জলপাইগুড়ির অন্যতম হেরিটেজ রুপশ্রী এবং রুপমায়া সিনেমা হল

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

জলপাইগুড়ি : সাতের দশক থেকে নয়ের দশক, যারা জলপাইগুড়ি শহরের কলেজ গুলো তে পড়াশোনা করেছে, আমি নিশ্চিত তাদের এই ছবি গুলো দেখলেই ভেতর থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস, বাঁধ ভাঙা জলের মতো বাইরে বেড়িয়ে আসতে চাইবে।

আমাদের বা তারও আগে, অথবা আমাদের কলেজ জীবনের কিছু পরেও, কলেজের সংগে, সিনেমা হলের একটা নিবিড় সম্পর্কের কথা কারোই বোধকরি অস্বীকার করবার জায়গা নেই। ১৯৮৬ সালে ময়নাগুড়ি হাইস্কুল থেকে, মাধ্যমিক পাশ করবার পর, বাবার বন্ধু স্থানীয়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বর্গীয় ও পরম শ্রদ্ধেয় পিযুষ কান্তি কর্মকার মহাশয়ের পরামর্শে (চালান করে দেওয়া বললে সঠিক হবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি ময়নাগুড়ি হাই স্কুলে না পড়ে, জলপাইগুড়িতে কমার্স কলেজে ভর্তি হই। পুরো নাম, আনন্দ চন্দ্র কলেজ অব কমার্স।

কমার্স কলেজ আর রূপশ্রী সিনেমা হল, অনেক টা কলেজের “কমন রুম” এর মতো ছিল। আমাদের অফ-পিরিয়ড বা ভালো না লাগা ক্লাস গুলো আমরা সহপাঠীরা ওখানেই সারতাম। অবশ্য বহুদিন এক সিনেমা চললে “রূপমায়া” আর দিপ্তী সিনেমা ছিল দ্বিতীয় অপশন। আরো পরে শ্রীদয়াল।

কংগ্রেস পরিবারের ছেলে হবার সুবাদে, কমার্স কলেজ ছিল আমার আদর্শ। সেই সময় ছাত্রপরিষদ মানেই যেন কমার্স কলেজ এমন একটা ব্যাপার ছিল। একাদশ আর দ্বাদশ, দুই বছরেই, আমার রাজনৈতিক কার্যকলাপে সন্তুষ্ট হয়ে, কলেজের দাদারা, আমাকে আশাতীত ক্ষমতা দেওয়ায়, ময়নাগুড়ি হাইস্কুলে এক সাথে পড়া বন্ধুদের প্রথম বর্ষে কলেজে ভর্তি হতে তেমন বেগ পেতে হয় নি। ১৯৯০ সালে কলেজ থেকে বের হবার পরেও দুই বছর কলেজের মায়া ছাড়তে পারিনি, বার বার বিভিন্ন সমস্যায়, কখনও কোনো অনুষ্ঠানে দ্বায়িত্ব নিয়ে, সেই কাজ সম্পন্নকরণে ত্রুটি রাখিনি।

সেই সময়ের আমার এবং আমার মতো শহরের বহু মানুষের প্রাণের প্রিয় রূপশ্রী সিনেমা হলটি আজ আর নেই, সেখানে আধুনিকতার নাম করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দের গ্রাস করবার জন্য তৈরী হয়েছে শপিং মল। বাকি সিনেমা হল গুলোও বন্ধ প্রায়। এর মধ্যে একটা নাটকের অনুষ্ঠানে দিপ্তী সিনেমা হলে গিয়েছিলাম, সিমেন্টের দেওয়ালের গায়ে ইঞ্চি চারেক একটা হাত ঢোকাবার মতো গর্ত যেখানে শো চালুর আগে তিনটে হাত ঢুকেই থাকতো, সেই হাতের উপর দাঁড়িয়ে আরো চার জন দেওয়াল ধরে চাপ দিত সেই হাতের উপর, সিনেমা শুরুর আগে ৫০০ মানুষ ভিড় করে থাকতো হল চত্বরে, সেই টিকিট কাউন্টার এখন আগাছায় ঢাকা। মানুষের জীবনের সাথেও কত মিল প্রেক্ষাগৃহের। সত্যি বড়ই অদ্ভুত এই জীবন। একদিন যেখানে ছিল শুধুমাত্র মানুষের মাথা আজ সেই জায়গাতেই শুধুমাত্র শ্যাওলা আর নীরবতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *