মৃত্যুকে চরম উপহাস, ব্রিটিশরা ভয়ে কুঁকড়ে ছিল ভগৎ সিংয়ের ফাঁসির দিন !

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : নির্ধারিত সময়ের ১১ ঘণ্টা আগে দেওয়া হয়েছিল ফাঁসি। মৃত্যুকে তিনি চরম উপহাস করেছিলেন। ২২শে মার্চ ছিল সেই নিষ্ঠুর রাত, যে রাতে ব্রিটিশ সরকার ভারতের তিন বীর সন্তানের ফাঁসি দেওয়ার সব রকম প্রস্তুতি করে রাখে। সেই দিনটি ছিল ব্রিটিশদের ভয় পাওয়ার দিন, তাই তো তিনজনকে ১১ ঘণ্টা আগে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। সেই তিনজন ছিলেন ভগত সিং, সুখদেব এবং রাজগুরু। তিনজনই ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় একসঙ্গে আনন্দে গান গেয়েছিলেন। অপরদিকে তাঁদের ফাঁসির কথা শুনে গোটা দেশ জুড়ে জ্বলে ওঠে আগুন। যার আঁচ ব্রিটিশ সরকার আগে থেকেই করেছিল।

ভগৎ সিং এর মনে একটাই জেদ, তা হল দেশের স্বাধীনতা। ভারতবর্ষে জুড়ে একটি খবর হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছিল। অত্যাচারী অফিসার স্যান্ডার্সকে যিনি মেরেছেন তিনি একজন শিখ এবং অবিবাহিত যুবক। তাঁকে পাগলের মত খুঁজছিল পুলিশ। ছদ্মবেশে সেই বিপ্লবী লখনৌ গামী ট্রেনে ওঠেন। এমনকি পুলিশের চোখে ধুলো দিতে নিজের চুল দাড়ি কেটে ফেলেছিলেন। তিনি ছিলেন পাঞ্জাব শের ভগৎ সিং। ১৯০৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বাঙ্গা গ্রামের জাঠ পরিবারে তাঁর জন্ম।

কলকাতায় গা ঢাকা

কলকাতার এক বাড়িতেই ভগত সিং ছদ্মবেশে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। এই বাড়িতে তিনি বেশ কয়েকদিন কাটিয়েছিলেন। এই বাড়িটি রয়েছে বিধান সরণির উপরে। তারই একটি দোতলা ঘরে ভগৎ সিং বেশ কয়েক মাস লুকিয়ে ছিলেন। তিনি কলকাতায় শিখেছিলেন বোমা বানানোর কৌশল। এই ঘরে আত্মগোপন করে আছে প্রায় ৯৪ বছরের ইতিহাস। এটি আসলে উত্তর কলকাতার সাবেক কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের আর্য সমাজ মন্দির।

১৯২৮ সালের শেষ থেকে আমূল পরিবর্তন আসে ভগৎ সিং এর জীবনে। কারণ এই সময়ে কালা কানুন সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দিচ্ছিলেন লালা রাজপত রায়। লাহোরের সেই মিছিলে বিশ্রী ভাবে পুলিশ লাঠি চার্জ চালায়। সেই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছিলেন তরুণ ভগৎ সিং। ১৭ই নভেম্বর মৃত্যু হয় লাল রাজপত রায়ের। সেই মৃত্যুর সংবাদ রেগে আগুন ভগৎ সিং। ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জন স্যান্ডার্সকে হত্যা করে ছদ্মবেশে কলকাতায় চলে এসেছিলেন।

ইংরেজদের হাতে ধরা পরার পর ১৯২৯ সালে সুখদেবকে একটি চিঠিতে ভগৎ সিং লিখেছিলেন, ভালোবাসা মানুষকে দুর্বল করে, কিন্তু দেশের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা মনের উত্তোরণ ঘটায়। ভালোবাসা তখন মানুষের সাধারণ চাওয়া পাওয়ার গণ্ডি পেরিয়ে হয়ে ওঠে সর্বজনীন। আসলে ভালোবাসা ছিল তাঁর কাছে এক জ্বলন্ত আবেগের মতো। সেই আগুনে যে কেউ জ্বলে সোনা হয়ে উঠতে পারতেন। নিজের জীবনের জন্যও তিনি বিন্দুমাত্র ভয় পাননি। জেলে থেকেও তিনি রাজবন্দীদের হয়ে লড়াই করেছেন। লাগাতার অনশন করেছেন। যার কারণে স্বাধীনতা সংগ্রামী আন্দোলন গুলি ভয়ঙ্কর রূপ লাভ করেছিল। জেনে আশ্চর্য হবেন, যখন তাঁর মৃত্যুর পরোয়ানা শোনানো হচ্ছিল তখন তিনি মগ্ন ছিলেন লেনিনের বইতে। তিনি এক মনে সেই বইটি পড়ছিলেন। একদিকে শোনাচ্ছে তাঁর মৃত্যুর পরোয়ানা আরেক দিকেই তিনি বই পড়তে পড়তে বললেন, একটু দাঁড়ান, এক বিপ্লবী সঙ্গে আরেক বিপ্লবী কথা হচ্ছে। এইভাবে মৃত্যুকে পরিহাস করতে কজনই বা পারে? প্রথমে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হলেও গ্রেফতারের সময় পিস্তল পাওয়ায় ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *