বৈশাখের শেষ দিনেও মা যোগাদ্যা ক্ষীরদিঘি থেকে উঠে ভক্তদের দেখা দেন ক্ষীরগ্রামের এই সতীপীঠে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে জাগ্রত দেবী যোগাদ্যা। রামায়ণে উল্লিখিত মহীরাবণের আরাধ্যা দেবী ভদ্রকালী হিসেবেই এখানে দেবীকে পুজো করা হয়। দেবী এখানে রত্নবেদীতে কালীমন্ত্রে পূজিতা হন। থাকে আমিষ ভোগ। কথিত আছে মহীরাবণকে কৌশলে বধ করে হনুমান যখন ফিরে আসছিলেন, সেই সময় মহীরাবণের আরাধ্যা দেবী ভদ্রকালী রামচন্দ্রের সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

সেই সময় তিনি, হনুমানের কাঁধে চেপে এসেছিলেন মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে। এই প্রসঙ্গে পণ্ডিত রঘুনন্দন গোস্বামী পরম ভাগবতে লিখেছেন, ‘পাতাল হইতে হনু গমন করিল। ক্ষীরগ্রামে আসি তথা দেবীরে স্থাপিল।’ সেই থেকে নাকি এই সতীপীঠে দেবী ভদ্রকালীই দেবী যোগাদ্যা নামে পূজিতা হয়ে আসছেন। দেবীকে নিয়ে রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনি। যা আজও বর্তমান।

তবে, অনেকের আবার দাবি, এই পুজো চলছে ১,৫০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে। আর, নতুন মন্দির তৈরি হয়েছে ২০১১ সালে। কথিত আছে এই সতীপীঠে দেবীর ডান পায়ের বুড়ো আঙুল পড়েছিল। রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র তাঁর অন্নদামঙ্গল কাব্যে লিখেছেন, ‘ক্ষীরগ্রামে ডানি পা’র অঙ্গুষ্ঠ বৈভব। যুগাদ্যা দেবতা ক্ষীরখণ্ডক ভৈরব।।’ ভারতচন্দ্রের একথা বলার কারণ, দেবী যোগাদ্যার ভৈরব হলেন ক্ষীরখণ্ডক। সেই থেকে এই জনপদের নাম ক্ষীরগ্রাম। যা অত্যন্ত পুরোনো জনপদ।

দেবীর পাথরের মূর্তি সারাবছর পাশের পুকুর যা ক্ষীরদিঘি নামে পরিচিত, তার জলে থাকে। শুধুমাত্র আজ অর্থাৎ বৈশাখ মাসের শেষ দিনে দেবীকে জল থেকে তুলে মূল মন্দিরে রাখা হয়। এই দিনেই দেবীকে দর্শন বা স্পর্শ করা যায়। সঙ্গে বসে বিরাট মেলা। এই মেলা চলে ৪ জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত। দীপাবলির রাতে দেবী যোগাদ্যার মহাভোগই দেওয়া হয় দেবী কালীকে।

এই মন্দিরে আসতে হলে বর্ধমান স্টেশনে এসে কাটোয়াগামী ট্রেনে চেপে নামতে হয় কৈচর হল্ট স্টেশনে। বর্ধমান থেকে কৈচর স্টেশনের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। মধ্যে পড়ে ১১টি স্টেশন। অঞ্চলটি কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত। এখান থেকে টোটোয় চেপে যাওয়া যায় ক্ষীরগ্রাম। কৈচর হল্ট স্টেশন থেকে পাথুরে ঢালুপথ বেয়ে নেমে পাঁচ মিনিট হেঁটে গেলেই একটি মোড় পাওয়া যায়। সেই মোড় থেকে মেলে ক্ষীরগ্রামে যাওয়ার টোটো। দূরত্ব চার কিলোমিটার।

কথিত আছে হনুমান দেবী যুগাদ্যা বা যোগাদ্যাকে ক্ষীরগ্রামে স্থাপন করার পর হরি দত্ত নামে এক রাজাকে দেবী স্বপ্নে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মহা ধূমধাম করে তাঁর পূজোর প্রচলন করতে। এখানে দেবীর মহিষ বলি প্রথা চালুর পর দেবী হয়ে ওঠেন মহিষমর্দ্দিনী। পরবর্তীতে এখানে প্রাচীন যোগাদ্যার মূর্তিটি হারিয়ে যায়। তখন মহারাজ কীর্তিচন্দ্র দাঁইহাটের ভাস্কর নবীন চন্দ্রকে দিয়ে পুরাতন মূর্তির আদলে নতুন মূর্তি তৈরি করান। সেই মত তৈরি হয় দশভুজা মহিষমর্দ্দিনীর মূর্তি। পরে ক্ষীরদিঘি সংস্কার করতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া পুরোনো যোগাদ্যা মূর্তিটি পাওয়া যায়। নতুন মূর্তির জন্য তৈরি হয় আলাদা মন্দির। এই শক্তিপীঠে দুপুরের ভোগ এবং রাতে থাকার জন্য যোগাযোগ করতে হয় ৯৭৩৫৮৩২৯২৩ এবং ৬২৯৫৩৭১২০৪ নম্বরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *