলিট মিট করবেন,এমন অবস্থা যে নেই তার।একটা চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন অভিজিৎবাবু।উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল থেকে ক্রীড়া মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের দ্বারস্থ হয়েছেন,এমনকি নবান্নের দারস্থও হয়েছেন তিনি।কিন্তু কোনো কাজ জোটেনি এই অ্যাথলিটের।তার মধ্যে আবার জাতীয় মিট।সময় খুবই অল্প।তাই অভিজিৎবাবু ভেবে উঠতে পারছেননা কি করবেন।শেষ পর্যন্ত কি অর্থাভাবে তার জাতীয় মিটে যাওয়া স্থগিত হয়ে যাবে?এখন একটা স্পনসরের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন অভিজিৎবাবু।তা সে স্পনসর সরকারি হোক বা বেসরকারি।জাতীয় মিটে যাওয়ার জন্য সাহায্যের আশায় দিন কাটছে অভিজিৎবাবুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *