অবশেষে চাষ প্রথা ভেঙে , পদ্ম চাষিদের মরিয়া উদ্যোগ দুর্গাচরণে পদ্মের জোগান চালু রাখতে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : দেবাদিদেব মহাদেবের মানস পুত্র ‘রাবণকে’ বধ করতে অকালে দুর্গা পুজোর সংকল্প করেছিলেন রামচন্দ্র। সেই কারনে এই পুজো ‘অকাল বোধন’ নামে পরিচিত। শরৎকালে মহাসন্ধির সন্ধিক্ষনের অন্ধকারকে আলোকিত করতে রামচন্দ্র ১০৮ প্রদীপ জ্বালানোর পাশাপাশি দেবীর চরণে ১০৮ নীল পদ্ম দিয়ে ওই পুজো সম্পূর্ণ করেছিলেন। সেই থেকে আজও দুর্গা পুজোয় ১০৮ পদ্মফুল দেবীর চরণে নিবেদন করার রীতি চালু আছে। কিন্তু জলাশয় ঘাটতির কারণে পদ্ম অমিল হতে থাকায় সেই রীতি বজায় রাখাই এখন দুস্কর হতে বসেছে। একটা সময় ছিল যখন রাজ্যের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও পদ্মের চাষ হত। কিন্তু নগরায়নের জাঁতাকলে ক্রমশ কমছে খাল, বিল, জলাশয়। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে পদ্ম চাষে। এখন দিন যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে পদ্মের জোগান ঘাটতি। এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় হতাশা বাড়ছে পদ্ম চাষিদের।

হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন মাত্র বাকি রয়েছে। তারপরই দেবীপক্ষে আবির্ভূতা হবেন দূর্গা। দেবীর চরণে পদ্ম তুলে দিতে পদ্ম ফুল চাষিরা এখন কঠোর পরিশ্রমে ব্যস্ত। বছরের অন্য সময়ে পদ্মের চাহিদা তেমন না থাকলেও দুর্গা পুজোয় সময় চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। তখন এই রাজ্যের পুজো সহ ভিন রাজ্যেও পুজোতে পদ্মের জোগান দেওয়া দুস্কর হয়ে পড়ে।

পদ্ম চাষি অমিত মালিক ও সন্তু বেরা বলেন, নগরায়নের দাপটে জলাশয়ের ঘাটতি যে হয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। তবুও মুনাফার আসায় পূর্ব বর্ধমান জেলা সহ বিভিন্ন জায়গার চাষিরা কেউ জলাশয় খুঁজে নিয়ে, আবার কেউ একটু নিচু চাষের জমিতে এখন পদ্ম চাষ করছেন। সন্তু বেরার বাড়ি হাওড়া জেলার বাগনানে। তিনি পূর্ব বর্ধমান জেলার বহু ফুল ব্যবসায়ীকে পদ্ম ফুল সরবরাহ করেন।

দিন কয়েক আগে সন্তু বেরা জামালপুরের ফুল ব্যবস্যায়ী স্বরুপ পাল কে পদ্ম ফুল দিতে আসেন। তখন তাঁর কাছে পদ্ম ফুল চাষের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বলেন, ‘বড় জলাশয় বা দিঘির পরিবর্তে জল ধারণে সহায়ক চাষ জমি আমরা লিজে নিয়ে থাকি। সেখানেই বিশ্বকর্মা পুজোর আগে আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে পদ্ম চাষ শুরু করি। এই পদ্ধতিতে পদ্ম চাষের মেয়াদ থাকে চল্লিশ দিন। এইভাবে চাষ করে গড়ে প্রতিদিন ১৫০-২০০ পিস করে পদ্ম পাওয়া যায়।’

পদ্ম চাষি সন্তুর কথায়, ‘এখন পদ্ম ফুল চাষের খরচ আগের থেকে বেড়েছে। নিজের জমি থাকলে বিকল্প পদ্ধতিতে পদ্ম ফুলের চাষ করলে বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকার মত খরচ হয়। আর জমি লিজ নিয়ে পদ্ম চাষ করলে সেটা কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকায় দাঁড়াবে। বছরের অন্য সময়ে পদ্ম ফুলের চাহিদা তেমন একটা থাকে না। মূলত বিশ্বকর্মা পুজোর পর দুর্গা পুজো থেকে শুরু করে কালি পুজো পর্যন্ত চাহিদা বেশী থাকে।’ সন্তু দাবি করেন, এবছর বিশ্বকর্মা পুজোর কয়েকদিন পর থেকে প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে রোদ না থাকা ও টানা বৃষ্টিপাতের জেরে পদ্ম চাষে ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে পদ্মের কুঁড়ি ও পাতা। এর জন্য পুজোর বাজারে পদ্মের যোগান ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

একই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন ভাতারের নতুন গ্রামের পদ্ম চাষি অমিত মালিক। তিনি বলেন, ‘জলাশয়ে চৈত্র থেকে অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত মূলত পদ্ম চাষ হয়। পদ্ম ফুলের চাহিদা দুর্গা পুজো থেকে কালি পুজো পর্যন্তই বেশী থাকে। কিন্তু অতি সম্প্রতি একটানা বৃষ্টিতে ভাতারের নতুনগ্রাম ও বড়বেলুন এলাকায় যাঁরা পদ্ম চাষ করেন তাঁদের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তার জন্য পুজোয় পদ্মের জোগান ঘাটতি দেখা দিতে পারে।’ অমিত এও জানান, ‘এখনই পাইকারি বাজারে এক পিস পদ্মের দাম হয়ে গিয়েছে ১৫ টাকা। মহালয়ার পর থেকে দাম বেড়ে গিয়ে প্রতি পিস পদ্ম ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এমনটা হলে তখন জেলার খোলা বাজারেও পদ্মের দাম আরও খানিকটা চড়ে যাবে বলে অমিতের দাবি।’

পদ্ম ফুল চাষিরা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘শহর ও মফস্বলের পুজো উদ্যোগতারা বিশাল মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরি করে পুজো করছেন। পুজোর কটাদিন গোটা বাংলা আনন্দে মাতোয়ারা থাকে। কিন্তু পদ্ম চাষের সংকট নিয়ে পুজো উদ্যোগতা বা সরকার, কেউই মাথা ঘামাচ্ছেন না। এমনটা চলতে থাকলে আগামিতেবাংলার দুর্গা পুজো পদ্ম বিহীন দুর্গোৎসবে পরিণত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *