মেঘালয়ের এই স্থানগুলিতে যেতে পারেন বর্ষায় প্রকৃতির মাঝে সপরিবারে ছুটি উপভোগ করতে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : শিলং মেঘালয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থল হলেও এই রাজ্যে কিন্তু অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। পূর্ব ভারতের স্কটল্যান্ড শিলং-এর এলিফ্যান্ট ফলস্, শিলং পিক, লেডি হায়দারি পার্ক, ডন বস্কো মিউজিয়াম দেখা হয়ে গেলে রাজ্যের অন্যান্য স্থানগুলি দেখে নিন। শিলং থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে কিলাং রক। লাল পাথরের এই শিলাটি যেন এক বিশালাকার দৈত্য। মেঘালয়ের পশ্চিম খাসি পাহাড়ে অবস্থিত কিলাং রক সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ মিটার উপরে অবস্থিত। প্রায় ৩৩০ মিটার প্রস্থের এই বিশালাকার শিলাখণ্ড খাসি উপকথার একটি অংশ।
উমিয়াম হ্রদ : উমিয়াম হ্রদের আরেক নাম বরাপানি হ্রদ। এটি মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এক জলাশয়। ১৯৬০-র দশকে উমিয়াম নদীতে বাঁধ দিয়ে এই হ্রদের সৃষ্টি হয়। মেঘালয়ের এই উলিয়াম হ্রদ এক অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। পর্যটকরা কায়াকিং, বাটার সাইক্লিং, স্কুটিং, নৌকা চালানো ইত্যাদির জন্য এখানে ভিড় করেন। এই হ্রদের চারধারও পাহাড় দিয়ে ঘেরা। বর্ষাকালে এই হ্রদের সৌন্দর্য হয়ে ওঠে নৈস্বর্গিক। ভোরবেলা তো হ্রদ আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।
তুরা : নির্মল পরিবেশের কারণে মেঘালয়ের তুরা জুলাই মাস হয়ে ওঠে অন্যতম সেরা পর্যটনস্থল। গারো পাহাড়ে অবস্থিত তুরা বন্যপ্রাণ এবং প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এটি একটি আদর্শস্থল। তুরা থেকে ১২ কিমি দূরে অবস্থান করছে নকরেক জাতীয় উদ্যান। এখানে, আপনি সোনালি বিড়াল, লেপার্ড, বুনো মহিষ এবং তিতির পাখি সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী দেখতে পাবেন। ঘুরে আসতে পারবেন সিজু গুহা থেকে।
চেরাপুঞ্জি : চেরাপুঞ্জি নামটা শুনলেই মনে হয় বুঝি বৃষ্টি পড়ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় সিক্ত স্থান এটি। বছরের প্রায় সারাটা সময় ধরেই এখানে বৃষ্টি হয়। ফলে সারাবছরই এখানে সবুজে সবুজ। সারা বছরই তো এখান বৃষ্টি হয়। তাহলে বর্ষায় স্পেশাল কী আছে? মনে প্রশ্নটা আসতেই পারে। তবে এই প্রশ্নের সঠিক কোনও উত্তর নেই। নিজের চোখে না দেখলে বুঝতে পারবেন না। এই অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যাঁরা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন তাঁদের অন্তত একবার বর্ষাকালে চেরাপুঞ্জি যাওয়া উচিত। বর্ষায় এখানে প্রচুর পাখির ডাক শোনা যায়। মনে হয় প্রকৃতিদেবী যেন সুমধুর সুরে গান গাইছেন। নদীর জল এই সময় বেড়ে যায়। তার বেগ হার মানাবে যে কোনও গতিকেই। চেরাপুঞ্জির বিখ্যাত গাছের শিকড়ের সেতুর উপর দিয়ে একবার না হাঁটলে কিন্তু পর্যটন জীবন বৃথা।
রবার গাছের শিকড় প্রাকৃতিকভাবে জড়িয়ে এই সেতুটি তৈরি হয়েছে। এবং সেতুটি অত্যন্ত দৃঢ়। স্থানীয়রা এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করেন। চেরাপুঞ্জিতেও নৌকাবিহার করার সুযোগ রয়েছে। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ এবং নদীর বুকে নৌকা নিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা দুর্দান্ত। এছাড়াও চেরাপুঞ্জিতে দেখতে পারেন নোহকলিকাই ঝরনা, থাং খারাং পার্ক, মসমাই গুহা, খাসী মোনোলিথস্ আও কত কী।
মসমাই গুহা : মেঘালয়ের প্রাচীন গুহাগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা এই মসমাই গুহাটি। গুহার ভিতর ছেয়ে থাকা গাছপালা সকলের নজর কাড়ে। গুহার দৈর্ঘ্য মাত্র ১৫০ মিটার। চেরাপুঞ্জির থেকে মাত্র মসমাই গুহার দূরত্ব মত্র ৬ কিলোমিটার। গুহাটি অবস্থিত মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ে।
মাওলিনং : মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলায় অবস্থিত ছোট্টো গ্রাম মাওলিননং। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে ঘোষিত হয়েছে এই গ্রাম। শিলং থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত মাওলিং গ্রামে আজও মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বিরাজমান। গ্রামের লোকসংখ্যা প্রায় ৫০০। গ্রামে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর বাঁশের তৈরি ডাস্টবিনে আবর্জনা জমা করা হয় এবং তা থেকে জৈবসার প্রস্তুত করা হয়। গ্রামে প্রবেশ করলে মনে হবে যেন চিত্রশিল্পীর আঁকা কোনও ক্যানভাসে ঢুকে পড়েছেন। ডাউকি থেকে মাওলিননং-এর দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। পায়ে হেঁটে গোটা গ্রাম ঘুরুন। ঘুরে আসুন সংলগ্ন জলপ্রপাত এবং লিভিং রুট ব্রিজ থেকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে গ্রামের আরেক নাম ঈশ্বরের আপন বাগান। মাওলিনং একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গ্রাম। এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রামের খেতাব পেয়েছে এই গ্রাম। UNESCO-র বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় গ্রামের নামটি জ্বলজ্বল করছে।