শপিংমল, রেস্তোরাঁ সবই খোলা আছে তা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

প্রতিবেদন অর্ক ভাদুড়ী : অবিলম্বে স্কুল-কলেজ খোলার দাবিতে এই ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নেমেছিল। বক্তব্য ছিল স্পষ্ট। শপিং মল, রেস্তোরাঁ যদি খোলা থাকে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন মাসের পর মাস বন্ধ থাকবে? কেন গরীব, নিম্নবিত্ত ছেলেমেয়েদের ফি্ মুকুব হবে না? এই ছিল অপরাধ। এদের পুলিশ দিয়ে পেটানো হয়েছে, গ্রেফতার করে জামিন অযোগ্য ধারায় কেস দেওয়া হয়েছে। আজ প্রায় চারদিন ধরে বাঁকুড়া জেলার ১১ জন ছেলেমেয়ে জেলে রয়েছে। লক-আপে ওষুধ মেলেনি, ছাত্রীদের প্রয়োজনীয় পোশাক মেলেনি৷ অথচ, এই নিয়ে কোথাও তেমন কোনও আলোচনা নেই।

এই ছেলেমেয়েগুলি বামপন্থী ছাত্রছাত্রী সংগঠন করে। ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস’ অর্গানাইজেশনের সদস্য। গত ২৬ জুলাই তারা বাঁকুড়ায় স্কুল-কলেজ খোলার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল। পুলিশের বড় কর্তারা বিশাল বাহিনী নিয়ে এসে তাদের বেধড়ক পিটিয়েছেন। তারপর ১১ জনকে গ্রেফতার করে প্রথম রাতটা লক-আপে ফেলে রাখা হয়। পরদিন জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়। আপাতত আরও বেশ কয়েকদিন জেলেই থাকতে হবে এদের।

সরকারের থেকে মানবিকতা প্রত্যাশা করি না। কিন্তু সমাজটা যে একদম আড়াআড়ি দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে, সেটা তো চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে। অনলাইন ক্লাস আর ওয়র্ক ফ্রম হোমের বাইরে যে কোটি কোটি মানুষ রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের কথা তো আলোচনায় আসছেই না প্রায়। আরও ১৫ দিনের জন্য বিধিনিষেধ বাড়ল। লোকাল ট্রেন বন্ধ। গরীব মানুষ, মফস্বল-গ্রামের মানুষ শহরে আসতে পারছেন না। তাঁদের পেটে সরাসরি লাথি পড়ছে। অথচ কার্যত কোথাও কোনও প্রতিবাদ নেই। গোটা ব্যবস্থাটা এই অদ্ভুত, কুৎসিত অসাম্যকে উলঙ্গ করে চোখের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অথচ, আমাদের প্রতিদিনের যাপনে খুব কিছু আঁচ লাগছে না।

স্কুল-কলেজ খোলার দাবিতে পথে নামলে ছেলেমেয়েদের পেটানো হবে? জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হবে? দিনের পর দিন জেলে ফেলে রাখা হবে? একটা সভ্য দেশে এগুলো চলতে পারে? এই ছেলেমেয়েরা কি ভুল বলেছে? আমি তো জেলায় জেলায় ঘুরি, নানা রকমের মানুষজনের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা আরও ভাল করে জানেন। অনলাইন পড়াশোনার নামে যেটা চলছে, সেটা আদৌ প্রান্তিক ছেলেমেয়েদের স্পর্শ করতে পারছে? ক্লাস নাইন থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত দু’লক্ষ ছেলেমেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হল। এর দায় কার? এই প্রশ্নগুলো তুললেই পুলিশ লেলিয়ে দেবেন? ফলস কেসে জেলে পচাবেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *