কোনো বিগ্রহ নেই সূর্য মন্দির হওয়া সত্ত্বেও , এমনকি হয় না কোনো পুজো, জেনে নিন কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে ওড়িশার এই মন্দিরে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : মন্দির বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক ছবি, সেখানে থাকবে দেব- দেবীর মূর্তি,পুজোয় ব্যস্ত থাকবেন পুরোহিত। দূর- দূরান্ত থেকে ভক্তবৃন্দদের আগমন লক্ষ্য করা যাবে সেই মন্দির প্রাঙ্গণে । কিন্তু এমনও কিছু মন্দির রয়েছে যা রহস্য লুকিয়ে রেখেছে নিজের গর্ভে । এমন কিছু শিউরে ওঠার মতো ঘটনা আড়াল করে রেখেছে যা অনেকেরই অজানা। এবার আলোচনা করা যাক তেমনই এক মন্দির সম্পর্কে। এই মন্দিরটি ওড়িশায় অবস্থিত। ১২৫০ সালে এই মন্দিরটি নির্মাণের নির্দেশ দেন রাজা নরসিংহ দেব । তাঁর নির্দেশ অনুসারে মন্দিরটি তৈরি হলেও ওড়িশার বহু প্রাচীন এই কোনারক সূর্য মন্দিরে আজ পর্যন্ত কখনও পুজো হয়নি।
মন্দিরটি আকার হল একটা বিশাল রথের মতো। ধূসর বেলে পাথর দিয়ে এই সম্পূর্ণ মন্দিরটি তৈরি করা হয়। কিন্তু মন্দিরটি যখন তৈরির কাজ শুরু হয় তখন এক অদ্ভুত নিয়মে শ্রমিকদের বেঁধে দিয়েছিলেন রাজা নরসিংহ দেব । তিনি নিয়ম তৈরি করেছিলেন যে ,প্রতিদিন ১২০০ শ্রমিক কাজ করবে কোনারক সূর্য মন্দির প্রতিষ্ঠা করার জন্য । শ্রমিকের সংখ্যা একজনও কম বেশি হবে না ১২০০ এর থেকে । আর এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ সমাপ্ত করে ফেলতে হবে । যদি কোন দিন ১২০০ শ্রমিকের মধ্যে একজন শ্রমিকও কম বেশি হয় তাহলে সকলের প্রাণ দণ্ড হবে।
শ্রমিকরা মাথা পেতে নিয়েছিল এই নিয়ম। শুরু করেছিল সূর্য মন্দির তৈরি করার কাজ । পুরাণে কথিত রয়েছে, মন্দিরে কাজ করার সময় গর্ভবতী হন এক শ্রমিকের স্ত্রী। সেই সময় ওই শ্রমিক স্ত্রীর কাছে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রী পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেও তাঁর কাছে মন্দিরের কাজ ছেড়ে বেরিয়ে আসার কোনো সুযোগ ছিল না। পরবর্তীতে তাঁর পুত্র ধর্মদাস যখন মায়ের কাছে নিজের পিতার পরিচয় জানতে চান তখন তাঁর মা তাকে পিতার এই বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে জানান । ধর্মদাস বাবার কাছে এসে পৌঁছান। কিন্তু সেই সময় ৭ দিন বাকি ছিল মন্দির তৈরির কাজ । কাজ যাতে তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় তার জন্য ধর্মদাস কাজে হাত লাগায়।
তখনও পর্যন্ত স্থাপন করা হয়নি মন্দিরের মঙ্গল ঘট । সে মঙ্গল ঘট নির্মাণের কাজেই সাহায্য করে । কিন্তু ১২০০ শ্রমিকের প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দেয় তাঁর সাহায্যেরদরুন । এর নেপথ্যে ছিল রাজার সেই অদ্ভুত নিয়ম। ধর্মদাস তখন মন্দিরের চূড়া থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিজেই আত্মহত্যা করেন ১২০০ জন শ্রমিকের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে। প্রচলিত কথা অনুযায়ী জানা যায় , তারপর মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হলেও মন্দিরে আর কখনও পুজো শুরু হয়নি । কোনারক সূর্য মন্দিরে বর্তমানে নেই কোন সূর্যদেবের মূর্তি। এখনও পর্যন্ত স্থানীয় মানুষের কাছে কোনারক সূর্য মন্দির রাতের অন্ধকার নামলেই হয়ে ওঠে রহস্যের চাদরে মোড়া একটা জায়গা ।