অবশেষে বাজারে নজরদারির দাবি উঠলো আলুর লাগামছাড়া দামে রাশ টানতে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : শুধুমাত্র আলুসেদ্ধ আর ভাত— এই খেয়েই প্রতিদিন সকালে বিজয় সিংহ বেরিয়ে পড়েন রিকশা নিয়ে। বছরভর তাঁর এমনই মেনু । কিন্তু তিনি রিকশা থামিয়ে শহরের রথবাড়ি বাজারে গিয়ে ফিরে আসেন একরাশ ক্ষোভ নিয়ে।কিন্তু কেন? তিনি বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে পাতে এখন আলুসেদ্ধটুকুও জুটবে না। মালদহেও আলু ২৫ টাকা ছুঁয়ে ফেলেছে প্রতি কেজিতে। ব্যবসায়ীদের স্পষ্টম জবাব, আলুর দাম নাকি আরও বাড়বে।’’ কি খাব আলুর দাম আকাশ ছোঁয়া হলে? এই প্রশ্ন করে অবশেষে বিজয় বেরিয়ে গেলেন ফাঁকা রিকশা নিয়ে।
সত্যিই তো, সপ্তাহ খানেক আগেও যেখানে জেলার বাজারে আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা। এখন সেই আলুই ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে বিকোচ্ছে বাজারে ।এও শোনা যাচ্ছে, আলুর দাম নাকি আরও বাড়বে। মালদহের প্রশাসনিক ভবনের সামনেই রয়েছে সুফল বাংলার স্টল । সেখানেও আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২১ টাকা দামে । এক কর্মী বলেন, ‘‘গত সপ্তাহেই আলু বিক্রি করেছি ১৮ টাকা কেজি দরে। এখন সেই আলুই বিক্রি হচ্ছে ২১ টাকা দামে। কেন আলুর দাম বাড়ছে, তা আমরা বলতে পারব না।’’
আমের জেলা হলেও মালদহ পিছিয়ে নেই আলু উৎপাদনেও। আলু চাষ হয় জেলায় প্রায় ১৫৩ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয় গড়ে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আলু । এ বারও গত বারের তুলনায় জেলায় ২ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। জেলায় পর্যাপ্ত হিমঘর নেই। চাষিদের একাংশ জানিয়েছেন হিমঘরে ঠাঁই না হওয়ায় বাড়ির উঠোন, মাঠেই পচে আলু নষ্ট হচ্ছে বলে ।
দামি’ আলু
• আলু চাষ হয়েছে জেলার ১৫৩ হেক্টর জমিতে
• উৎপাদন হয়েছে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন
দাম (প্রতি কেজি)
• খুচরো বাজার ২৫-২৬ টাকা
• সুফল বাংলা স্টল ২১ টাকা
• পাইকারি বাজার ২১ টাকা
দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ
• বর্ধমানে এ বারে আলুর কম উৎপাদন হয়েছে
• মালদহ থেকে আলু গিয়েছে বর্ধমানে
• বর্ধমানের হিমঘর থেকেই আবার জেলায় আলু আসছে
• এদিকে ফড়েদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠেছে মালদহের হিমঘর গুলিতে
• চাষিদের একাংশের আলু মাঠেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে
এদিকে অভিযোগ উঠেছে পুরাতন মালদহ, গাজলের বহু গ্রামেই এখন আলু পচার গন্ধে বাতাস ভারী হচ্ছে বলেও। এক আলু চাষি পিন্টু রাজবংশী এও বলেন, ‘‘ জেলায় অনেক কালোবাজারি হয়েছে আলুর বন্ড নিয়ে। ফড়েরা আলু হিমঘরে রেখেছে বন্ড কিনে। আর আমাদের মতো চাষিরা জায়গা পাইনি। চাষিদের আলুনষ্ট হচ্ছে মাঠে, ঘরে পচে ।’’
কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন উঠছে আলুর দাম জেলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায়। আরও অভিযোগ উঠেছে, আলু বেআইনি ভাবে মজুত করে কৃত্রিম ভাবে সঙ্কট তৈরি করা হচ্ছে। তার উপরে প্রশাসনের নজরদারিও নেই বলে অভিযোগ।এদিকে সাধারণ মানুষও এখন থেকেই বাজারে নজরদারির দাবি তুলেছেন আলুর লাগামছাড়া দামে রাশ টানতে ।এই প্রসঙ্গে মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (বিপণন) শম্পা হাজরা বলেন, ‘‘বাজারে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। প্রয়োজনে বাড়ানো হবে আরও নজরদারি ।’’